লক্ষ্মীপুরে চরের কৃষি জমি দখলের অভিযোগ চেয়ারম্যান ছৈয়ালের বিরুদ্ধে
লক্ষ্মীপুর থেকে | প্রকাশিত: ২৬ জানুয়ারী ২০২২, ০৪:৫০
লক্ষ্মীপুরে মেঘনা নদীর তীরবর্তী দূর্গম চরচমনীতে কৃষকের চাষ দেওয়া জমি জবরদখল হয়ে যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। কৃষকদের ওই জমি দখল করে নিয়েছে স্থানীয় চররমনীমোহন ইউপি চেয়ারম্যান এর অনুগত লাঠিয়াল বাহিনী। ফসল ফলানোর স্বপ্ন নিয়ে ক'দিন আগে প্রান্তিক কৃষকরা শ্রম-ঘাম বিনিয়োগ করে জমি নিংড়ে চাষোপযোগী করে। চাষকৃত জমিতে বীজ ফেলতে না ফেলতে দলবল নিয়ে লাঠিয়ালরা হানা দিয়ে চেয়ারম্যানের নামে ওই জমিগুলো দখল নিয়ে নেয়।
এসময় লাঠিয়ালরা কৃষকদের প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে শাসিয়ে যায়। এতে ভীতসম্ভ্রস্ত হতদরিদ্র কৃষকরা। প্রভাবশালী হওয়ায় চেয়ারম্যান বাহিনীর দখলের বিরুদ্ধে কোথাও অভিযোগও করতে পারছেনা তারা। তবে এ ঘটনায় চরের বাসিন্দাদের মাঝে ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। যেকোনো সময় চেয়ারম্যান বাহিনীর সাথে চরবাসীর সংঘর্ষের মতো অপ্রীতিকর ঘটনার আশংকা করছেন এলাকাবাসী। এ পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হস্তক্ষেপ কামনা করছেন এলাকাবাসী।
বারেক মিয়া নামের এক কৃষক জানান ,পিতৃপুরুষের আবাদি জমি মেঘনার করালগ্রাসে বিলীন হয়ে যায় একসময়। আবার কয়েকবছর পর সেখানে চর জেগে ওঠে। প্রায় বিশবছর আগে চরজাগার পর পিতৃপুরুষের জমি বন্দোবস্ত পেতে স্থানীয় ভূমি অফিস থেকে ডিসিআর কাটেন। সেই থেকে ওইসব জমি তারা চাষাবাদপোযোগী করে ভোগদখল করে আসছেন। কিছু জমি হতদরিদ্র কয়েকজনের মাধ্যমে বর্গা চাষ করান। ওইসব হতদরিদ্রদের জমির পাশে বসবাস করতে জায়গাও দেন।
ঠিকঠাক মতোই চলছিল এতবছর। কিন্তু কয়েকদিন আগে কোনপ্রকার শর্ত ছাড়াই চেয়ারম্যান ইউসুফ ছৈয়াল আকস্মিক তার লাঠিয়াল বাহিনী দিয়ে প্রায় ৬ একর জমি জবর দখল করে সীমানা খুঁটি দেয়। চেয়ারম্যানের ছেলে ও ভাতিজা ইয়াকুব আর মানিকের নেতৃত্বে জোরপূর্বক সীমানা দিয়ে দখল করা জমিতে না যেতে শাসিয়েও যায় লাঠিয়াল বাহিনী।
নদীভাঙা হতদরিদ্র আচিয়া বেগম ও সামছু নামের কৃষক দম্পতী। প্রায় ১৫ বছরেরও অধিক সময় ধরে লক্ষ্মীপুরের মেঘাচর এলাকায় বসবাস করছেন তিনি। নিজস্ব ভূমি না থাকায় চাষাবাদ করছেন অন্যের জমি। আর সেখানকার আয় দিয়ে কোনরকম চলছে তাঁর সংসার। সংসারে ৫ সন্তান রয়েছে তাদের। প্রতিবছরের ন্যায় এবারো ধার-দেনা করে মেঘারচরের ২ একর জমিতে সয়াবিন আবাদ করেন। ইতিমধ্যে সে বীজ থেকে গজিয়েছে চারা। এই চারাকে ঘিরে কতই না স্বপ্ন দেখছেন তারা। কিন্তু তাদের স্বপ্নকে দুঃস্বপ্ন বানিয়ে দেয় চেয়ারম্যান ইউসুফ ছৈয়ালের লাঠিয়ালরা। আবাদ কৃত জমিটি তারা জবরদখল করে নেয়।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে আঁচিয়া বেগম বলেন, শুধু দখলই নয়, তার স্বামী ও সন্তানদের মারধর এবং প্রাণনাশের হুমকি দেন চেয়ারম্যানের অনুসারিরা। তিনি বলেন, যদি জমিটি উদ্ধার করতে না পারে, তাহলে স্বামী সন্তান নিয়ে মরে যাওয়া ছাড়া তার আর কোন উপায় নাই। এজন্য তিনি প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকাবাসী জানান,ইউসুফ ছৈয়াল চেয়ারম্যান হলেও ভূমিদস্যু। তার নিজস্ব লাঠিয়াল বাহিনী চরজুড়ে দখল লুটের রাজত্ব কায়েম করে আসছে। তাদের ভয়ে চরবাসী ভীতসম্ভ্রস্ত। হাট,ঘাট,চরের জমি দখল চেয়ারম্যান বাহিনীর নিত্য কাজ। তার ও তার বাহিনীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় ভুক্তভোগীরা আইন আদালতে একাধিক অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পায়নি। রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে চেয়ারম্যান পার পেয়ে যায়। এ কারণে তার বাহিনী দিন দিন বেপরোয়া হয়ে চরবাসীকে অতিষ্ঠ করে চলছে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে চররমনীমোহন ইউপি চেয়ারম্যান আবু ইউসুফ ছৈয়াল তার বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ অস্বীকার করে মুঠোফোনে জানান,আমি কাউকে কোন জমি দখলের নির্দেশ দেওয়ার প্রশ্নই আসেনা। যুবলীগের কিছু ছেলে চরে জমি দখল করছে বলে লোকমুখে শুনেছি। তবে যাদের জমি তারা পরিষদে আমার কাছে অভিযোগ দিতে পারে।
এনএফ৭১/এনজেএ/২০২২
বিষয়: লক্ষ্মীপুর
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।