ইভিএমে ভোট দিতে পারেননি লাঙ্গলের মেয়রপ্রার্থী

বরিশাল ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে চলছে ভোট লড়াই

রাজিউর রেহমান | প্রকাশিত: ১২ জুন ২০২৩, ১৯:৩৩

ছবি: সংগৃহীত

বরিশাল ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে চলছে ভোটের লড়াই। সোমবার (১২ জুন) সকাল ৮টায় শুরু হয় ভোটগ্রহণ। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলবে।ভোটগ্রহণ উপলক্ষে মাঠে মোতায়েন করা হয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কেন্দ্র পাহারায় মোতায়েন করা হয়েছে ১৬ থেকে ১৭ জনের ফোর্স। মাঠে নির্বাচনী আচরণ প্রতিপালনে নিয়োজিত করা হয়েছে নির্বাহী ও বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট। এছাড়া রয়েছে ইসির নিজস্ব পর্যবেক্ষক টিম। নির্বাচন ভবনে মনিটরিং সেল গঠন করা হয়েছে। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে স্থাপিত সিসি ক্যামেরায় ভোটগ্রহণ পর্যবেক্ষণ করবে নির্বাচন কমিশন।

এই দুই সিটিতে ভোটের লড়াইয়ে আছেন আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, জাকের পার্টি ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থীসহ স্বতন্ত্র প্রার্থী। দুটি সিটি নির্বাচনের কোনটিতে বিএনপি অংশগ্রহণ করছে না। সব ভোটকেন্দ্রে ইভিএমে ভোট নেয়া হচ্ছে।

মেয়র পদে জোর প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাসের কারণে দেশবাসীর বেশি নজর বরিশালের দিকে। ক্ষমতাসীন দল থেকে এবার প্রার্থী পরিবর্তন করায় এবং নির্বাচনী পরিবেশ ভালো থাকায় বরিশালে ভোটার উপস্থিতি ভালো হবে বলেই আশা করা হচ্ছে।

ভোট শুরুর আগেই বরিশালের কেন্দ্রগুলোতে ভোটারদের দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে। অনেকটা উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে সেখানে। ইভিএম পদ্ধতিতে একে একে ভোট দিতে শুরু করেছেন ভোটাররা।

সেখানে ইভিএমে ভোট দেয়া নিয়ে ভোটারদের মধ্যে দেখা গেছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। অনেক ভোটারের মাঝেই রয়েছে ইভিএম নিয়ে উচ্ছ্বাস। আবার, মেশিনের মাধ্যমে ভোট প্রদানের অভিজ্ঞতা না থাকায় তা কীভাবে দেয়া হবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তাও কাজ করছে কিছু ভোটারের মাঝে।

এদিকে, খুলনায় মূল চ্যালেঞ্জ ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো। এ সিটিতে মেয়র পদে শক্ত কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস নেই। ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ এ সিটিতে কাউন্সিলর পদে প্রার্থিতা দলের সবার জন্য উন্মুক্ত রাখে। সে কারণে কাউন্সিলর পদে দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে যাচ্ছে।

নির্বাচন উপলক্ষ্যে ৭২ ঘণ্টার জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে মোটরসাইকেল। ভোটের দিন সীমিত থাকবে যন্ত্রচালিত যান চলাচল। নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে সব ধরনের মিছিলের ওপরও। সবার ভোট দেওয়ার সুবিধার্থে ভোটের এলাকায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

বরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি) নির্বাচন

এ নির্বাচনে ১২৬টি ভোটকেন্দ্রের ৮৯৪টি ভোটকক্ষে ভোটগ্রহণ চলছে। ১ হাজার ১৪৬টি সিসি ক্যামেরার আওতায় রয়েছে পুরো নিবার্চন প্রক্রিয়া। এতে মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৭৬ হাজার ২৯৮ জন।

