সাতক্ষীরায়

নিঃসন্তান দম্পতির সাথে বৃদ্ধি পাচ্ছে কুড়িয়ে পাওয়া সন্তানের সংখ্যা

সাতক্ষীরা থেকে | প্রকাশিত: ১৫ মার্চ ২০২১, ২২:০৯

ফাইল ছবি

সন্তান ধারনে শারীরিকভাবে অক্ষম দম্পতির সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে সাতক্ষীরায়। বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসা নিয়েও সুফল না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়ছেন তারা। এর ফলে পারিবারিক ও সামাজিক নানা সংকটে পড়ছেন এসব দম্পতি।

অপরদিকে, পরকীয়া ও মানসিক ভারসাম্যহীন নারীদের জন্ম দেওয়া অবৈধ সন্তানের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে এ জেলায়। অবৈধভাবে জন্মলাভ করা শিশু সন্তানদের রাস্তাঘাটে ফেলে রাখার ঘটনাও ঘটছে প্রায়ই।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সন্তান না হওয়ায় স্বামী স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্যের সৃষ্টি হচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে স্বামী স্ত্রীর বিচ্ছেদ ঘটছে। প্রথম স্ত্রীর অনুমতি না নিয়ে দ্বিতীয় বিয়ের ঘটনা ঘটছে। স্ত্রী স্বামীকে ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। অপরদিকে স্বামী ও শুশুর শাশুড়ির নির্যাতনের মুখে স্বামীর ঘর থেকে বিতাড়িত হচ্ছেন স্ত্রী। তারা স্বভাব চরিত্রগত দুর্নামের শিকার হচ্ছেন। পিত্রালয়ে পুনরায় আশ্রয় হলেও এসব নারীর জীবনে নেমে আসছে নানা ধরনের সামাজিক সমস্যা। কোনো কোনো স্বামী অথবা স্ত্রী পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ছেন। পরবর্তীতে আত্মহত্যা, হত্যা অথবা অস্বাভাবিক মৃত্যুর মতো বেদনাদায়ক পরিনতিও ঘটছে।

এদিকে, পরকীয়া ও অন্যান্য কারণে সাতক্ষীরায় জন্ম নিচ্ছে সন্তান। মানসিক ভারসাম্যহীন নারীরাও জন্ম দিচ্ছেন অবৈধ সন্তানের। জেলাব্যাপী এসব ঘটনা এখন সচরাচর ঘটছে। অবৈধভাবে জন্মলাভ করা শিশু সন্তানদের রাস্তাঘাটে ফেলে রাখার ঘটনাও ঘটছে প্রায়ই। নি:সন্তান দম্পতিরা এসব শিশু দত্তক নিতে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। তারা পারিবারিক সম্পত্তি রক্ষায় এসব সন্তানকে আইনগতভাবে গ্রহন করে লালন পালন করতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
জেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসার রওশনারা জামান জানান, সাতক্ষীরা জেলায় চার লাখ ৪৩ হাজার সক্ষম দম্পতি রয়েছে। তবে সন্তান ধারনে অক্ষম দম্পতির কোনো পরিসংখ্যান তার কাছে নেই।

বেসরকারি সংস্থা স্বদেশ পরিচালক মাধব চন্দ্র দত্ত জানান, সন্তান জন্মদানে অক্ষম হওয়ায় নির্যাতনের শিকার হয়ে অনেক নারী আইনের আশ্রয় নিয়েছেন। তার সংস্থার কাছে বিচার চেয়ে আবেদন করেছেন শতাধিক নারী।

তিনি বলেন, বিষয়টি সামাজিকভাবে নিষ্পত্তির লক্ষ্যে তাদের নিয়ে সালিশ বৈঠক চলছে। অনেকগুলি ঘটনার নিষ্পত্তি হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। এ দিকে পরকীয়ার জেরে ও অন্যান্য কারণে প্রাপ্ত শিশু সন্তানকে দত্তক নিতে আগ্রহী হয়ে উঠছেন অক্ষম দম্পতিরা।

জেলা সমাজ সেবা অফিসের প্রবেশন অফিসার সুমনা শারমিন জানান, গত এক বছরের ব্যবধানে সাতক্ষীরায় চারটি শিশু সন্তান কুড়িয়ে পাওয়া গেছে। এর একটি ছিল কালিগঞ্জে গাছে বাজার ব্যাগে ঝুলন্ত অবস্থায়। একটি ছিল কালিগঞ্জ হাসপাতালে জন্ম নেওয়া। এছাড়া সম্প্রতি শ্যামনগরে একটি কার্লভার্টের ওপর একটি ব্যাগে রেখে যাওয়া শিশু সন্তান।

মানসিক ভারসাম্যহীন এক নারীর গর্ভে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে জন্ম নেওয়া একটি শিশুকে দত্তক দিতে না পেরে তাকে খুলনা বিভাগীয় বেবী হোমে রাখা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী এসব শিশুর প্রাথমিক তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব উপজেলা নির্বাহী অফিসারের। উপজেলা শিশু কল্যাণ বোর্ডের সভাপতি হিসাবে তিনি দত্তক গ্রহনের জন্য প্রাপ্ত আবেদনগুলি জেলা শিশু আদালতে পাঠিয়ে দেন। আদালত যাচাই বাছাই করে শিশুটিকে যথাযথ যত্ন সহকারে লালন পালন এবং শিক্ষিত করে তোলার পাশাপাশি তাকে সহায় সম্পত্তির অংশীদার করতে আগ্রহীদের কাছে দত্তক হিসেবে হস্তান্তর করেন।
সাতক্ষীরার শিশু আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ শেখ মফিজুর রহমান ইতোমধ্যে এধরনের বেশ কয়েকটি আবেদন সফল ভাবে নিষ্পত্তি করেছেন। ওই আদালতে এ ধরনের আবেদন আসছে একের পর এক।
সুমনা শারমিন আরও জানান, সম্প্রতি শ্যামনগরে কার্লভার্টের ওপর একটি ব্যাগে রেখে দেওয়া শিশুটিকে দত্তক পেতে এরই মধ্যে ২৩ দম্পতি আবেদন করেছেন।

শ্যামনগরের বড় কুপোট গ্রামের বাসিন্দা পোড়াকাটলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ভবসিন্দু কুমার গায়েন ও তার স্ত্রী ছবুরন্নেসা গার্লস হাইস্কুলের শিক্ষক বিশাখা রাণী জানান, শিশুটিকে পেতে তারাও আবেদন করেছেন। ৩০ বছরের বৈবাহিক জীবনে তারা কোনো সন্তানের মুখ দেখতে পারেন নি জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতের ব্যাঙ্গালুরু ও কলকাতায় চিকিৎসা নিয়েও কোনো সন্তান ধারন করতে পারেননি স্ত্রী বিশাখা।

তিনি আরও জানান, সন্তান না থাকায় মানসিক যন্ত্রণার পাশাপাশি সামাজিক, পারিবারিক ও সহায় সম্পত্তি নিয়ে তিনি সংকটে রয়েছেন। অনেকের মতো আমিও শিশু আদালতের কাছে আবেদন করেছি। একটি সুফল পাবার অপেক্ষায় রয়েছি।

এনএফ৭১/জেএস/২০২১




পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top