বয়স স্বল্পতায় ভর্তি আবেদন করতে পারছে না শিক্ষার্থীরা
গোপালগঞ্জ থেকে | প্রকাশিত: ২৬ ডিসেম্বর ২০২০, ২১:৫০
জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ অনুযায়ী ২০২১ শিক্ষাবর্ষে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তির বয়স নির্ধারণ করা হয়েছে ১১ বছর। ফলে গোপালগঞ্জের অধিকাংশ শিক্ষার্থীর বয়স ১১ বছরের কম হওয়ায় ভর্তির আবদেন করতে পারছে না। এতে সন্তানদের শিক্ষাজীবন নিয়ে দু:চিন্তায় পড়েছেন অভিভাবকরা। ফলে অনেক অভিভাবক জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে ছুটছেন বিভিন্ন দপ্তরের। ছুটছেন জেলা প্রশাসন ও জেলা শিক্ষা অফিসের দ্বারে দ্বারে।
জেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) দেশের সকল সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অনলাইন ও এসএমএস এর মাধ্যমে ভর্তির আবেদন ও ফি প্রদান সংক্রান্ত নিয়মাবলী প্রকাশ করেছে। সে অনুযায়ী গত ১৭ ডিসেম্বর থেকে অনলাইনে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তির আবেদন শুরু হয়। আবেদনের সময়সীমা শেষ হবে চলতি মাসের ২৭ ডিসেম্বর বিকেল ৫টা পর্যন্ত। ৩০ ডিসেম্বর অনলাইন লটারির মাধ্যমে জানা যাবে কে কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পারবে।
বিভিন্ন স্কুল ও কম্পিউটারের দোকানগুলো ঘুরে দেখা ও জানাগেছে, জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ অনুযায়ী প্রাথমিকে ভর্তির নূন্যতম বয়স ধরা হয়েছে ছয় বছর। সে হিসেবে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তির বয়স ১১ বছর নির্ধারণ করা হয়েছে।
কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে ২০২০ শিক্ষাবর্ষে শহরের বীণাপাণি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, এস এম মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উত্তর গোপালগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পশ্চিম গোপালগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, অনির্বাণ স্কুল ও মালেকা একাডেমীসহ জেলার বিভিন্ন প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসজ জেলার বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে এবছর ১৯ হাজার শিক্ষার্থীকে পরবর্তী শ্রেণিতে উন্নীত বলে বিবেচনা করা হয়েছে। এসব শিক্ষার্থীদেরকেও দেয়া হয়েছে প্রত্যয়নপত্র।
ফলে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে পাশ করে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তিচ্ছুক শিক্ষার্থীদের অধিকাংশেরই বয়স ১১ বছর না হওয়ার কারণে অনলাইন ভর্তির আবেদন করতে পরছেন না। আর যারাও করেছেন তাদের আবেদন অনলাইনে গৃহীত হয়নি।
যে কারনে জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করে জটিলতা কাটিয়ে সন্তানদের পড়াশোনার ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদে ছুটছেন অভিভাবকরা। এতে অনেক শিক্ষার্থীর লেখা-পড়ায় ধারাবাহিকতা ব্যাহত হতে পারে, যা তার পরবর্তী জীবনেও প্রভাব ফেলতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে সন্তানদের ভর্তি নিয়ে উদ্বিগ্ন তাদের অভিভাবকেরা।
এদিকে গত সোমবার (২১ ডিসেম্বর) সকালে গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করেন ভর্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকগণ। এসময় তারা সন্তানদের ভর্তি করার দাবী জানান। পরে অভিভাবকদের পক্ষ থেকে গোপালগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো: ইলিয়াছুর রহমানের কাছে চলমান সমস্যা নিরসনে একটি স্মারকলিপি প্রদান করে।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে একাধিক অভিভাবক জানান, প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি করার সময় তারা তাদের সন্তানদের বয়স কমিয়ে স্কুলে ভর্তি করেছিলেন। কিন্তু এখন ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি করতে ১১ বছর ঠিক করায় তাদের সন্তানদের বয়স ১১ বছরের কম হচ্ছে। যে কারনে তাদের সন্তানদের ভর্তির আবদেন গ্রহণ হচ্ছে না। এবারের মত বয়সের নিয়মনীতি তুলে দিয়ে শিক্ষার্থীরা যাতে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হতে পারে সেজন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন তারা।
কম্পিউটার দোকান মালিক ও কম্পিউটার অপারেটর অসীম পান্ডে বলেন, অনলাইনে ভর্তির আবেদন করতে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা তাদের কাছে ছুটে আসছেন। কিন্তু এর মধ্যে প্রায় ৮০ ভাগ শিক্ষার্থীর বয়স ১১ বছরের কম। যে কারনে তাদের আবেদন সফটওয়্যার গ্রহণ করছে না। যে কারনে তাদেরকে নতুন করে জন্ম নিবন্ধন নিয়ে বিভিন্ন দপ্তরে ছুটে যেতে হচ্ছে।
গোপালগঞ্জ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা খায়রুল আনাম আফতাবুর রহমান হেলালী বলেন, জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ (সংশোধিত ২০১৯) অনুযায়ী ১ম শ্রেণিতে ভর্তির ন্যূনতম বয়স হতে হবে ৬+ বছর এবং সে অনুযায়ী ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর বয়স হতে হবে ন্যূনতম ১১+ বছর। বয়স-স্বল্পতার কারণে এ বছর অনেকে ভর্তির সুযোগ হতে বঞ্চিত হচ্ছে। ইতিমধ্যে বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। কিন্তু সরকারি পরিপত্রের কোন ব্যত্যয় হওয়ার সুযোগ নেই বলেও জানিয়েছে তিনি।
এনএফ৭১/জেএস/২০২০
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।