যানজটকে কাজে লাগাতে শিখুন

রাজিউর রাহমান | প্রকাশিত: ২২ মার্চ ২০২৩, ০২:১৪

যানজট

ঢাকা শহরের যানজট তো বোঝেনই। একবার লাগলে আর ছাড়ার নাম নেই। এক বসায় এক থেকে দেড় ঘণ্টা পার হয়ে যায়। ২০১৭ এর ৬ অক্টোবর দৈনিক প্রথম আলোতে একটি খবর ছাপা হয়। সেখানে জুলাই ২০১৬-তে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার যানজট নিয়ে করা বিশ্বব্যাংকের একটি গবেষণার তথ্য প্রকাশ করা হয়। বলা হয়, যানজটের জন্য ঢাকায় প্রতিদিন ৩২ লাখ কর্মঘন্টা নষ্ট হচ্ছে। আর এজন্য প্রতি বছর আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৩০ হাজার কোটি টাকা।

সে সময়ে ঢাকার যানবাহনের গতি হিসাব করা হয় ঘন্টায় মাত্র ৭ কিলোমিটার। যদি কোনো পদক্ষেপ না নেয়া হয়, আর যানজট বাড়তেই থাকে, তবে এই গতি নেমে দাঁড়াবে ঘন্টায় ৪ কিলোমিটারে। অপরদিকে মানুষের স্বাভাবিক হাঁটার গতি ঘন্টায় ৫ কিলোমিটার। অর্থাৎ গাড়িতে ওঠার চেয়ে হেঁটে গেলেই গন্তব্যে দ্রুত পৌঁছে যেতে পারবেন!

কিন্তু যেহেতু আমরা ঢাকা শহরে বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছি কাজের সুবাদে, তাই এই নিয়মিত যানজট আমাদের প্রতিদিন মোকাবেলা করতে হবেই। যানজটে বসে আমরা প্রতিদিন কী পরিমাণ সময় নষ্ট করছি তার হিসাব তো উপরেই দিলাম। এখন আসুন কিছু উপায় শিখে নেই, যার মাধ্যমে আমরা এই যানজটে সময় নষ্ট না করে উল্টো এটাকে কাজে লাগাতে পারবো। এতে মঙ্গল আমাদেরই হবে। আর আমাদের মঙ্গল মানেই দেশের মঙ্গল!

১. মুঠোফোনে কথা বলা

আমাদের এমন অনেক বন্ধু বা আত্মীয় আছেন, যাদের সাথে অনেক দিন কথা বলা হয় না। প্রায়ই তাদের কথা মনে পড়ে। কিন্তু কথা বলা হয়ে ওঠে না আর। আসুন না, এই যানজটের সময়টাকেই আমরা কাজে লাগাই! হাতে লম্বা সময় পড়ে আছে, যানজটের কারণে গন্তব্যে পৌঁছতে অনেক সময় লাগবে, মুঠোফোনেও পর্যাপ্ত পরিমাণ টাকা আছে। আর কী লাগে! পরিচিত কাউকে ফোন করুন। তারও যদি আপনার মতো সময় থাকে, তবে তার সাথে কথা বলেই সময়টা পার করে দিতে পারেন। এতে দুজনেরই মন ভালো হয়ে যাবে, আবার অনেকদিন পর খোঁজখবরও নেয়া হবে।

কথা বলার মতো পরিস্থিতি না থাকলে ক্ষুদে বার্তা পাঠাতে পারেন। সেখানেও চাইলে যোগাযোগ করে এই সময়টা কাজে লাগাতে পারেন।

২. আশেপাশের কার্যক্রম লক্ষ্য করে সময় কাটানো

আপনি বাসে একটি আসনে স্থির বসে আছেন অথবা দাঁড়িয়ে আছেন। এই সময় আপনার গাড়ি যানজটের মধ্যে আটকে গেলো। আপনি হয়তো এক দৃষ্টিতে কোনো দিকে তাকিয়ে আছেন। মানে বেকার মস্তিষ্ক নিয়ে বসে আছেন। বেকার বসে থাকার চেয়ে এক কাজ করুন। আশেপাশের কে কী করছে তা লক্ষ্য করতে থাকুন। বাসের চালক বা সহকারী অথবা আপনার পাশেই যিনি বসে আছেন, তার কার্যক্রম লক্ষ্য করুন। গাড়ির বাহিরে কী হচ্ছে খেয়াল করুন। এভাবে দেখবেন আপনার সময় হুট করে কেটে গিয়েছে! এখানে বলে রাখা উচিত, ভুলেও সরাসরি কারো দিকে তাকাতে যাবেন না। এতে তারাই উল্টো আপনাকে সন্দেহ করতে থাকবে। বরং আড়চোখে তাকান। অন্যের কার্যক্রম লক্ষ্য করতে করতে অনেকসময় মজাদার কিছুও চোখে পড়ে যেতে পারে!

