মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনের রাষ্ট্রপতি হতে বাধা নেই

রাষ্ট্রপতি পদে নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তোলা অবান্তর: অ্যাটর্নি জেনারেল

রাজিউর রাহমান | প্রকাশিত: ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৩, ০৯:২০

অ্যাটর্নি জেনারেল

সাবেক দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কমিশনার মো. সাহাবুদ্দিনের নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন করা উচিত নয় এবং এ বিষয়ে প্রশ্ন তোলা অবান্তর। এমন  মন্তব্য করেছেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, বিষয়টি (রাষ্ট্রপতি নিয়োগ) অত্যন্ত স্পর্শকাতর, রাষ্ট্রের প্রধান নির্বাহী মহামান্য রাষ্ট্রপতি পদে নিয়োগ নিয়ে কথা হচ্ছে। নতুন নিয়োগ পাওয়া রাষ্ট্রপতি নিয়ে দুদকের বিষয়টি তোলা হচ্ছে, দুদকের আইনে তা স্পষ্ট করে লেখা আছে। সে অনুযায়ী দুদকের দায়িত্ব শেষে তিনি প্রজাতন্ত্রের কোনো লাভজনক পদে পরবর্তীতে অধিষ্ঠিত হইবেন না। প্রজাতন্ত্রের লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার জন্য তিনি যোগ্য হইবেন না।

রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য এ ধরনের বিধিনিষেধ নাই। সংবিধানের ৪৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের অযোগ্য হওয়ার জন্য তিনটি বিষয়ের উল্লেখ করা আছে।

কোনো ব্যক্তি রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার যোগ্য হবেন না, যদি তিনি-(ক) ৩৫ বছরের কম বয়সের হন; অথবা (খ) সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবার যোগ্য না হন; অথবা (গ) কখনো এই সংবিধানের অধীন অভিশংসন দ্বারা রাষ্ট্রপতির পদ থেকে অপসারিত হয়ে থাকেন।

রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা আরও বলেন, সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদেও বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতির পদ লাভজনক হবে না। প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োজিত পদগুলোর বিষয়ে সংবিধানের নবম অধ্যায়ে উল্লেখ রয়েছে। সেখানে যে পদগুলো রয়েছে, সেই পদগুলোর বিষয়ে সংবিধানের ১৩৪ অনুচ্ছেদে বলা আছে। সে অনুযায়ী, সেখানে যারা কাজ করবেন তা নির্ধারণ করবেন মহামান্য রাষ্ট্রপতি। তাহলে মহামান্য রাষ্ট্রপতি নিজের কার্যকাল নিজে ঠিক করেন না। তিনি অন্যদের কার্যকাল ঠিক করেন। এজন্য এই অনুচ্ছেদে তাকে রাখা হয় নাই।

রাষ্ট্রপতির পদ লাভজনক কি না-এমন একটি প্রশ্ন এসেছিল ১৯৯৬ সালে। যখন বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমেদ রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন তখন সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী হাইকোর্টে রিট করেছিলেন। ওই রিট আবেদনের শুনানি শেষে তা খারিজ হয়। সেখানে বলা হয়, এটি (রাষ্ট্রপতির পদ) প্রজাতন্ত্রের লাভজনক কোনো পদ নয়।

রাষ্ট্রের এই প্রধান আইন কর্মকর্তা বলেন, সংবিধানের ৪৮, ৬৬ ও ১৪৭ অনুচ্ছেদ মিলিয়ে পড়লে দেখা যাবে এটা কোনোভাবেই লাভজনক পদের মধ্যে পড়ে না। রাষ্ট্রপতি কোনোক্রমেই সরকারের কর্মে নিয়োজিত কোনো ব্যক্তি নন। বুধবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি ।

এরআগে, আজ নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, রাষ্ট্রপতির পদ লাভজনক নয়। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ব্যক্তির প্রশ্নে যদি এ ধরনের অবান্তর বিতর্ক সৃষ্টি করা হয়, সেটা হবে অনাকাঙ্ক্ষিত।

দুদকের সাবেক কমিশনার মো. সাহাবুদ্দিনকে রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত করায় কোনো আইনের ব্যত্যয় হয়নি বলে মন্তব্য করে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, দুদক আইনের ৯ ধারায় বলা আছে কর্মাবসানের পর দুদকের কমিশনার প্রজাতন্ত্রের লাভজনক পদে নিয়োগ লাভের যোগ্য হবেন না। এর ফলে অনেকে বলতে চেয়েছেন, রাষ্ট্রপতির পদটি একটি লাভজনক পদ। কিন্তু রাষ্ট্রপতিকে কেউ নিয়োগ দান করে না। তিনি নির্বাচিত হন। নির্বাচন কমিশন প্রচলিত প্রথা অনুসারে রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচন করেছে।

১৯৯৬ সালে দেয়া হাইকোর্টের রায়ের কথা উল্লেখ করে সিইসি বলেন, কমিশনার কিংবা বিচারপতি পদ থেকে রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত হতে বাধা নেই। রাষ্ট্রপতি নিয়োগ নিয়ে অবান্তর প্রশ্ন তোলা হলে সেটি অনাকাঙ্ক্ষিত বলেও মনে করেন সিইসি।

একক প্রার্থী হওয়ায় এবং যাচাই-বাছাই শেষে মনোনয়নপত্র বৈধ হওয়ায় গত ১৩ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগ মনোনীত মো. সাহাবুদ্দিনকে ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবীবুল আউয়াল। আর এই নিয়েই বিভিন্ন মহল থেকে মো. সাহাবুদ্দিনের নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে।

 

 

 

 

 

 




পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top