সৈয়দপুরে সরকারী ভাটির দেশীয় মদে সয়লাবঃ উচ্ছন্নে যাচ্ছে যুবসমাজ
নীলফামারী থেকে | প্রকাশিত: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১১:৩৯
নীলফামারীর সৈয়দপুর শহরের একমাত্র সরকারী ভাটির দেশীয় মদের দোকানে অন্যন্য নিত্যপণ্যের মতই বিক্রি হচ্ছে মদ। ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মদ কিনতে আসা মানুষের ভির হয় নিয়মিত। এখানে খুব সহজে ও ইচ্ছে মত যত খুশ পরিমানে মদ কেনা যায়। ফলে মদ সেবনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে উচ্ছন্নে যাচ্ছে শহরের বিশাল অংশের কিশোর ও যুবসমাজ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার পরিচ্ছন্নতা কাজে নিয়োজিত সুইপার, মুচি, হরিজন সম্প্রদায়সহ হিন্দু, খ্রীষ্টান ধর্মাবলম্বী লাইসেন্সপ্রাপ্ত মাদকসেবীদের জন্য সৈয়দপুর পৌরসভার নয়াবাজার সুরকী মহল্লায় রেলওয়ের ভাগাড় এলাকায় স্থাপন করা হয়েছে সরকারীভাবে দেশীয় এ মদভাটি। একজন প্রতিমাসে সর্বোচ্চ সাড়ে ৯ লিটার মদ কেনার নিয়ম। অথচ এখান থেকে একদিনে একজনেই ৪০-৫০ লিটার পর্যন্ত মদ নিয়ে গিয়ে বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করছেন। এর ফলে উপজেলার হাজারীহাট, গোলাহাট, পোড়ারহাট, চৌমুহনী, চিকলী, উত্তরা আবাসন, হামুরহাট, চওড়াবাজার, খালিসা এলাকায় মিনি ভাটি গড়ে তুলেছেন অনেকে। ভাটিতে কোন রকম কার্ড প্রদর্শন ছাড়াই মদ বিক্রি করায় যে কেউ গ্রহন করতে পারছেন এই মাদক। এই সুযোগে লাইসেন্সবিহীন ব্যক্তিরাও মদ নিচ্ছে এখান থেকে। পাশাপাশি অনেক কার্ডধারী নিয়মিত নেশা করেননা। দৈনিক সর্বোচ্চ ৫০ থেকে ৭০ ভাগ কার্ডধারী মদ সেবন করে। অথচ ভাটি মালিক প্রতিদিন সবগুলো কার্ডের বিপরীতে বরাদ্দকৃত হারে মদ আনেন। অতিরিক্ত মদ ওইসব মিনি মদভাটি পরিচালনাকারীদের কাছে বিক্রি করেন। প্রতিদিন ভোর ৬টা থেকে সকাল ৮টার মধ্যে নিজ দায়িত্বে মদ পৌছে দেওয়া হয়।
শহরের মুন্সিপাড়া হরিজন পল্লীর লাল্লা নামের একজন বলেন, ভাটির মালিক রাজু বাবু আমাদের কার্ড রিনিউ করে দেওয়ার নামে পুরনো কার্ড ও ভোটার আইডির ফটোকপি আর ছবি নিলেও আজ ৭-৮ মাস হল নতুন কার্ড দিচ্ছেন না। আমরা ভাটিতে আসলে বেশি মদ দিতে চায়না। আমাদের নামে মদ এনে আমাদেরই ভাগ মেরে দিয়ে বাইরে অকার্ডধারীদের কাছে বেশি দামে বিক্রি করেন।
পৌরসভার পরিচ্ছন্নতাকর্মী ভোলু জানান, প্রায় প্রতদিনই আমাদের বিভিন্ন হরিজন পল্লীর নামে অনুষ্ঠান বা মৃত্যুর অজুহাতে অতিরিক্ত মদ আনে ভাটি মালিক। এই বেশি আনা মদ গোপনে বিক্রি করে দেন বিভিন্ন এলাকায় গড়ে ওঠা মদ বিক্রির পয়েন্ট পরিচালনাকারীদের কাছে। অথচ আমাদের কেউ মারা গেলে বা উৎসব পার্বণে ফ্রি যে মদ দেওয়ার নিয়ম আছে তা আমরা পাইনা।
এব্যাপারে মদ ভাটির মালিক রাজু কুমার লাল বলেন, সৈয়দপুরে প্রায় ৬০০ জনের মদ খাবার লাইসেন্স আছে। লাইসেন্সধারী একজন প্রতিমাসে সাড়ে ৯ লিটার মদ কিনতে পারবে। কিন্তু প্রতি দিন কয়কশত লিটার মদ অবৈধভাবে বিক্রি হচ্ছে, সে বিষয় তিনি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন আমরা সবাইকে ম্যানেজ করেই ব্যবসা করছি।
জেলা মাদক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা শরীফ উদ্দীন জানান, মদ সেবনের লাইসেন্সধারীরা এখানে এসে জনপ্রতি প্রতিদিন এক লিটার থেকে সাড়ে ৩ লিটার পর্যন্ত মদ কিনতে পারবেন এবং তা ভাটি এলাকাতেই সেবন করবেন। কোনভাবেই তা বহণ করে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া যাবেনা। তবে বিশেষ প্রয়োজনে উৎসব পার্বণে প্রশাসনের অনুমতি সাপেক্ষে ১০ লিটার মদ নিয়ে তা নিজ নিজ বাড়ি, পরিবারের সদস্যরা বা অনুষ্ঠান চত্বরে পান করা যাবে। তবে অবশ্যই তা পারিবারিক গন্ডির মধ্যে হতে হবে। এ ছাড়া নিয়মানুযায়ী ১৬ মার্চ থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা এবং ১৬ অক্টোবর থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত সকাল ১১টা থেকে রাত ৮টা মভাটি খোলা থাকবে। প্রতিজনে মাসে সর্বোাচ্চ সাড়ে ৯ লিটার মদ কিনতে পারবেন। এ নিয়মের ব্যত্যয় হলে অবশ্যই অবৈধ হবে।
এনএফ৭১/আরআর/২০২২
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।