৩. বই অথবা পত্রিকা পড়া

আপনি চাইলে আপনার সাথে একটি বই অথবা পত্রিকা রাখতে পারেন। অলস সময়ে বসে না থেকে বই পড়ুন। বই পড়লে আপনারই সময়টা ভালো যাবে। আপনি ইচ্ছা করলে যানজটে প্রতিদিন যে পরিমাণ সময় বসে থাকেন, সেই সময়ে যদি নিয়মিত বই পড়েন, তাহলে প্রতি সপ্তাহে আপনি একটি করে বই পড়ে ফেলতে পারবেন!

রাস্তায় প্রায়ই দেখা যায়, অনেকে পত্রিকা ফেরি করে বিক্রি করে। তাদের থেকে একটি পত্রিকা কিনে তা পড়তে পারেন। প্রতিদিনের খবরটিও তাহলে জেনে যেতে পারবেন।

৪. অডিও বই শোনে সময় কাটানো

ছোটবেলায় কেউ গল্প পড়ে শোনালে খুব ভালো লাগতো। কিন্তু বড় হয়ে যাবার পর কে আর গল্প পড়ে শোনায়! কেউ না থাকলেও, আপনার মুঠোফোন কিন্তু ঠিকই আপনার জন্য তৈরি আছে গল্প পড়ে শোনানোর জন্য। ইন্টারনেট ঘাটলেই অনেক ওয়েবসাইট অথবা অ্যাপ্লিকেশন পাবেন, যেগুলো বইয়ের কথাগুলো হুবহু পড়ে আপনাকে শোনাবে। যানজটে বসে যদি একটি বই শুনে শেষ করে ফেলতে পারেন, তবে খারাপ কী! অলস সময়টাকে চাইলে আপনি এভাবেও ব্যবহার করতে পারেন।

৫. গান শোনা

গানের ছন্দ মানুষের মনকে পরিষ্কার করে তোলে। দুশ্চিন্তা অথবা মানসিক বিষণ্ণতা থাকলে গান শুনুন। গানের ছন্দ দুশ্চিন্তা অথবা বিষন্নতা কমিয়ে দিয়ে সাহায্য করে। সেই সাথে চিন্তাশক্তিও উন্মুক্ত করে দেয়। যানজটের মধ্যে চিন্তিত বসে থাকার চেয়ে গান শুনে মনকে শান্ত করতে পারেন। তাছাড়া গান আপনার প্রতিদিনের কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে দিতেও সাহায্য করে। তাই গান শুনে অলস সময় কাটাতে পারেন।

তবে এখানে বলে রাখা ভালো, রাস্তা পার হবার সময় অথবা রেলের রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় গান শুনবেন না। আপনার মনোযোগ যদি অন্যদিকে থাকে, তবে আপনার সাথে যেকোনো দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে, যা মোটেও কাম্য নয়।

৬. বেতারে সময় কাটানো

এখন আর কয়জন বেতার শুনে বলুন। কিন্তু বেতার আজও টিকে আছে। এর প্রমাণ পাওয়া যায় বাংলাদেশের ক্রিকেট খেলার সময়। রাস্তার মোড়ে মোড়েই দেখা যায় মানুষজন বেতারে খেলার ধারাবিবরণী শুনছে। আপনি চাইলেই আপনার মুঠোফোনে বেতার চালু করে সেই মুহূর্তের খবর শুনতে পারেন। অথবা অলস সময় কাটানোর জন্য বেতারে কোনো একটি অনুষ্ঠান শুনলেন বা মনমতো একটি গান পেয়ে গেলেন যা আপনার মন মুহূর্তেই খুশি করে দিতে পারে। এতে আপনার সময় কাটলো আবার বেতারের সুব্যবহার করাও হলো।

৭. নিজের ভবিষ্যৎ কার্যক্রম নিয়ে চিন্তা করা

যানজটে বসে অলস সময় কাটাচ্ছেন? এক কাজ করুন। আগামী দিনের অথবা আগামী সপ্তাহে আপনার কী কী কাজ করতে হবে অথবা কোন কোন লক্ষ্য পূরণ করতে হবে তা ঠিক করে ফেলুন। পারলে একটি কাগজে তা লিখে রাখুন, যাতে পরে তা মনে থাকে। বলা হয়, গোসলখানা হলো চিন্তা করার জন্য আদর্শ জায়গা। আর আপনি আপনার চিন্তা করার আদর্শ জায়গা বানিয়ে ফেলুন যানজটকে। এই সময় নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করতে থাকুন। কোনো সমস্যা থেকে থাকলে, তা কীভাবে সমাধান করা যায় তা ভেবে দেখুন। এভাবে আপনার সময় সুন্দরভাবেই কেটে যাবে।

এই ধারণাগুলো লেখকের মতে যানজটে সময় কাটানোর জন্য আদর্শ কিছু উপায়। পাঠক চাইলেই তার সুবিধা বা মনমতো উপায় বের করে নিতে পারেন। আসল কথা হলো, যানজটে বসে আমরা দিনের বেশ বড় একটি অংশ পার করে দেই। এই সময়টা যাতে কোনোভাবেই হেলায় নষ্ট না হয়, সেদিকে আমাদের খেয়াল রাখা উচিত। (রোরবাংলা থেকে সংগৃহীত)




পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top