পুলিশের কড়া হুঁশিয়ারি
সারাদেশে বিএনপি-জামায়াতের সকাল-সন্ধ্যা হরতাল
রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ২৯ অক্টোবর ২০২৩, ১৩:৩৪
সরকার পতনের একদফা দাবি আদায়ে আজ রোববার (২৯ অক্টোবর) সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে বিএনপি। গতকাল শনিবার সমাবেশ থেকে এ হরতালের ঘোষণা দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শনিবার নয়াপল্টনে সমাবেশে পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষের পর হরতালের এ সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে বিএনপি।
পরে সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডাকে জামায়াতে ইসলামী। শনিবার সংগঠনটির ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মাছুম এক বিবৃতিতে এ ঘোষণা দেন। তিনি জানান, নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের প্রতিবাদে এ হরতাল ডাকা হয়েছে। তবে হাসপাতাল, অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস, সংবাদপত্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গাড়ি এবং ওষুধের দোকান হরতালের আওতামুক্ত থাকবে বলে জানানো হয়েছে।
এদিকে, বিএনপি-জামায়াতের ডাকা হরতালের প্রতিবাদে আজ সারাদেশে শান্তি সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকেও বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। হরতালে যেকোনো ধরনের নৈরাজ্য রুখে দিতে সকাল থেকে রাজধানীর প্রতিটি ওয়ার্ডে এবং ঢাকার প্রবেশপথগুলোতে পাহারা দেওয়ারও ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
বিএনপির ডাকা হরতালেও বাস চলাচল অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ। মালিক সমিতি বলছে, সমাবেশের নামে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী বিএনপির ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ব্যাপারে সমিতির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, ঢাকার পরিবহন কোম্পানি, রুট মালিক সমিতি এবং শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে তাৎক্ষণিক আলোচনায় গাড়ি চালানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এদিন ঢাকা শহর ও শহরতলী এবং আন্তঃজেলা রুটে বাস-মিনিবাস চলাচল অব্যাহত থাকবে।
অন্যদিকে, হরতালের নামে নৈরাজ্য করলে পুলিশ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, হরতালের নামে নৈরাজ্য সৃষ্টি করলে ডিএমপি ব্যবস্থা নেবে। হরতালের নামে মানুষের জানমালের ক্ষতি করলে পুলিশ আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নেবে। এ সময় অর্ধশতাধিক গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয় বলে জানিয়েছে ডিএমপি কমিশনার।
এছাড়াও হরতালকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাজধানীতে টহল দিতে শুরু করেছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ১১টি প্লাটুনের সদস্যরা। রমনায় ১ প্লাটুন, মতিঝিলে ২ প্লাটুন, পল্টনে ২ প্লাটুন, বিচারপতির ভবনের সামনে ৪ প্লাটুন, সচিবালয়ের সামনে ২ প্লাটুনসহ মোট ১১ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
এর আগে, শনিবার মহাসমাবেশ ঘিরে বিএনপি নেতাকর্মীর সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও হামলার ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়েছে পুলিশ। এতে এক পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া এক যুবদল নেতা সংঘর্ষ চলাকালে অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন। তবে বিএনপির দাবি, সংঘর্ষে আহত হয়ে তিনি মারা গেছেন। সংঘাতের কারণে বিএনপির মহাসমাবেশ পণ্ড হয়ে যায়।
শনিবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে বিএনপি কর্মীরা আওয়ামী লীগের কয়েকটি বাস ও পিকআপভ্যানে ভাঙচুরে করে বলে অভিযোগ ওঠে। এ সময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিএনপি কর্মীদের সেখান থেকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলে উত্তেজনা তৈরি হয়। এভাবে বেশ কিছুক্ষণ চলার পর একপর্যায়ে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া শুরু হয়। এ সময় পুলিশ টিয়ারশেল ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করতে চাইলে বিএনপি নেতা–কর্মীরা ইটপাটকেল ছোঁড়ে।
সংঘর্ষ কাকরাইল মসজিদ থেকে পল্টন পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষের সময় কাকরাইল পুলিশ বক্স ও গাড়িতে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটে। এছাড়া ভাঙচুর করা হয় কাকরাইল আওয়ামী লীগের কার্যালয়। এর আগে একই জায়গায় সকালে ২টি বাস ও কয়েকটি পিকআপে লাঠিসোঁটা নিয়ে ভাঙচুর করে বিএনপির সমাবেশে যোগ দিতে আসা কর্মীরা। এর আগে মৎস্য ভবন এলাকায়ও একটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়।
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।