প্রধান উপদেষ্টার সাথে বৈঠকে দিকনির্দেশনা পেলেন ২৫ সচিব

রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ১৩ আগষ্ট ২০২৪, ১৩:৫১

ছবি: সংগৃহীত

সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকার সঙ্গে জড়িত ইস্যুগুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে মন্ত্রণালয় বিভাগগুলোয় দ্রুত কাজ শুরু করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অর্ন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেন তার আওতাধীন ২৫ মন্ত্রণালয়ের সচিবরা। এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান যমুনায় প্রবেশ করেন। তিনি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করে বেলা ১১টা ১৫ মিনিটে চলে যান।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা সকল সচিবের সঙ্গে পরিচিত হন। সচিবদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা দেশের চালিকা শক্তি। আপনারা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। দেশ পরিচালনায় সার্বিক সহায়তা পাবেন। নির্ভয়ে কাজ করবেন। সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবেন। তিনি বলেন, তরুণরা আমাদের দ্বিতীয় স্বাধীনতা এনে দিয়েছে।

তারুণ্যের শক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। তারুণ্যের শক্তির মাধ্যমে যে পরিবর্তন আসছে, এর মাধ্যমে একটা সুযোগ তৈরি হয়েছে। আমরা যেন এ সুযোগ কাজে লাগাই। সব মন্ত্রণালয়, বিভাগে যেভাবে আমরা কাজ করছিলাম তারচেয়েও ভালোভাবে কাজ করতে হবে। যেন আমরা প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কাজগুলো বাস্তবায়ন করতে পারি।

সূত্র জানায়, প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, আমাদের নিত্যপণ্যের সরবরাহ ঠিক রাখতে হবে। কোনো অবস্থায় বাজার অস্থিতিশীল হতে দেওয়া যাবে না। কেউ কেউ বাজার অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করতে পারে। এ বিষয়ে সকলকে সতর্ক থাকতে হবে। আমাদের ব্যবসায়ীদের অতি মুনাফা করার অভ্যাস আছে। এদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ভোক্তা অধিকারকে মাঠে থাকতে হবে। কেউ অতিরিক্ত লাভ করবেন না। এ বিষয়ে খেয়াল রাখবেন।

সচিবদের উদ্দেশে ড. ইউনূস বলেন, আগের তুলনায় আরও ভালো সার্ভিস দিতে হবে। মনে রাখবেন ছাত্র বিপ্লবের মধ্যে আমরা দায়িত্বে এসেছি। আমাদের আরও ভালো সার্ভিস দিতে হবে। না হলে আমাদের পার্থক্য কী? জনগণের যাতে কোনো ভোগান্তি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। জনস্বার্থের ফাইলগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিষ্পত্তি করতে হবে।

ফাইল নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে তিনি বিশেষ দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি বলেন, আমার অধীনে ২৫টি মন্ত্রণালয় রয়েছে। এসব মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাও আমি। আবার প্রধান উপদেষ্টাও আমি। সে ক্ষেত্রে এই ২৫টি মন্ত্রণালয়ের অধিকাংশ ফাইল আমার কাছে আসবে। যে ফাইলগুলো প্রধান উপদেষ্টার কাছে যাবে, সে ফাইলগুলোর শুধু সার-সংক্ষেপ পাঠাবেন। আর যেগুলো উপদেষ্টা হিসেবে আমার কাছে আসবে, তার ফাইল পাঠাবেন। তবে অহেতুক কোনো ফাইল পাঠাবেন না। যে ফাইল সচিব পর্যায়ে নিষ্পত্তি হয়, সেগুলো সেখানে নিষ্পত্তি করবেন।

অপচয় রোধ করতে সচিবদের নির্দেশ দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, কোনো প্রকার অপচয় করবেন না। প্রতিটি ক্ষেত্রে দেখবেন কি করলে খরচ কম হয়। অকারণে যাতে কোনো খরচ না হয় সে বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের সকলকে নির্দেশনা দেবেন। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণ করা যাবে না। সরকারি টাকার বিদেশ ভ্রমণ চলবে না। তবে গুরুতর অসুস্থ, রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনে এবং অনিবার্য ধর্মীয় আচার পালনে বিদেশ যাওয়া যেতে পারে।

