শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১

রূপালি গিটার থেমে গিয়েছিল চার বছর আগের এই দিনে

গানের গল্পেই লুকানো কিংবদন্তী রকস্টার আইয়ুব বাচ্চুর জীবন

রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ১৯ অক্টোবর ২০২২, ০৪:৩১

কিংবদন্তী রকস্টার আইয়ুব বাচ্চু

প্রজন্মের পর প্রজন্ম যার গান আন্দোলিত করে চলেছে সংগীতপ্রেমীদের। তিনি উপমহাদেশের কিংবদন্তী গিটারিস্ট, বাংলা সংগীত জগতের এক মহান দিকপাল ও জনপ্রিয় ব্যান্ড এলআরবির প্রতিষ্ঠাতা আইয়ুব বাচ্চু।

১৯৬২ সালের ১৬ আগস্ট চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া উপজেলার খরনা ইউনিয়নে জন্মগ্রহণ করেন এই কিংবদন্তি।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন চট্টগ্রাম কলেজ থেকে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন তিনি।

১৯৭৬ সালে চট্টগ্রামে কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে গোড়ে তোলেন ‘গোল্ডেন বয়েজ’ নামে একটি ব্যান্ড। ১৯৭৮ সালে তিনি ‘ফিলিংস’ ব্যান্ডের মাধ্যমে পথচলা শুরু করেন। নব্বইয়ের দশকে যাত্রা শুরু হয় ব্যান্ডদল 'এলআরবি'র। তারপর অন্তহীন পথচলা।

শত প্রতিকূল অবস্থার মধ্য দিয়ে সংগীতে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেন আইয়ুব বাচ্চু। পিতা-মাতার আদরের সন্তান হলেও তাঁর সংগীত চর্চায় ছিল অনেক বাধা। সংগীতপ্রেমী বাচ্চু পারিবারিক নিষেধ উপেক্ষা করেই নিজের স্বপ্ন জয় করেছেন। তবে জয়ের নেপথ্যে রয়েছে কঠিন-করুণ গল্প। ১৯৮৩ সালে মাত্র ৬০০ টাকা পকেটে নিয়ে ঢাকায় এসেছিলেন আইয়ুব বাচ্চু। কিন্তু অদম্য স্পৃহা, কঠোর পরিশ্রম ও সাধনায় তিনি অসংখ্য ভক্ত-অনুরাগীর আইয়ুব বাচ্চু হয়ে ওঠেন। দীর্ঘদিন তিনিই ছিলেন দেশীয় ব্যান্ড সংগীতের অপ্রতিদ্বন্দ্বী তারকা।

কণ্ঠ-সুর আর গিটারের মন্ত্রণায় মাতোয়ারা করে রেখেছিলেন গানপ্রেমীদের। ভূষিত হয়েছিলেন গানের ‘বস’ খেতাবে।

‘ঘুম ভাঙা শহরে’, ‘ফেরারি এ মন’, উড়াল দেব আকাশে, এখন অনেক রাত, কষ্ট পেতে ভালোবাসি, আসলে কেউ সুখী নয়, গানগুলো এলআরবিকে এনে দেয় শ্রোতাপ্রিয়তা। বাংলাদেশের রক ও হার্ডরক হিসেবে তো বটেই, এটি বাংলা ব্যান্ডের ইতিহাসের মাইলফলক হয়ে আছে।

আইয়ুব বাচ্চুর গিটার ও কণ্ঠের মূর্ছনায় ভরা ‘গতকাল রাতে’, ‘চলো বদলে যাই’, ‘রুপালি গিটার’, ‘সুখ’ গানগুলো অমরত্ব পায়।

হার্ডরক, রক অ্যান্ড রোল, সফট রক ধাঁচের গানগুলো ঘরে ঘরে বাজতে থাকে। বদলে যেতে থাকে বাংলা রক কনসার্টের ইতিহাস। ‘চলো বদলে যাই’ বলে আইয়ুব বাচ্চু বদলে ফেললেন বাংলার রকম্যানিয়া।

আইয়ুব বাচ্চু এমন এক রকস্টার, যিনি জিমি হেনড্রিক্স, জো স্যাট্রিয়ানি, স্টিভ ভাই, ডেভ গিলমোরদের ঢঙে পরিবেশন করে গেছেন বাংলাদেশের এক চাকরি প্রত্যাশী বেকারের হতাশার কথা, বড় বাবু মাস্টারদের প্রতি নিবেদন কিংবা, দেহপসারিণীর সংগ্রামের জীবনালেখ্য।

কষ্ট, বেদনা ও নিঃসঙ্গতাকে ঘিরে আবর্তিত হয় তার গান। বাচ্চু আমাদের শোনান ঘুমন্ত শহরের কাব্য। বাউলের একতারার কান্না যেন ভর করলো রূপালি গিটারে, শোনালো বুকভরা দুঃখের ক্ষতের সুর। আর, শ্রোতাদের বোধে নিয়ে আসলো এক আশ্চর্য চন্দ্রালোক।

সুখের চেয়ে বেদনার চিত্রই গিটার জাদুকরের গানে বেশি ফুটে উঠেছে। যেন গানের গল্পেই লুকানো তার জীবন। হয়তো এ কারণে তার হতাশার গানগুলো চোখ বুজেই লুফে নিয়েছে শ্রোতারা। 

রূপালি গিটার থেমে গিয়েছিল চার বছর আগের এই দিনে। বাংলা রকের জগতে তৈরি হয় এক অপূরণীয় শূন্যস্থান, সেখানে কেবলই নীল তরঙ্গ।

 

 

 

 

 

 

 

 

 




পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top