২৫ বছর পর পরিবারকে পেলেন আবুল কাশেম

নিজস্ব প্রতিনিধি | প্রকাশিত: ১৯ জানুয়ারী ২০২৩, ১২:৪৫

আবুল কাশেম

দীর্ঘ ২৫ বছর পর পরিবারকে খুঁজে পেলেন চট্টগ্রামের হালিশহরের আবুল কাশেম। এ যেন নাটক-সিনেমার কোন দৃশ্য!

আবুল কা‌শেম ২৫ বছর আগে যখন সৌ‌দি আর‌ব যাত্রা ক‌রেন, তখন তার মে‌য়ে রুমা ছি‌লেন মাতৃগ‌র্ভে। বা‌কি আট ছে‌লেমে‌য়েও ছিল শিশু। দীর্ঘ ২৫ বছর পর মান‌সিক ভারসাম‌্য হা‌রি‌য়ে বিনা পাস‌পো‌র্টে গত শুক্রবার রা‌তে দে‌শে ফেরেন আবুল কা‌শেম। তিনি বা‌ড়ির ঠিকানা বল‌তে পার‌ছি‌লেন না। আবুল কাশেম বল‌তে পে‌রে‌ছি‌লেন কেবল চট্টগ্রামের দুটি এলাকার কথা ও তিন ‌ছে‌লের নাম। এদিকে ঠিকানা না পাওয়ায় আবুল কাশেমকে ব্র‌্যা‌কের মাই‌গ্রেশন ও‌য়েল‌ফেয়ার সেন্টা‌রের কা‌ছে হস্তান্তর ক‌রে বিমানবন্দর পু‌লিশ। এরপর পাঁচদি‌নের চেষ্টায় তার প‌রিবা‌রের সন্ধান মে‌লে। আজ বুধবার আবুল কা‌শেম‌কে তার সন্তান‌দের কা‌ছে হস্তান্তর ক‌রে‌ছে ব্র‌্যাক।

আরও পড়ুন: নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে গোলাগুলি, রোহিঙ্গা নিহত

এসময় হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। চট্টগ্রাম থেকে বুধবার তারা ঢাকায় এসে পৌঁছান। এরপর বিকেলে আবুল কাশেম নামের ওই বৃদ্ধকে তার পুত্র ও কন্যাসহ পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করেন ব্র্যাকের মাইগ্রেশন কর্মসূচি প্রধান শরিফুল হাসান। বিকেলে তারা চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন।

এর আগে, গত শুক্রবার দিবাগত রাতে সৌদি আরব থেকে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নেমেছিলেন এই বৃদ্ধ। কিন্তু তিনি নিজের ঠিকানা বলতে পারছিলেন না। তার কাছে পাসপোর্টও ছিলো না। অনেক কিছু ভুলে গিয়েছেন। এরপর বিমাবন্দরের পুলিশ তাকে বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের মাইগ্রেশন ওয়েলফেয়ার সেন্টারে পাঠায়। তার খোঁজ পেতে ব্র্যাকের কর্মীরা চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় খোঁজখবর শুরু করে। গণমাধ্যমেও বিষয়টি জানানো হয়। এরপর চট্টগ্রামের ২৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়রের সহায়তায় তার পরিবারের সন্ধান মেলে।

ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের কর্মসূচি প্রধান শরিফুল হাসান গণমাধ্যমকে জানান, শারিরীকভাবে সুস্থ মনে হলেও সম্ভবত আবুল কাশেম ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রংশ রোগে আক্রান্ত। এ কারণেই তিনি সঠিকভাবে তার ঠিকানা বলতে পারছেন না। তিনি জানাচ্ছেন তার নাম আবুল কাশেম। পিতার নাম ফজেল আহমেদ। মাতা সাবানা। স্ত্রীর নাম বলছেন আমেনা। নিজের ঠিকানা তিনি কখনো বলছেন চট্টগ্রামের নয়াবাজার। কখনো বলছেন টেকনাফ। আবার কখনো রাউজানের পাহাড়তলী ইউনিয়নের গরিশংকরহাটের কথাও বলছেন। আবার বলছেন, চট্টগ্রামের নতুন বাজার হালিশহরের কাছে, ঈদগাহের মাঠ বউ বাজার এলাকায় তার ছেলের তরকারির দোকান আছে। আমরা তার বাড়ি কোথায় নিশ্চিত হতে না পারলেও ভাষা শুনে এটুকু বুঝতে পেরেছিলাম তার বাড়ি চট্টগ্রাম অঞ্চলে।

আবুল কাশেম দাবি করছিলেন, তার ৬ মেয়ে ও ৩ ছেলে রয়েছে। তার তিন ছেলের নাম মান্নান, নূর হাসান, এনামুল হাসান। এর মধ্যে নূর হাসানের তরকারির দোকান আছে। ছোট ছেলে এনামুল হাসান দুবাই থাকেন। মান্নান সৌদি থাকেন বলে দাবি তার। ৮-১০ জন নাতি নাতনি আছেন। কিন্তু যেহেতু দীর্ঘ ২৫ বছর দেশে নেই সঠিকভাবে সব বলতে পারছিলেন না।

শরিফুল হাসান আরও জানান, ওই বৃদ্ধ বলছিলেন চট্টগ্রামের নয়াবাজার এলাকায় তার ছেলে তরকারি বিক্রি করে। সেই কথার উপর ভিত্তি করে আমাদের চট্টগ্রাম টিম "পরিবারের সন্ধান চাই" শিরোনামে ছবিসহ শত শত পোস্টার বিলি করে বেড়ায়। চট্টগ্রামের শহরের হালিশহর, নয়াবাজার, বউবাজার, ঈদগাহ, পাহাড়তলী সহ আরো বেশ কয়েকটি স্থানে দেয়ালে দেয়ালে আমরা পোস্টার লাগান। আমরা বিশ্বাস রেখেছিলাম গণমাধ্যমকর্মীসহ সবার সহযোগিতায় আমরা তার পরিবারকে খুঁজে বের করবোই।

এসব পোস্টার দেয়ালে লাগানো ও বিতরণ করার পর মঙ্গলবার বিকেলে চট্টগ্রামের আমাদের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ২৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র (২৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর) আব্দুস সবুর লিটন যোগাযোগ করেন। তিনি জানান, পোস্টারের ছবির লোকটিকে তিনি চিনতে পেরেছেন। এরপর আমাদের লোকজন তার অফিসে যায়। তার সহযোগিতায় আমরা তার ছেলে সবজি ব্যবসায়ী জনাব নূর হাসানের খোঁজ পাই। পরবর্তীতে কাউন্সিলর অফিসে তাকে এনে কথা বলে জানতে পারি আবুল কাশেম তার বাবা। তার জাতীয় পরিচয়পত্র দেখেও আমরা বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছি। নুর হাসানের কাছ থেকে আমরা পরিবারের বাকি সদস্যদের সঙ্গেও কথা বলি। দুবাইতে থাকা তার এক ছেলের সঙ্গেও কথা বলি। এরপর বৃদ্ধ আবুল কাশেমের ছোট মেয়ে রুমা বেগম ও তার স্ত্রী আমেনা বেগমের সাথে ঢাকা থেকে ভিডিও কলে কথা বলিয়ে দেই। এ সময় যে আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয় সেটি ভাষায় বলা কঠিন। এরপরই আমাদের লোকজনের সঙ্গে পরিবারের সদস্যরা তাকে নিতে ঢাকায় রওয়ানা হন।

 




পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top