বয়ান করবেন যারা?
তুরাগ তীরে কাল থেকে শুরু হচ্ছে বিশ্ব ইজতেমা
রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ১ ফেব্রুয়ারী ২০২৪, ১৯:০০
টঙ্গীর তুরাগ তীরে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় সমাবেশ ৫৭তম বিশ্ব ইজতেমা। আগামীকাল শুক্রবার বাদ ফজর আমবয়ানের মাধ্যমে শুরু হবে ইজতেমার মূল কার্যক্রম (প্রথম পর্ব)। এতে অংশ নেবেন তাগলিগের আলমী শূরার সাথীরা।
বৃহস্পতিবার বাদ ফজর থেকে শুরু হয়েছে আঞ্চলিক বয়ান। আজ জোহর নামাজের পর বয়ান করেন মাওলানা রবিউল হক। এছাড়া আছরের পর বয়ান করবেন মাওলানা ফারুক ও মাগরিবের পর মাওলানা ইব্রাহীম।
গতকাল বুধবার থেকেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মুসল্লিরা ইজতেমা ময়দানে দলে দলে আসতে শুরু করেছেন। ইজতেমা ময়দান ও আশপাশের এলাকা পূর্ণ হয়ে গেছে। অনেকেই মূল ময়দানে জায়গা না পেয়ে ইজতেমা মাঠে প্রবেশপথের দুইপাশে অবস্থান নিয়েছেন। ইসলাম ধর্মের বিধিনিষেধ পালন ও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করাই প্রধান লক্ষ্য বলে জানান ইজতেমায় অংশ নেয়া মুসল্লিরা।
তাঁদের পদচারণে মুখর হয়ে উঠছে তুরাগতীর। মুসল্লিদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রস্তুত রয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। ইজতেমার সার্বিক প্রস্তুতির কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ব ইজতেমা আয়োজক কমিটির শীর্ষ মুরব্বি প্রকৌশলী মাহফুজ হান্নান।
ইজতেমার প্রথম পর্ব ২ থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি, দ্বিতীয় পর্ব হবে ৯ থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি। প্রথম পর্বের ইজতেমায় মাওলানা জোবায়ের পক্ষের অনুসারীরা এবং দ্বিতীয় পর্বে মাওলানা সাদ কান্ধলভীর অনুসারীরা অংশ নেবেন।
প্রথম পর্বের ইজতেমার মিডিয়া সমন্বয়কারী জহির ইবনে মুসলিম জানান, শুক্রবার ফজর নামাজের পর বয়ান করবেন- মাওলানা আহম্মেদ বাটলার, সকাল ১০টায় তালিম করবেন মাওলানা জিয়াউল হক, জুমার নামাজ পড়াবেন মাওলানা যোবায়ের।
জুমার নামাজের পর বয়ান করবেন জর্ডানের খতিব ওমর, আছরের পর মাওলানা যোবায়ের ও মাগরিবের পর মাওলানা আহম্মেদ লাট বয়ান করবেন। আখেরি মোনাজাতের আগ পর্যন্ত এভাবেই প্রতিদিন পর্যায়ক্রমে শীর্ষস্থানীয় মুরুব্বিরা বয়ান করবেন।
ইজতেমার বিদেশি খিত্তায় দায়িত্বরত একজন সরকারি কর্মকর্তা জানান, তাবলিগ জামাত আয়োজিত বিশ্বের মুসলিম উম্মাহর দ্বিতীয় বৃহৎ এ আয়োজনে সকাল ১১টা পর্যন্ত ৩৬ দেশের ৭৫৯ জন বিদেশি অতিথি উপস্থিত হয়েছেন।
৩৬টি দেশের মধ্যে রয়েছে- ভারত পাকিস্তান, কুয়েত, সৌদি আরব, আফগানিস্তান, জাপান, ওমান, কানাডা, মোজাম্বিক, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, কিরগিস্তান, সিঙ্গাপুর, ইতালি, জর্ডান ও যুক্তরাজ্য।
ইজতেমা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে সরকারের পাশাপাশি বিশ্ব ইজতেমার আয়েজকদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় রয়েছে ১০টি জামাত। এসব জামাত ইজতেমা ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করছে।গোডাউন জামাতের জিম্মাদার মাওলানা শিহাব উদ্দিন বলেন, বিশ্ব ইজতেমা আয়োজকদের পক্ষ থেকে মোট ১০টি বিভাগ করা হয়েছে। ১০টি বিভাগ নিয়ন্ত্রণ করবে নজমওয়ালী জামাত।
