কারা হত্যা করল ইসমাইল হানিয়াকে, যা বলল হামাস

রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ৩১ জুলাই ২০২৪, ১৩:৫৬

ছবি: সংগৃহীত

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের শীর্ষ নেতা ইসমাইল হানিয়া ইরানের রাজধানী তেহরানে এক হামলায় নিহত হয়েছেন। হামাস এবং ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস বুধবার (৩১ জুলাই) আলাদা বিবৃতিতে হানিয়ার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে রয়টার্স।

ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি)-এর একটি বিবৃতি উদ্ধৃত করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তারা যে ভবনে অবস্থান করছিলেন তাতে হামলা চালানো হলে হানিয়া এবং তার একজন দেহরক্ষী নিহত হয়েছেন।

এর আগে সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা এক প্রতিবেদনে জানায় ফিলিস্তিনি ইসমাইল হানিয়ার পারিবারিক বাসস্থানে গতমাসের ২৫ জুন বিমান হামলা চালায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। সেই হামলায় তার বোনসহ অন্তত ১০ জন নিহত হন।

 
এ সময় গাড়িটি লক্ষ্য করে ইসরায়েলি বিমান থেকে হামলা চালানো হয়। এতে হানিয়ার তিন ছেলে হাজেম, আমির ও মুহাম্মদ ইসমাইল হানিয়া এবং তার অন্তত তিন নাতি-নাতনি নিহত হন। তার আরেক ছেলে গত ফেব্রুয়ারিতে এবং ভাই ও ভাতিজা অক্টোবরে প্রাণ হারান। এরপর নভেম্বরে তার এক নাতি নিহত হন।

হামাসের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তেহরানে হানিয়ার বাসভবনে ইসরাইল হামলা চালালে তিনি নিহত হয়েছেন। তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠনটি। তবে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী এ বিষয়ে এখনো কোনো বিবৃতি দেয়নি। ইসরাইলের প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকেও কোনো মন্তব্য এখনো আসেনি।

এর আগে মঙ্গলবার, হানিয়া ইরানের নতুন রাষ্ট্রপতির অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন এবং ইরানের সর্বোচ্চ নেতার সঙ্গে দেখা করেন।

চলতি বছর হামাসের রাজনৈতিক প্রধান হিসেবে পুনঃনির্বাচিত হন ইসমাইল হানিয়া। ২০১৭ সাল থেকে হামাসের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী হানিয়া গাজা, ইসরায়েল-অধিকৃত পশ্চিম তীর এবং প্রবাসে হামাসের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে আসছিলেন। গত দুই বছর ধরে তিনি তুরস্ক ও কাতারে বিভিন্ন সময় থেকেছেন। 

৫৮ বছর বয়সী হানিয়া হামাসের প্রতিষ্ঠাতা শেখ আহমেদ ইয়াসিনের ডানহাত ছিলেন। আহমেদ ইয়াসিন ২০০৪ সালে একটি ইসরাইলি বিমান হামলায় নিহত হন।

২০০৬ সালে ফিলিস্তিনি সংসদ নির্বাচনে হামাসের আশ্চর্যজনক বিজয়ের সময় হানিয়া সংগঠনের রাজনৈতিক নেতৃত্ব দেন। ওই নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের নেতৃত্বাধীন ফাতাহ পার্টিকে পরাজিত করেছিল হামাস। 

ইসমাইল হানিয়া কে?

ইসমাইল হানিয়া হামাসের রাজনৈতিক শাখার প্রধানের পদে থাকলেও তাঁকেই এই গোষ্ঠীর শীর্ষ নেতা মনে করা হয়।

গত শতকের আশির দশকে হামাসের উত্থানকালে ফিলিস্তিনি সুন্নি মুসলিমদের এই রাজনৈতিক ও সামরিক আন্দোলনের সামনের কাতারে ছিলেন ইসমাইল হানিয়া। ১৯৮৯ সালে তাঁকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেয় ইসরায়েল। এরপর ১৯৯২ সালে আরও কয়েকজন হামাস নেতার সঙ্গে হানিয়াকে ইসরায়েল ও লেবানন সীমান্তের শূন্যরেখায় ছেড়ে দেয় ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ। এক বছর নির্বাসনে থাকার পর ইসমাইল হানিয়া গাজায় ফেরেন। ১৯৯৭ সালে হামাসের মতাদর্শিক গুরুর কার্যালয়ের প্রধানের দায়িত্ব পান তিনি। এতে হামাসে তাঁর পদমর্যাদা বাড়ে।

ফিলিস্তিনের জাতীয় নির্বাচনে হামাস বেশির ভাগ আসনে জয় পাওয়ার পর ২০০৬ সালে ইসমাইল হানিয়াকে প্রধানমন্ত্রী পদে নিয়োগ দেন প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। কিন্তু সপ্তাহব্যাপী রক্তক্ষয়ী সংঘাতের পর গাজায় মাহমুদ আব্বাসের দল ফাত্তাহর কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হলে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে হানিয়াকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তবে হানিয়ে ওই সিদ্ধান্তকে ‘অসাংবিধানিক’ আখ্যায়িত করেন। তিনি বলেন, তাঁর সরকার ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি তাদের জাতীয় দায়িত্ব থেকে সরবে না এবং তিনি গাজা শাসন করতে থাকেন।

পরে ২০১৭ সালে ইসমাইল হানিয়া হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর প্রধান নির্বাচিত হন। পরের বছর ইসমাইল হানিয়াকে ‘সন্ত্রাসী’ তকমা দেয় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর। কয়েক বছর ধরে ইসমাইল হানিয়া কাতারে বসবাস করে আসছিলেন।


বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top