কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে নিরাপত্তার অভাব

নিশি রহমান | প্রকাশিত: ২৮ ডিসেম্বর ২০২২, ০০:০৫

কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত

বিশ্বের দীর্ঘতম কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে পর্যটকের ভিড় লেগেই থাকে। এখানে সকালে সমুদ্রের লোনাজলে নেমে গোসল, বিকেলে বালুচরে দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত দেখা পর্যটকের প্রধান আকর্ষণ হলেও ইদানীং অনেকে নির্জন সৈকত বেছে নিচ্ছেন। এ জন্য দল বেঁধে পর্যটকেরা ছুটছেন কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বিভিন্ন পয়েন্টের সৈকতে। কোলাহলমুক্ত-নিরিবিলি পরিবেশে পর্যটকেরা সৈকত ভ্রমণের পাশাপাশি পশ্চিমাকাশে অস্তে চলা সূর্য দেখার সুযোগ নিচ্ছেন।

কক্সবাজার হোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, গত বৃহস্পতিবার থেকে রোববার এই চার দিনে সৈকতে ভ্রমণে এসেছেন অন্তত চার লাখ পর্যটক। ৭০ শতাংশ পর্যটকের সমাগম ঘটেছিল শহরের সুগন্ধা পয়েন্টের দক্ষিণ দিকে কলাতলী এবং উত্তর দিকে লাবণী পয়েন্ট পর্যন্ত চার কিলোমিটার সৈকতে। অবশিষ্ট ৩০ শতাংশ পর্যটক লোকসমাগম এড়াতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের দিকে ছুটছেন। এই সড়কের পশ্চিম পাশে দরিয়ানগর, হিমছড়ি, প্যাঁচারদ্বীপ, ইনানী, পাটোয়ারটেক, মোহাম্মদ শফির বিল, মনখালী, শাপলাপুর, টেকনাফ, সাবরাং পয়েন্টের নির্জন সৈকতে পর্যটকের সমাগম ঘটছে। পর্যটকেরা এসব নির্জন সৈকতে সময় কাটানো পছন্দ করছেন। তবে এসব সৈকতে গোসলের ব্যবস্থা নেই। নিরাপত্তার জন্য মেরিন ড্রাইভে ট্যুরিস্ট পুলিশের টহল থাকলেও সৈকতের পয়েন্টগুলোতে লাইফগার্ড কিংবা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নেই।

গতকাল রোববার বিকেলে মেরিন ড্রাইভের নির্জন প্যাঁচারদ্বীপ সৈকতে দেখা গেছে, কয়েক শ পর্যটক বালুচরে দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত দেখছেন। এই সৈকতে যেতে মেরিন ড্রাইভ থেকে নেমে একটি কাঠের সাঁকো পেরোতে হয়। কারণ, জোয়ারের সময় বালুচর ডুবে যায়। সাঁকো পেরিয়ে ঝাউবাগানের ভেতর দিয়ে নামতে হয় নির্জন সৈকতে। এই সৈকতে প্যারাসেইলিংয়ে চড়ে আকাশে ওড়ার সুযোগও আছে।

কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের পাশ দিয়ে কাঠের সাঁকো পার হয়ে প্যাঁচারদ্বীপ সৈকতে ছুটছেন পর্যটকেরাকক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভটা দারুণ, নজরকাড়া। মেরিন ড্রাইভের পূর্ব পাশে পাহাড়সারি, পশ্চিম পাশে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত। পৃথিবীর অন্য কোথাও এমন দৃশ্যের মেরিন ড্রাইভ আছে কি না জানা নেই। তবে নির্জন সৈকতে পর্যটকেরা, বিশেষ করে মেয়েরা বিপদে পড়লে উদ্ধার কিংবা নিরাপত্তার কিছুই নেই।

মেরিন ড্রাইভের পশ্চিম পাশের দরিয়ানগর, হিমছড়ি, পাটোয়ারটেক, শাপলাপুর ও সাবরাং পয়েন্টেও পর্যটকের সমাগম দেখা গেছে। সাবরাং পয়েন্টে সৈকত ভ্রমণের পাশাপাশি পর্যটকেরা রঙিন ডিঙি নৌকার ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। কেউ কেউ বালুচরে সৃজিত ঝাউবাগানে দাঁড়িয়ে ছবি তোলেন। নির্জন সৈকতে লাল কাঁকড়ার দৌড়ঝাঁপ সবার পছন্দ। পর্যটকদের অনেকে লাল কাঁকড়া ধরতে প্রতিযোগিতায় নামেন। বালুচরে হাজার হাজার লাল কাঁকড়ার গর্ত। মুহূর্তে কাঁকড়া গর্তে ঢুকে পড়ে। তবে লাল কাঁকড়ার যম হচ্ছে পর্যটকবাহী মোটরযান ‘বিচ বাইক’।

পর্যটকবাহী মোটরযান ‘বিচ বাইক’কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদ সভাপতি দীপক শর্মা বলেন, নির্জন সৈকতে পর্যটকের সমাগম বাড়তে থাকায় লাল কাঁকড়াসহ জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে। মানুষের উপস্থিতি বাড়তে থাকায় সৈকতে কুকুরের উপদ্রব বাড়ছে। কুকুরের আক্রমণে গভীর সমুদ্র থেকে ডিম পাড়তে আসা মা-কচ্ছপের মৃত্যু হচ্ছে।




পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top