মধ্যপাড়া পাথর খনি টানা ৩য় বারের মতো লাভের মুখ দেখছে
পার্বতীপুর থেকে | প্রকাশিত: ২০ মার্চ ২০২১, ০৩:৫৯
দেশের একমাত্র উৎপাদনশীল দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার মধ্যপাড়া পাথর খনি গত তিন বছর থেকে টানা লাভের মুখ দেখছে। ফলে প্রফিট বোনাসও পাচ্ছেন খনির সকল কর্মকর্তা কর্মচারী।
খনি সুত্রে জানা গেছে, দেশের একমাত্র উৎপাদনশীল মধ্যপাড়া পাথর খনিটি গত ২০০৭ সালে পাথর ২০ মে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বাণিজ্যিক ভাবে পাথর উৎপাদন শুরু করলেও, খনির তিন শিফটে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী পাথর উত্তোলন করতে পারেনি। ফলে দেশে চাহিদা অনুযায়ী পাথর বিক্রি করাও সম্ভব হয়নি।
তাই খুড়িয়ে চলা এই পাথর খনিটি গত প্রায় ৭ বছরে এক শত কোটি টাকার উপরে লোকসানের মুখে পড়ে বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। দেশের অর্থনীতিতে বোঝা হয়ে দাড়ায় উন্নত মানের এই শিলা খনিটি। এতে করে অনিশ্চিত হয়ে পড়ে দেশের একমাত্র উৎপাদনশীল সম্ভাবনাময় মধ্যপাড়া পাথর খনিটির ভবিষৎ।
খনিটিকে সচল রাখতে বর্তমান সরকার ২০১৩ সালে ২ সেপ্টেম্বর পাথর খনির, ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন, উৎপাদন ও রক্ষনাবেক্ষনার চুক্তি করে দেশীয় একমাত্র মাইনিং কোম্পানী এবং বেলারুশ ভিক্তিক কোম্পানীর সাথে যৌথ ভাবে গঠিত কনসোর্টিয়াম জার্মানিয়া- ট্রেস্ট কনসোর্টিয়াম (জিটিসি) এর সাথে। পাথর খনিটির দায়িত্ব নেয়ার পর নানা প্রতিকুলতা পেরিয়ে জিটিসি পাথর উৎপাদন এবং খনির উন্নয়নকে গুরুত্ব দিয়ে তিন শিপ্টে পাথর উত্তোলন করে খনির উৎপাদন ইতিহাসে নতুন রেকর্ড তৈরী করে। ফলে খনিটি গত তিন বছর থেকে লাভের মুখ দেখতে শুরু করেছে।
জানা যায়, করোনা প্রাদুর্ভাবের কারনে গত ২০২০ সালের ২৬ মার্চ থেকে বন্ধ থাকার পর, ওই বছরের আগষ্ট মাস থেকে অদ্যাবদী যে পরিমানে পাথর উত্তোলন করেছে যা প্রতিদিনের উৎপাদন ৫ হাজার টনের অধিক। এছাড়া গত ২০১৮-২০১৯ ও ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরেও খনিটি লাভ করেছে। গত ২০১৯-২০ অর্থ বছরে করোনার কারনে প্রায় তিন মাস বন্ধ থাকার পরেও ০৮ লাখ ২৩ হাজার ৯৫৯ মে,টন পাথর উৎপাদন হয়। এই সময়ে পাথর বিক্রি হয় প্রায় ৮ লাখ ৬৫ হাজার টন পাথর। এ থেকে মুনাফা হয়েছে প্রায় ২১ কোটি টাকা। গত ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে ৭ লাখ ৩১ হাজার ৫ শত মেট্রিক টন পাথর বিক্রি করে মুনাফা হয়েছে ৭ কোটি ২৬ লাখ টাকা। শুধুমাত্র গত বছরের এপ্রিল থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত করোনাকালীন সমেয়েও ৯ লাখ ১ হাজার ৫ মত মেট্রিক টন পাথর বিক্রি করে রাজস্ব আয় হয়েছে প্রায় ২২৫ কোটি টাকা।
খনির কর্তৃপক্ষ জানান, সারা বিশ্বে মাটির উপরিভাগ থেকে পাথর আহরণ করা হলেও, বিশ্বজুড়ে একমাত্র মাধ্যপাড়া পাথর খনি, এখানে ভূ-গর্ভের তলদেশ থেকে আগ্নোগীরী শীলা উৎপাদন করা হয়। এ শীলা অন্য যে কোন শীলা থেকে অনেক শক্তিশালী ও উন্নত, এই কারনে তিনি দেশের চলমান মেগা প্রকল্পে মধ্যপাড়ার শীলা ব্যবহার করার আহবান জানান।
জিটিসি সুত্রে জানা গেছে, বর্তমানে খনিতে অর্ধ শতাধিক বিদেশী খনি বিশেষজ্ঞ, দেশী প্রকৌশলী সহ প্রায় ২ শত কর্মচারী কর্মকর্তা এবং সাড়ে ৭ শত শ্রমিক দিন-রাত তিন শিফটে কাজ করছেন। জিটিসি দৈনিক গড়ে ৫ হাজার মেট্রিক টনের অধিক পাথর উত্তোলন করে পাথর খনির উৎপান ইতিহাসে নয়া রেকর্ড সৃষ্টি করেছে।
এদিকে খনিটিতে প্রতিদিন পাথর বহন ও ক্রেতাদের পদচারণায় মুখোরিত হয়ে উঠেছে খনি এলাকা। গড়ে উঠেছে নতুন নতুন ব্যবস্যা প্রতিষ্ঠান দোকান পাট। এছাড়া দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন শত শত ট্রাক পাথর নেয়ার জন্য খনিতে আসে, সেখানে পাথর লোড আনলোড করার কাজে নিয়োজিত রয়েছে কয়েক'শ শ্রমিক, এতে করে সেখানকার অর্থনীতি ও জীবন-যাত্রার মান উন্নয়ন বৃদ্ধি পেয়েছে।
এলাকাবাসীর প্রত্যাশা দেশের এই সম্ভাবনাময় খনিটির উৎপাদনের চাকা সচল রাখা। তারা বলেন এই খনি সচল থাকলে তাদের জিবিকা ও অর্থনীতি সচল থাকবে।
এনএফ৭১/জেএস/২০২১
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।