সংকটে ধুঁকছে সৈয়দপুর ফাইলেরিয়া হাসপাতাল

নীলফামারীর সৈয়দপুর থেকে | প্রকাশিত: ১২ জুলাই ২০২১, ০১:০৫

সংকটে ধুঁকছে সৈয়দপুর ফাইলেরিয়া হাসপাতাল

নীলফামারীর সৈয়দপুরে অবস্থিত বিশ্বের প্রথম ফাইলেরিয়া হাসপাতাল। ১৯৯৫ সালের ১৫ জানুয়ারি হাসপাতালটি গড়ে ওঠে। হাসপাতালটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ডা. মোয়াজ্জেম হোসেন জাপান সরকারের অর্থায়নে সৈয়দপুর উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নের ধলাগাছে ৭০ শতাংশ জমির ওপর প্রতিষ্ঠা করেন। হাসপাতালটি ম‍ূলত ফাইলেরিয়া বা গোদ রোগীদের জন্য।

উত্তর জনপদের পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট, দিনাজপুর, রংপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া জেলায় এ রোগ সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। যেখানে শতকরা ২০ ভাগ লোক এই রোগের জীবাণু বহন করছেন। তাই উত্তরাঞ্চলেন এ জনপদে এ হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। কিন্তু বর্তমানে হাসপাতালটি সংকটে ধুঁকছে। হাসপাতালটি বিক্রি করে দিতে চান প্রতিষ্ঠাতা ডা. মোয়াজ্জেম হোসেন।

এতে চরম প্রতিক্রিয়া ও হতাশা সৃষ্টি হয়েছে উত্তারঞ্চলের গোদ রোগীসহ বিভিন্ন মহলে। আর স্থানীয় কমিটির সদস্যরা বলছেন যে কোনভাবেই হাসপাতালটি বন্ধ বা বিক্রির ষড়যন্ত্র রুখে দেওয়া হবে। এজন্য জেলা প্রশাসনসহ জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতা ও হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা। প্রয়োজনে সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের তত্বাবধানে হাসপাতালের কার্যক্রম অব্যাহত রাখার দাবীও জানান।

হাসপাতাল কমিটির সভাপতি ও ওই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান জিকো আহমেদ জানান, সৈয়দপুর উপজেলাধীন কামারপুকুর ইউনিয়নের ধলাগাছ গ্রামে অবস্থিত ফাইলেরিয়া হাসপাতালটি বিগত ২০১২ সাল হতে অবৈধ দখলে ছিল।

হাসপাতালটি অবৈধ দখল মুক্ত করে স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রম গতিশীল করতে হাসপাতালটির প্রতিষ্ঠাতা আইএসিআইবি’র চেয়ারম্যান প্রফেসর ডাঃ মোয়াজ্জেম হোসেন ‘বাংলাদেশ প্যারামেডিকেল ডাক্তার এসোসিয়েশন’ (বিপিডিএ) এর সাথে একটি চুক্তিপত্র স্বাক্ষর করেন। চুক্তি পত্রের শর্তানুযায়ী বিপিডিএ হাসপাতালটি উদ্ধার করবেন এবং ২০২৯ ইং সন পর্যন্ত স্বাস্থ্য সেবামুলক সকল কাজ পরিচালনা করতে পারবেন। পরবর্তীতে ওই চুক্তি নবায়ন করা হবে বলেও সম্পাদিত চুক্তিপত্রে উল্লেখ করা হয়।

বিপিডিএ এর পক্ষে কেন্দ্রীয় মহাসচিব রাকিবুল হাসান তুহিন ফাইলেরিয়া হাসপাতালটি উদ্ধার ও পরিচালনার স্বার্থে আইএসিআইবি’র চেয়ারম্যান প্রফেসর ডাঃ মোয়াজ্জেম হোসেনের নির্দেশনায় ও সম্পাদিত চুক্তি বলে স্থানীয় একটি কমিটি অনুমোদন করেন। অনুমোদিত ওই কমিটি হাসপাতালের দখলদারদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে হাসপাতালটি দখল মুক্ত করেন এবং বিপিডিএকে হস্তান্তর করেন।

ওই কমিটির সাধারণ সম্পাদক ফয়েজ আহমেদ বলেন, হাসপাতালের চাবি ও দখলমুক্তপত্র হস্তান্তরের উদ্দেশ্যে হাসপাতালের কনফারেন্স রুমে গত ৮ জুন একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। প্রফেসর ডাঃ মোয়াজ্জেম হোসেনের পক্ষে আইএসিআইবি’র সহযোগী সংগঠন বিপিডিএর মহাসচিব রাকিবুল ইসলাম তুহিনের হাতে ওই দিন উপস্থিত সকল সাংবাদিকদের সামনে চাবি ও হস্তান্তর পত্র প্রদান করা হয়।

পরে বিপিডিএ এর মহাসচিব রাকিবুল ইসলাম তুহিন চুক্তি মতে হাসপাতালের সংস্কার কাজ শুরু করেন এবং স্বাস্থ্য সেবামুলক কাজের গতিশীলতা আনতে কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের বিজ্ঞাপন দেন। কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের ওই বিজ্ঞাপন একাধিক পত্রিকায়

প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু ডা. মোয়াজ্জেম হোসেন অজ্ঞাত কোন কারণে বিপিডিএর সাথে করা চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বিষয়ে কুরুচিকর মন্তব্য প্রদানসহ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটি ভুয়া আখ্যা দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন।

তিনি আরও বলেন, আমরা স্থানীয় কমিটির সদস্যরা ডা. মোযাজ্জেম হোসেনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করেছি। কিন্তু তিনি ফোন রিসিভ না করায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয় নাই। এদিকে বিপিডিএ মহাসচিব রাকিবুল ইসলাম তুহিন আমাদের স্থানীয় কমিটিকে জানান যে, ডা. মোয়াজ্জেম হোসেন হাসপাতালটি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং তার নামে থাকা জমি বিক্রয় করবেন বলে জানিয়েছেন।

এনএফ৭১/এনজেএ/২০২১




পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top