ট্রাম্প-জেলেনস্কি বৈঠকে বাগবিতণ্ডা, হয়নি চুক্তি
Nasir Uddin | প্রকাশিত: ১ মার্চ ২০২৫, ১১:০৬

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ‘উত্তপ্ত’ বৈঠকের পর পূর্ব আয়োজিত যৌথ সংবাদ সম্মেলন না করেই হোয়াইট হাউস থেকে চলে গেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রাকৃতিক সম্পদ নিয়ে চুক্তিতে সইও করেননি। শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে বৈঠকে তাদের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। খবর এএফপি।
দীর্ঘদিন ধরে ওই দুই রাষ্ট্রনেতা পরস্পরের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিয়ে আসছিলেন। এবার শুক্রবারের বৈঠকেই তারা বাগ্বিতণ্ডায় জড়ালেন।
রাশিয়ার সঙ্গে তিন বছর ধরে চলা যুদ্ধে ট্রাম্পের পূর্বসূরি সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসনের কাছ থেকে কয়েকশ কোটি ডলারের অস্ত্র ও অর্থ সহায়তা পেয়েছে ইউক্রেন; কিন্তু গত ২০ জানুয়ারি ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পরে পাল্টে গেছে দৃশ্যপট। জেলেনস্কির সমালোচনা করছেন ট্রাম্প। যুদ্ধের জন্য জেলেনস্কিকে দোষারোপ করে আসছিলেন তিনি। তাই সবার চোখ ছিল গতকালের বৈঠকে।
সাংবাদিকদের সামনে এই বৈঠকে জেলেনস্কিকে একের পর আক্রমণ করে বক্তব্য দেন ট্রাম্প। জেলেনস্কি ‘তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে জুয়া খেলছেন’ বলে অভিযোগ করেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘আপনার দেশের মানুষ খুবই সাহসী; কিন্তু আপনাকে হয় (রাশিয়ার সঙ্গে) একটি চুক্তি করতে হবে নইলে আমরা আর আপনাদের সঙ্গে নেই। আর আমরা যদি না থাকি তাহলে আপনাকে একা লড়তে হবে।’
ট্রাম্প ও জেলেনস্কির মধ্যে মতপার্থক্য একসময় চিৎকার-চ্যাঁচামেচির পর্যায়ে চলে যায়। ‘জেলেনস্কি যুদ্ধে হেরে যাচ্ছেন’ দাবি করে ট্রাম্প বলেন, ‘মানুষ মারা পড়ছে। যুদ্ধের জন্য সেনার সংখ্যাও কমছে ক্রমশ। আপনার হাতে কার্ড (বিকল্প) নেই। একবার আমরা চুক্তি সই করলে আপনি ভালো অবস্থানে চলে যাবেন। কিন্তু আপনাকে আদৌ কৃতজ্ঞ মনে হচ্ছে না। সত্যি কথা বলতে কি এটা ভালো কোনো বিষয় নয়।’
ট্রাম্প জেলেনস্কিকে বলেন, যুদ্ধ বন্ধে রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি করতে চাইলে ইউক্রেনকে ছাড় দিতে হবে। তিনি বলেন, ‘ছাড় দেওয়া ছাড়া আপনি কোনো চুক্তি করতে পারবেন না। তাই এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায় তাঁকে (জেলেনস্কি) কিছু ছাড় দিতে হবে। কিন্তু আশা করি, বড় কোনো ছাড় দিতে হবে না যেমনটা লোকে বলে বেড়াচ্ছে।’
ট্রাম্পের এ কথার পরিপ্রেক্ষিতে জেলেনস্কি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নাম উল্লেখ করে বলেন, একজন খুনিকে কোনো ছাড় দেওয়া উচিত নয়। পুতিনের বিষয়ে ট্রাম্পের নমনীয় অবস্থানের সমালোচনা করেন জেলেনস্কি। একজন খুনির সঙ্গে কোনো ধরনের সমঝোতা না করার জন্য ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
শুধু ট্রাম্প নয়, জেলেনস্কির সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়ান মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্সও। ওভাল অফিসে বসে বিতণ্ডায় জড়িয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে জেলেনস্কি অসম্মান করেছেন মন্তব্য করে ভ্যান্স বলেন, ‘আপনি একবারও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছেন না।’ মাথা নেড়ে ভ্যান্সের কথায় সায় দেন ট্রাম্প।এ সময় গলার স্বর উঁচু করে জেলেনস্কি উত্তর দেন, ‘বহুবার বলেছি, আমেরিকার জনগণকে ধন্যবাদ।’
রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টেলিগ্রাম পোস্টে লেখেন, ‘আমি মনে করি, জেলেনস্কির একগাদা মিথ্যা কথার মধ্যে সবচেয়ে বড় মিথ্যাটি ছিল, হোয়াইট হাউসে তিনি দাবি করেছেন, ২০২২ সালে কিয়েভ সরকার একা ছিল। কোনো সমর্থন পায়নি।’
মারিয়া জাখারোভা আরও লেখেন, ‘ট্রাম্প ও ভ্যান্স (যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট) কীভাবে সেই বদমাশকে আঘাত করা থেকে বিরত ছিলেন; সেটা সংযম প্রদর্শনের এক অলৌকিক ঘটনা।’
ট্রাম্প–জেলেনস্কির বাগবিতণ্ডার ঘটনায় কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ। এক্স পোস্টে তিনি জেলেনস্কিকে একজন ‘উদ্ধত শূকর’ বলে মন্তব্য করেছেন।
বর্তমানে রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের ডেপুটি চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করা মেদভেদেভ বলেন, ‘অবশেষে উদ্ধত শূকরটি ওভাল অফিসে একটি উপযুক্ত থাপ্পড় খেয়েছে।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্প ঠিক বলেছেন, কিয়েভের শাসনকাঠামো তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে জুয়া খেলছে।’
বিষয়: যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউস ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।