উপজেলা কৃষি অফিসের অভিনব উদ্যোগে
ফকিরহাটে বার্ষিক ২৩হাজার ৪৪৮মে.টন ফল উৎপাদন!
ফকিরহাট থেকে | প্রকাশিত: ২৮ মার্চ ২০২১, ২১:৫৯
বৈশ্বিক মহামারী করোনার থাবায় সব স্তব্ধ হলেও থেমে থাকেনি বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলা কৃষি অফিসের কর্মযজ্ঞ! উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার নেতৃত্বে আর কৃষকদের পরিশ্রমে লক্ষ্য মাত্রার অধিক বিভিন্ন প্রকার ফলের উৎপাদন হয়েছে। এতে কৃষকরা যেমন লাভবান হয়েছেন, তেমনি মৌসুমি ফল এলাকার চাহিদা মিটিয়ে সরবরাহ করা গেছে রাজধানীসহ অন্য জেলাগুলোতে।
করোনাকালীন কৃষিনির্ভর অর্থনীতি টিকিয়ে রাখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুশাসন অনুযায়ী ফকিরহাট উপজেলা চেয়ারম্যান স্বপন দাশের নেতৃত্বে ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. তানভীর রহমানের তত্ত্বাবধানে কৃষি বান্ধব বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। আর এর সফল বাস্তবায়নে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. নাছরুল মিল্লাত বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
তিনি ফকিরহাটের ৮ ইউনিয়নের ১ হাজার ৭২০ হেক্টর জমিতে আবাদকৃত ফলের পরিচর্যা, রক্ষণাবেক্ষণ, বীজ ও সার প্রদানের ব্যবস্থা করে কৃষকদের নানা রকম পরামর্শ প্রদান করেন। নিয়মিত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কীটনাশকের মাত্রা ও রাসায়নিক সারের অযাচিত ব্যবহার রোধের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। জৈব সার ও কীটনাশক ব্যবহারকে উৎসাহিত করতে গড়ে তোলেন অর্গানিক পেস্টিসাইড গ্যালারী। ফলে কৃষকদের হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দিয়ে নিরাপদ ফল উৎপাদনের কারণে কৃষক ও ক্রেতা উভয়ই লাভবান হয়েছেন। তার এ অভিনব উদ্যোগের ফলে ফকিরহাট উপজেলায় গত অর্থবছরে ২৩ হাজার ৪৪৮ মে. টনের অধিক নিরাপদ ফল উৎপাদন হয়েছে। এর মধ্যে আম ৪ হাজার ৩০০ মে. টন, কাঁঠাল ২ হাজার মে. টন, লিচু ১৪০ মে. টন, কলা ২ হাজার ৫০০ মে. টন, কমলা ও মাল্টা ২০ মে. টন, পেয়ারা ১ হাজার ২০০ মে. টন, আমড়া ১ হাজার ৮০ মে. টন, সফেদা ৫০০ মে. টন, জামরুল ৩২০ মে. টন, আতা ১৫ মে. টন, কুল ২৪০ মে. টন, তরমুজ ২৫ মে.টন। এছাড়া অন্যান্য ফলের মধ্যে আছে ডালিম, আনারস, জলপাই, আমলকী, বাঙ্গী, বেল, করমচাসহ বিভিন্ন মৌসুমি ফল।
উপজেলা কৃষি অফিস থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়া হুছলা এলাকার কৃষক আহম্মদ আলী রোববার (২৮ মার্চ) আমাদের নতুন সময়কে বলেন, ‘কৃষি অফিস থেকে হাতে কলমে প্রশিক্ষণ, বীজ ও সার পেয়ে আমরা লাভবান হই। গত বছর আম চাষের সময় স্যারদের পরামর্শ মেনে নিরাপদ মাত্রায় ছত্রাকনাশক ও পোকানাশক ব্যবহার করেছি। ফলে ভালো আম উৎপাদন হয়েছে; দামও বেশি পেয়েছিলাম। এবছরও ভালো মুকুল ধরেছে। নিয়মিত কৃষি অফিসে যোগাযোগ রাখছি।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নাছরুল মিল্লাত বলেন, “কৃষকদের হাতে কলমে প্রশিক্ষণের জন্য কৃষি অফিসে বীজ সংগ্রহশালা, রোগবালাই সংক্রান্ত, বালাইনাশক ও জৈব বালাইনাশক মোট চারটি গ্যালারী তৈরি করেছি। ফলে শুধু তাত্ত্বিক আলোচনার বদলে ব্যবহারিক প্রশিক্ষণে চাষিরা অধিকতর দক্ষতা অর্জন করছে এবং লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক উৎপাদন করতে সক্ষম হচ্ছেন।”
বাগেরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, “প্রতি বছর জুন জুলাই মাসে বৃষ্টিপাত ও অনুকূল আবহাওয়া এবং বৃক্ষ রোপণের মাধ্যমে আমরা ফল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করি। লক্ষ্য অর্জনে ফকিরহাট উপজেলা খুবই অগ্রগামী। বিশেষ করে বেতাগা ইউনিয়নের কৃষকরা অর্গানিক ফল উৎপাদনের মাধ্যমে নিজেরা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন, নিরাপদ খাদ্য মানুষকে প্রদান করছেন এবং পরিবেশের উপকার করছেন।
এনএফ৭১/জেএস/২০২১
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।