অর্ন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকের পর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্উদ্দিন চৌধুরী সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, আওয়ামী লীগের শাসনামলে পদোন্নতিবঞ্চিত বিসিএস কর্মকর্তাদের বিষয়গুলো সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করা হচ্ছে। বৈঠকের বিষয়ে সিনিয়র সচিব বলেন, প্রধান উপদেষ্টা তারুণ্যের শক্তির ওপর আলোকপাত করেছেন।

তিনি বলেছেন- তারুণ্যের শক্তির মাধ্যমে যে পরিবর্তন আসছে, এর মাধ্যমে একটা সুযোগ তৈরি হয়েছে। আমরা যেন এ সুযোগ কাজে লাগাই। সব মন্ত্রণালয়, বিভাগে যেভাবে আমরা কাজ করছিলাম তারচেয়েও ভালোভাবে কাজ করতে হবে। যেন আমরা প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কাজগুলো বাস্তবায়ন করতে পারি। এ বিষয়ে তিনি সরাসরি নির্দেশনা দিয়েছেন।

মেজবাহ্উদ্দিন চৌধুরী বলেন, আমরা সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগ প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আছি। সরাসরি আমরা কীভাবে নথি উপস্থাপন করব, কীভাবে নির্দেশনাগুলো গ্রহণ করব, মূলত এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

পদোন্নতিবঞ্চিতদের দাবি-দাওয়ার বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে জ্যৈষ্ঠ সচিব বলেন, এ বিষয়গুলো আমরাই প্রধান উপদেষ্টার কাছে উপস্থাপন করেছি। আমরা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে ১৫-১৬ বছরে যেসব বিসিএসের ব্যাচের পদোন্নতি হয়েছে, যারা পদোন্নতিবঞ্চিত হয়েছেন, তাদের বিষয়গুলো সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করছি। এরই মধ্যে আমরা কাজ শুরু করেছি।

তিনি বলেন, আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে এ বিষয়গুলো সামনে এগিয়ে নেব। যারা পিএসসি থেকে বিসিএসের সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছিলেন ২৮ থেকে ৪২ ব্যাচের, তাদের বিষয়গুলো আমরা উপস্থাপন করেছি প্রধান উপদেষ্টার কাছে।

আমরা আশা করছি, আগামীকাল বা পরশুর মধ্যে এ বিষয়ে একটা প্রতিকার নিতে পারব। চলমান প্রকল্পগুলো নিয়ে কোনো কথা হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, মূলত মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো নিয়ে কাজ করা এবং দপ্তরগুলো নিয়ে কাজ করাটাই এখনকার মূল কাজ। যে কাজগুলো সচিবালয় পর্যায়ে বা দপ্তর পর্যায়ে নিষ্পত্তি করা যাবে, সেগুলো যেন নিষ্পত্তি করা হয়।

তিনি আরও বলেন, এ ছাড়া অন্য যে বিষয়গুলো আছে সেগুলো নিয়ে সাতদিনের মধ্যে জরুরিভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেব। যেগুলোর বিষয়ে মন্ত্রণালয় পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না সেগুলো নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা কাছে আমরা সিদ্ধান্ত চাইব।

সামনে ১৫ আগস্ট, জাতীয় শোক দিবস। সরকারি ছুটির দিন। সেক্ষেত্রে আপনারা কী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন- জানতে চাইলে সিনিয়র সচিব বলেন, এ বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। কিন্তু মাত্র তো তিনদিন বাকি আছে। মাঠ পর্যায়ে কোনো নির্দেশনা দেওয়ার বিষয়ে আপনারা কিছু ভাবছেন কি না- এ প্রশ্নে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমাদের এখানে আমরা কোনো নির্দেশনা পাইনি। এমন কিছু যদি থাকে, তাহলে নিশ্চয়ই সেটি আমরা জানতে পারব, কিন্তু আমরা কোনো নির্দেশনা পাইনি।

 




পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top