১০টি জামাত হল, পাহারা জামাত, এস্কেবাল (অভ্যর্থনা) জামাত, জুর্নেওয়ালী জামাত, পানির জামাত, বিদ্যুৎ জামাত, মাইক জামাত, সাফাই জামাত, রিজার্ভ জামাত, গোডাউন জামাত ও নজমওয়ালী জামাত। নজমওয়ালী জামাতে বর্তমানে ৩৫ জন সদস্য রয়েছে। তবে সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম ৬ সদস্য।
আয়োজকদের প্রধান সমন্বয়কারী প্রকৌশলী মাহফুজ হান্নান জানান, প্রতিটি জামাতে শতাধিক লোক থাকবে। আমাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় তারা কাজ করবে।
গতকাল বুধবার দুপুরে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমরা বিশ্ব ইজতেমায় প্রতিবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা দিয়ে থাকি। এবারও বিশ্ব ইজতেমার ময়দান নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা থাকবে।
যে কোনো ধরনের পরিস্থিতি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশ পুলিশের সক্ষমতা ও আস্থা রয়েছে। আমরা তাদের ব্রিফিং দিয়েছি, প্রশিক্ষণ দিয়েছি, কে কখন কোথায় কীভাবে তার দায়িত্ব পালন করবে সেভাবে তাদের প্রস্তুত করেছি।
চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন আরও বলেন, বর্তমান নিরাপত্তায় বোম ডিসপোজাল ইউনিট, সোয়াট টিম, ডগ স্কোয়াড, বিস্ফোরক প্রশিক্ষক টিম, ট্রাইম সিন, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ও আমাদের প্রশিক্ষক টিম, নৌ বহর ও হেলিকপ্টার দিয়েও টহল ব্যবস্থা প্রস্তুত থাকবে।
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) মহাপরিচালক এম খুরশীদ হোসেন বলেছেন, ‘বিশ্ব ইজতেমায় কোনো ধরনের জঙ্গি হামলা বা জঙ্গি হামলার কোনো আশঙ্কা নেই। আমরা এ ব্যাপারে সজাগ রয়েছি। আমরা আমাদের গোয়েন্দা নজরদারি ও সাইবার প্যাট্রলিংয়ের মাধ্যমে এ তথ্যগুলো সংগ্রহ করেছি।
ইজতেমায় যোগ দিতে ভারতের ত্রিপুরাসহ উত্তর-পূর্ব ভারতের সাতটি রাজ্য থেকে মুসল্লিরা আসছেন বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে। গতকাল পর্যন্ত এক হাজারের মতো ভারতীয় মুসল্লি এসেছেন বলে ইমিগ্রেশন সূত্রে জানা গেছে।
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিরোধ থাকলেও বিশ্ব ইজতেমায় তাঁরাসহ সাত দেশের মুসল্লিরা একই খিমায় (তাঁবু) অবস্থান করছেন। অন্য দেশগুলো হলো আফগানিস্তান, ভুটান, নেপাল, মালদ্বীপ ও ইরান।
২ ফেব্রুয়ারি বাদ ফজর আমবয়ানের মধ্যে দিয়ে শুরু হবে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। পরে ৪ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে প্রথম পর্বের জোবায়েরপন্থি মুসল্লিদের অংশগ্রহণে শেষ হবে বিশ্ব ইজতেমা।
চার দিন বিরতি দিয়ে ৯ ফেব্রুয়ারি দিল্লির নিজামউদ্দিন মারকাযের অনুসারী (সা’দ পন্থি) মুসল্লিরা বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে অংশ নেবেন। ১১ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে এ পর্বের বিশ্ব ইজতেমা সমাপ্তি ঘটবে।
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।