শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

গত ৫ বছরের তথ্য

হারিয়ে যেতে বসেছে মাদারীপুরের ঐতিহ্যবাহী খেজুর গাছ, রস ও গুড়

মাদারীপুর থেকে | প্রকাশিত: ১৯ জানুয়ারী ২০২১, ০১:২৯

খেজুর গুড়

খেজুর রস, খেজুর গুড়, দক্ষিণের দ্বার মাদারীপুর। খেজুরের রস ও গুড় আদিকাল থেকেই মাদারীপুরের ঐতিহ্য হয়ে রয়েছে। গত ৫ বছরের তথ্য মতে হারিয়ে যেতে বসেছে মাদারীপুরের ঐতিহ্যবাহী এই খেজুরের রস ও গুড়।

বাণিজ্যিকভাবে অন্য অঞ্চলে রপ্তানি না হলেও রাজধানীসহ দেশ- বিদেশে স্বজনদের নিকট পাঠানো হয় এ গুড়। তবে আগের মত গাছ ও রস না থাকায় চড়া দামেই বিক্রি হয় রস ও গুড়। খাটি গুড় পেতে দামের দিকে নজর দেন না ক্রেতারা। আর কিছু অসাধু ব্যবসায়ীও এই সুযোগে বেশী লাভের আসায় চিনি মিশিয়ে গুড় তৈরি করছে। তবে মাদারীপুরের এই খেজুরের গুড়ের ঐতিহ্য যাতে হারিয়ে না যায় সেজন্যই জেলা প্রশাসন বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

সকাল হওয়ার আগেই তাপালে রস ঠেলে আগুনের আঁচে ধীরে ধীরে সোনালি, কমলা অবশেষ রক্তিম তার রং। তখন তার কয়েকটি নামে গুড় তৈরি করা হয়। যেমন ঝোলা গুড়, পাটালি গুড়, খানডা গুড়, নলের গুড়। খুব সকালে গাছ থেকে রস নামিয়ে সেই রস জ্বালিয়ে তৈরি করা হয় সুস্বাদু গুড়। বাজারে দেখা যায় গুড়ের ক্রেতা বিক্রেতার ভিড়। তবে খাটি গুড় পাবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কিত থাকে বেশীরভাগ ক্রেতারা। শীত কাল এলেই মাদারীপুরের খেজুর রস ও গুড়ের ব্যাপক চাহিদা দেখা যায়।

স্বজনদের নিকট গুড় পাঠানো, মেয়ে জামাই- আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে নিমন্ত্রণ করে বিভিন্ন পিঠা-পায়েস তৈরি করে খাওয়ানোর ধুম পড়ে এ অঞ্চলে। বছরের বাকি সময় এখানে আপনজনেরা বেড়াতে না আসলেও শীতের মৌসুমে খেজুর রস ও গুড়ের স্বাদ গ্রহণ করতে ছুটে আসেন এখানে। তবে আগের মত খেজুর গাছ না থাকায় অনেকেই খেজুর গাছের চাষ ও রস সংগ্রহ বাদ দিয়ে দিয়েছে। তাছাড়া এই গাছ বিলপ্তির কারণ হিসাবে বলা হয় বিভিন্ন ইট ভাটা জ্বালানী হিসাবের এর ব্যবহার এবং মেহগনি ও রেন্ডি গাছের জন্য গাছে রস না হয়ে অল্পদিনেই মরে যায়।

২০১৫-১৬ অর্থ বছরে খেজুর গাছের জমির পরিমাণ ছিল ৫০ হেক্টর, গাছের সংখ্যা ছিল ৬৪৮০০, গাছির সংখ্যা ৫১৫ জন, খেজুর গুড় উৎপাদন ছিল ২৪০ মে.টন, সম্ভাব্য গুড়ের চাহিদা ছিল ৬২৩ মে.টন। গত ৫বছরে জমির পরিমাণ, গাছের পরিমাণ, গাছি/ শেয়ালীর সংখ্যা, খেজুর গুড় উৎপাদন ও সম্ভাব্য গুড়ের চাহিদা সবই কমে অর্ধেক হয়ে গেছে-২০১৯-২০ অর্থ বছরে জমির পরিমাণ ছিল ৩৪ হেক্টর, গাছের সংখ্যা ৪০৭০০, গাছের সংখ্যা ছিল ১২,২১০, গাছি/শেয়ালীর সংখ্যা ৩০৬ জন, খেজুর গুড় উৎপাদন ছিল ১৮৩ মে.টন,সম্ভাব্য গুড়ের চাহিদা ছিল ৬৩০ মে.টন।

মস্তফাপুরের গুড় ব্যবসায়ী আজিজুল জানান, আমাদের কাছে চাষীরা যেভাবে গুড় তৈরি করে নিয়ে আসে সেভাবেই বিক্রি করি। তবে আমরা চাই একটু ভাল গুড় বিক্রি করতে। অনেক সময় ক্রেতারা কম দামে গুড় চায় তাই ক্রেতার চাহিদা মেটানো জন্য গুড়ে ভেজাল মিশানো হয় না। তবে কিছু গুড়ে চিনি মিশানো হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।

মাদারীপুর এক ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান জানান, গাছ ও জ্বালানীর অভাবে এই খেজুর গুড় বিলুপ্তির পথে এজন্য সরকারিভাবে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত।’

মাদারীপুর জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি ইয়াকুব খান শিশির বলেন, মাদারীপুরের ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য নতুন খেজুর গাছ রোপণ ও এখনো যে গাছগুলো আছে সেগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য ব্যক্তিগত ও সরকারী উদ্যোগ নেয়া দরকার। আমরা চাই আমাদের এ ঐতিহ্য যেন হারিয়ে না যায়।

মাদারীপুর জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন জানান, খেজুর গুড়ের মান ভাল করার জন্য আমরা গুড় প্রস্তুতকারীদের সাথে আলোচনা করেছি। আর খেজুর গাছের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য হর্টিকালচার সেন্টারকে ১০ হাজার চারা গাছের অর্ডার দিয়েছি। আমরা মাদারীপুরের খেজুর গুড়ের ঐতিহ্য রক্ষায় আপ্রাণ চেষ্টা করবো।

সাবেক নৌ পরিবহন মন্ত্রী, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খান এমপি বলেন, মাদারীপুরের ঐতিহ্য খেজুর রস ও গুড় । এ ঐতিহ্য রক্ষার জন্য আমরা কাজ করছি। যাতে আমাদের এ ঐতিহ্য রক্ষা করতে পারি তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করবো। আর বিশেষ একটি প্রকল্পের জন্য আমি কৃষি মন্ত্রীর সাথে আলোচনা করবো।

এনএফ৭১/জেএস/২০২১




পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top