চরফ্যাশন হাসপাতাল দালাল ও ঔষধ কোম্পানী প্রতিনিধিদের কাছে জিম্মি
ভোলা থেকে | প্রকাশিত: ২ মার্চ ২০২১, ১৮:৫২
বর্তমানে নিরাপত্তার চরম ঝুঁকিতে চরফ্যাশন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং হাসপাতাল রোড। দিনে দালালদের আর মধ্যরাতে নেশাগ্রস্ত মাদকসেবীদের নিয়ে চরফ্যাশন সরকারি বেসরকারি হাসপাতালের ডাক্তার, স্বাস্থ্য কর্মী ও সাধারণ রুগীরা খুব ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছেন দিনদিন।
অনিরাপদ হয়ে উঠছেন আগামী দিনের পথচলা। এখনই যদি লাগাম টেনে না ধরা হয়, তাহলে সামনের দিনগুলো আরও ভয়াবহ খারাপ পরিস্থিতি হবে বলে ধারনা করছেন চরফ্যাশনের সচেতন মহল।
ফাস্ট কেয়ার হাসপাতালের এডমিনও ক্লিনিকের মালিক মিল্লাত এলাহি বলেন দালাল নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নাই এ ব্যাপারে সবাই আগে থেকেই বেশ ভালোভাবে অবগত আছেন। নতুন ভয়ংকর যে পরিস্থিতি লক্ষ করলাম সেটা হলও মাঝরাতে নেশাগ্রস্ত মাতাল মাদকসেবীদের উৎপাত যা সবাইকে নিরাপত্তার চরম ঝুঁকিতে ফেলেছেন।
হাসপাতালে একজন প্রসূতি মায়ের সন্তান ডেলিভারি হয়, নবজাতক শিশুটি অসুস্থ হওয়ায় রাত ১২টায় আমাদের সরকারি হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডাঃ সুমিত্রা মজুমদার ম্যাডামকে কল করে আমাদের ক্লিনিকে ইমার্জেন্সী আনা হয়। তিনি নবজাতক শিশুটি দেখে তার জরুরী চিকিৎসার জন্যে দ্রুত বরিশালে পাঠানোর পরামর্শ দেন।
আমি সাথে সাথে দ্রুত কল দিয়ে এ্যাম্বুলেন্স আনলাম। আলিফ এ্যাম্বুলেন্সের ড্রাইভার সাহাবুদ্দিন আমাদের ক্লিনিকের নিচে এসে আমাকে কয়েকবার কল দিলো, আমি কল রিসিভ করিনি কারণ আমি মনে করেছি ও নিচে এসেছে রুগী যেন পাঠাই তাই হয়তো কল করে কিন্তু তা না,ও হঠাৎ দৌড়ে আমার কাছে এসে বললও তার সাথে একজন মাদকসেবী নিচে ধস্তাধস্তি করেন এবং ওকে নাকি খুব জোড় করতেছিলো তাকে নিয়ে ভোলায় যেতে সাহাবুদ্দিন ভয় পেয়ে তাই আমাকে কল করছিলো, এখনও সে এ্যাম্বুলেন্সের কাছে দাঁড়িয়ে আছে তাই ও ভয়ে আমার কাছে দৌড়ে ছুটে এসেছেন।
তিনি বলেন,আমরা কয়েকজন মিলে নবজাতক শিশুটি’কে ক্লিনিক থেকে নিয়ে নামলাম এ্যাম্বুলেন্সে তুলে দিতে,এ্যাম্বুলেন্স এর কাছে গিয়ে দেখি আমাদের খুবই পরিচিত একজন আলীবাবা গাড়ীর পাশে দাঁড়িয়ে আবোল তাবোল কথা বলে যাচ্ছেন। আমি বুঝতে পেরেছি ভদ্রলোক নেশাগ্রস্ত মাদকসেবী তাই এ্যাম্বুলেন্সে শিশুটি তুলে দিতে মনযোগী ছিলাম।
আলীবাবা যখন বুঝতে পারলো এ্যাম্বুলেন্সটি বরিশালে যাবে তখন সে ড্রাইভার সাহাবুদ্দিনের উপরে খুব রেগে গেলেন এবং বললও সে ভোলা যাবে তাকে না নিয়ে কেন রুগী নিয়ে বরিশালে যাচ্ছেন? রাত তখন প্রায় ১টা বাজে। আমার সাথে ছিলও শওকত সাহেব, ক্লিনিকের ম্যানেজার আল-আমিন ও রুগীর কয়েকজন স্বজন। আলীবাবার উল্টাপাল্টা কথা শুনে মেজাজ চরম খারাপ হলেও পরিস্থিতির কারনে স্বাভাবিক ভাবে এ্যাম্বুলেন্সটাকে বিদায় করলাম। অফিস থেকে বের হয়ে বাসায় যাওয়ার সময় দেখি আলীবাবা তখনও সেবা ডায়াগনস্টিকের সামনে রাস্তার মাঝখানে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে ভাষণ দিচ্ছেন। আমি বাসায় ঢুকেই আগে ক্লিনিকে কল করে বললাম আগে নিচের গেটে দ্রুত তালা লাগাতে। এরকম হয়তো আরও অনেককে তিনি ডিস্টার্ব করেছে, আলীবাবা চরফ্যাশন এর নামীদামী লোকজনদের আত্মীয় স্বজন তাই নাম পরিচয় প্রকাশ করতে পারলামনা।
আমি বাসায় গিয়ে শোয়ার পরে খুব টেনশনে ঘুমাতে পারছিলামনা তার কারণ রাতে প্রসূতির ডেলিভারির পরে আমাদের গাইনী চিকিৎসক ডাঃ সাফিয়া তানভীর অনেক রাতে বাসায় গেলেন, আবার সুমিত্রা ম্যাডামও অনেক রাতে ক্লিনিকে আসলেন এরপর আমার ক্লিনিক এর একজন নার্স ডিউটি শেষে সবার পরে বাসায় গেল এরা সবাই হাসপাতাল রোড দিয়েই চলাচল করেন। যদি এই নেশাগ্রস্ত মাতাল মাদকসেবী তাদেরকে কোন আক্রমণ করতো ? কোথায় পাবে তারা নিরাপত্তা ?
আমাদের সরকারি হাসপাতাল এবং হাসপাতাল রোডে দিনরাত কত অসহায় রুগী এবং তাদের স্বজনদেরকে আসা যাওয়া করতে হয় তার কোন হিসাব নেই। আমি আমাদের নব-নির্বাচিত মেয়র মোরশেদ ভাইয়ের সু-দৃষ্টি কামনা করছি । আমাদের ডাক্তার/নার্স সহ সকল স্বাস্থ্য কর্মী দিবারাত্রি মানুষের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন,তাই তাদের নিরাপত্তা খুবই জরুরি।
বাহিরের বিভিন্ন জেলার লোকজন আমাদের এ সেক্টরে কাজ করে, তাদের কাছে কিন্তু আমরা খাটো হই কিছু কুলাঙ্গার অজাত মানুষের জন্যে। আমরা আমাদের প্রিয় শহর চরফ্যাশনের ভাবমূর্তি নষ্ট হতে দিতে পারিনা।
এনএফ৭১/জেএস/২০২১
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।