বরিশালের মেয়র প্রার্থী যারা

আওয়ামী লীগের আবুল খায়ের আবদুল্লাহ (নৌকা), জাতীয় পার্টির ইকবাল হোসেন তাপস (লাঙ্গল), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করিম (হাতপাখা), জাকের পার্টির মিজানুর রহমান বাচ্চু (গোলাপ ফুল), স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. কামরুল আহসান (ঘড়ি), আসাদুজ্জামান (হাতি) ও আলী হোসেন (হরিণ)। এছাড়া বরিশাল সিটির ৩০টি ওয়ার্ডে ১১৮ জন সাধারণ এবং ৪২ জন সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থী অংশ নিচ্ছেন।

খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) নির্বাচন

খুলনা নগরীর ৩১টি ওয়ার্ডে ২৮৯ ভোটকেন্দ্রের ১ হাজার ৭৩২টি ভোটকক্ষে ভোটগ্রহণ করা হচ্ছে। ভোটকেন্দ্র সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের জন্য মোট ২ হাজার ৩১০টি সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে।

এ নির্বাচনে ২৮৯টি ভোটকেন্দ্রে ৫ লাখ ৩৫ হাজার ৫২৯ জন তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এর মধ্যে নারী ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৬৬ হাজার ৬৯৬ এবং পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৬৮ হাজার ৮৩৩ জন। ভোট শেষে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হবে জেলা শিল্পকলা একাডেমি অডিটরিয়ামে।

খুলনায় মেয়র পদে ৫ জন এবং ৩১টি সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ১৩৬ জন এবং ১০টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ৩৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এরই মধ্যে নগরীর ১৩ ও ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে দুজন কাউন্সিলর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।

খুলনার মেয়র প্রার্থী যারা

তালুকদার আব্দুল খালেক (আওয়ামী লীগ, নৌকা প্রতীক), মো. আ. আউয়াল (ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, হাত পাখা), মো. শফিকুল ইসলাম মধু (জাতীয় পাটি, লাঙ্গল), এস এম শফিকুর রহমান (স্বতন্ত্র, টেবিল ঘড়ি) এবং এস এম সাব্বির হোসেন (জাকের পার্টি, গোলাপ ফুল)।

জাতীয় পার্টির প্রার্থীর অভিযোগ

জাতীয় পার্টির প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস গতকাল সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমাকে অনেকে বলেছেন, ভাই, ভোটটা কি দিতে পারব না? তাই আমি সরকারের কাছে, আওয়ামী লীগের কাছে, আমার দলের কাছে, সিইসির কাছে অনুরোধ করছি, তারা যেন বরিশালের মানুষের সঙ্গে অন্যায় আচরণ না করেন।’

তাপস ভোটারদের উদ্দেশে বলেন, সরকার যদি অন্যায় আচরণ করে, তাহলে রাজপথে প্রতিবাদ করব। এ ছাড়া সংবাদ সম্মেলনে তিনি কালোটাকা ছড়ানো, বহিরাগতদের নিয়ে ভোটকেন্দ্রে প্রভাব বিস্তারের পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন।’

নির্বাচন বিশ্লেষকেরা বলছেন, আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ভোটের মাঠে না থাকায় সিটি নির্বাচনে সুষ্ঠু ভোটের আসল চ্যালেঞ্জ ইসিকে মোকাবিলা করতে হচ্ছে না। সব দলের অংশগ্রহণে যদি আগামী জাতীয় নির্বাচন হয়, সেখানে ইসি আসলে কতটা শক্ত অবস্থান নিতে পারবে, সেই ধারণা এবারের সিটি নির্বাচন থেকে পাওয়া যাবে না।

কারণ হিসেবে তারা বলছেন, ২০১৮ সালে জাতীয় নির্বাচনের আগে অনুষ্ঠিত পাঁচ সিটি নির্বাচনে ইসি'র সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা ছিল পুলিশ ও প্রশাসনের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে না পারা। তখন মামলা, গ্রেপ্তার, হুমকিসহ বিভিন্নভাবে ভোটের আগেই বিএনপির নেতা-কর্মীদের মাঠছাড়া করার অভিযোগ উঠেছিল। বিএনপি এবার সিটি নির্বাচনে নেই, ফলে ইসিকেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার পরীক্ষায় পড়তে হয়নি। তবুও গাজীপুরের মতো স্বচ্ছ নির্বাচন আশা করছেন সবাই।

 




পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top