মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

ফেনী সদর হাসপাতাল যেন দালালদের দখলে

সুজন হাসান | প্রকাশিত: ৪ জুন ২০২৪, ১৮:১২

ছবি: সংগৃহীত

ফেনী ২৫০ শয্যা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনরা প্রতিনিয়ত পড়ছেন দালালদের খপ্পরে।

জানা যায়, ফেনী শহরের কিছু মানহীন, মেয়াদোত্তীর্ণ সিটিস্ক্যানের কমিশন ভিত্তিক দালাল কাজ করে ফেনী সদর হাসপাতাল সহ বিভিন্ন হাসপাতালে। এরা হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকেই টার্গেট করে ব্রেনস্টোক, হেড ইনজুরি সহ যাবতীয় সিটিস্ক্যানের রোগীদের। এরপর ওয়ার্ড পর্যন্ত পিছু নেয়। হাসপাতালের কিছু ডিএমএফ প্রশিক্ষন (ইন্টার্নিং) ও নার্স-ওয়ার্ড বয়ের সহযোগিতায় রোগীদের সিটিস্ক্যান সহ আরো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে বাধ্য করা হয় হাসপাতালের বাহিরের প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে।

কম দামে সিটিস্ক্যান এবং অন্যন্য পরীক্ষা নীরিক্ষা সহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে রোগীর স্বজনদের নিয়ে যাওয়া হয় নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানে, এর মধ্যে যেসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, আলকেমী হাসপাতালের সিটিস্ক্যান, ফেনী সিটিস্ক্যান, লেবএইড ডায়াগনস্টিক সহ আরো কিছু প্রতিষ্ঠান। সেখানে আদায় করা হয় নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে আরো বেশি টাকা।

এর ফলে একদিকে রোগী ও তাদের স্বজনরা যেমন হয়রানির শিকার ও সর্বস্বান্ত হচ্ছেন, অন্যদিকে ভুল চিকিৎসার কারণে রোগীর অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে। এ অবস্থায় হাসপাতালগুলোকে দালালমুক্ত করা জরুরি হয়ে পড়েছে। দালালদের কঠোরভাবে প্রতিরোধ করতে হবে। এ উদ্দেশ্যে হাসপাতালগুলোতে ঘন ঘন অভিযান চালানো উচিত বলে মনে করি আমরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, চিকিৎসকের প্রতিটি কক্ষের সামনে রোগীর চেয়ে বেশী সিটিস্ক্যান ও ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের উপস্থিতি। প্রতি সপ্তাহে শনি ও মঙ্গলবার ডাক্তার সাক্ষাত নির্ধারন থাকলেও নিয়ম মানছে না কোন কোম্পানির প্রতিনিধি। ডাক্তার দেখিয়ে রোগী বের হলেই তার ব্যবস্থাপত্র নিয়ে চলে টানা হেঁচড়া। অনেক সময় দেওয়া হয় হুমকি। এতে ভয়-ভোগান্তি দুটোই পোহাতে হয় সেবাগ্রহীতাদের।

বর্তমানে ফেনী ২৫০ শয্যা সদর হাসপাতালে রোগীর চাপ অন্যান্য সময়ের চেয়ে বেশি। তাই প্রতিটি বিভাগের সামনে অপেক্ষা করে থাকে দালালরা, সঙ্গে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি ও। জরুরী বিভাগের সামনে, হাসপাতালের মেইন গেইট, বহির্বিভাগের মেডিসিন ও সার্জারি বিভাগের সামনে সবচেয়ে বেশি সিটিস্ক্যান দালাল ও প্রতিনিধি দেখা যায়।

আরো জানা যায়, দালালরা কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে সিটিস্ক্যানের রোগী ছাড়াও বিভিন্ন রোগীদের ভিন্ন ভিন্ন অসুখের জন্য ভর্তি বাণিজ্য, অপারেশন, ওষুধ কেনাসহ প্রতারণা করে থাকে। এ ছাড়া সরকারি হাসপাতালে না নিয়ে রোগীদের বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়ার অভিযোগও আছে তাদের বিরুদ্ধে।

এছাড়াও হাসপাতালের চিকিৎসকদের উৎকোচ দেওয়ার অভিযোগও আছে ব্যাপক। সরেজমিনে হাসপাতালের অবস্থা পর্যবেক্ষণের সময়, আলকেমী হাসপাতালের দুই জন, ফেনী সিটি স্ক্যানের ১ জনের সাথে দেখা মিলে। কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই, হাসপাতালে সাংবাদিকের উপস্থিতি জানতে পেরে দৌড়ে পালিয়ে যান।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, প্রতিষ্ঠানকে দালাল ও কোম্পানির প্রতিনিধিমুক্ত করতে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তার একটি ‘অফিস আদেশ’। এতে পরিষ্কারভাবে লেখা- সকল পর্যায়ে কর্মরত ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের সপ্তাহে, শনিবার ও মঙ্গলবার দুপুর ১ টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত হাসপাতালে ডাক্তারগন কোম্পানির প্রতিনিধিদের সাক্ষাৎ গ্রহণ করবেন। এছাড়া সপ্তাহের অন্যকোনদিন কোম্পানির প্রতিনিধিরা হাসপাতাল প্রাঙ্গনে ঘোরাঘুরি করতে পারবেনা। অথচ এসব নিয়ম কানুন থোড়াই কেয়ার করেন না দালাল ও ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা।




পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top