প্রধানমন্ত্রীর কাছে ৪০ বিশ্বনেতার খোলা চিঠি

রাজিউর রাহমান | প্রকাশিত: ১০ মার্চ ২০২৩, ০৩:৫৯

ড. মুহাম্মদ ইউনূস

শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি বাংলাদেশ সরকারের আচরণের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছেন ৪০ বিশ্বনেতা। মঙ্গলবার রাজনীতি, কূটনীতি, ব্যবসা, শিল্পকলা ও শিক্ষাক্ষেত্রের এসব বিশ্বনেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একটি খোলা চিঠি দিয়েছেন। চিঠিটি ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকায় পূর্ণ পাতা বিজ্ঞাপন হিসাবেও প্রকাশিত হয়েছে।

চিঠিতে সই করা বিশ্বনেতাদের মধ্যে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন, দেশটির সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট আল গোর, জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন, প্রয়াত মার্কিন সিনেটর এডওয়ার্ড এম কেনেডির ছেলে টেড কেনেডি জুনিয়রের মতো আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব।

চিঠিতে লেখা হয়েছে, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আমরা বাংলাদেশের বন্ধু হিসাবে আপনাকে লিখছি, যারা আপনার দেশের জনগণের সাহস ও উদ্ভাবনী দক্ষতার প্রশংসা করে। আপনার দেশের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা থেকেই আমরা আপনাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নাগরিকদের একজন, শান্তিতে নোবেল পুরস্কারজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মহান অবদানকে সমর্থন ও স্বীকৃতি দিতে ইতিবাচক পদক্ষেপ নিতে আপনাকে অনুরোধ জানিয়ে চিঠি লিখছি।

ড. ইউনূসের ভালো থাকা, বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে মানবিক উন্নয়নে তিনি যে অবদান রেখে চলছেন, তা অব্যাহত রাখতে পারবেন কিনা, সে বিষয়ে আমাদের গভীর উদ্বেগ রয়েছে। আমরা নিশ্চিত, আপনি জানেন যে বাংলাদেশে মুহাম্মদ ইউনূসের অবদান, বিশেষ করে অতি দরিদ্র ও সবচেয়ে বিপদাপন্ন মানুষের জন্য তার অবদান বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত ও সম্মানিত।

উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, অধ্যাপক ইউনূস ইতিহাসের সাত ব্যক্তির মধ্যে একজন, যিনি নোবেল শান্তি পুরস্কার, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেনশিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম ও কংগ্রেসনাল গোল্ড মেডেল পেয়েছেন। এই সাতজনের মধ্যে নেলসন ম্যান্ডেলা, মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র, মাদার তেরেসা ও এলি উইজেলের মতো ব্যক্তিরা আছেন।

‘তিনি ১৯৭৬ সালে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন। একে দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াই করা বিশ্ববিখ্যাত প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেন। যার ঋণগ্রহীতা ৯০ লাখ, তাঁদের ৯৭ শতাংশ নারী। প্রতিষ্ঠানটি লাখো মানুষকে দারিদ্র্য থেকে বের করে এনেছে। সারা বিশ্বের অন্যান্য ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচির জন্য একটি মডেল তৈরি করেছে।

চিঠিতে বলা হয়, মুহাম্মদ ইউনূস গ্রামীণ টেলিকম বা গ্রামীণফোন থেকে আর্থিকভাবে লাভবান হননি। বরং তিনি যেসব সংগঠন গড়ে তুলেছেন, সেগুলোর মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন কার্যক্রমে নিজেকে নিয়োজিত করেছেন। তিনি ঢাকায় সাদামাটাভাবে বসবাস করছেন। মুহাম্মদ ইউনূসের মতো একজন অনবদ্য পরিশুদ্ধ মানুষ ও তার কার্যক্রমগুলো আপনার সরকারের অন্যায় আক্রমণের শিকার হচ্ছে। বারবার হয়রানি ও তদন্তের মধ্যে পড়ছে। এমনটা দেখতে পাওয়া বেদনাদায়ক।

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, আমরা বিশ্বাস করি, সরকারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা হলো, এমন একটি পরিবেশ তৈরি করা, যেখানে চিরায়ত ও সামাজিক উদ্যোক্তারা প্রস্ফুটিত হতে পারেন।

চিঠিতে সই করা ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন: সংগীতজ্ঞ ও অধিকারকর্মী বোনো; ভার্জিন গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা স্যার রিচার্ড ব্র্যানসন; ওপেন সোসাইটি ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট লর্ড মার্ক ম্যালোচ ব্রাউন; সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন; রেজাল্টস অ্যান্ড সিভিক কারেজের প্রতিষ্ঠাতা স্যাম ডেলি-হ্যারিস; ডাল্লায়ার ইনস্টিটিউট ফর চিলড্রেন, পিস অ্যান্ড সিকিউরিটির প্রতিষ্ঠাতা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) রোমিও ডাল্লায়ার; এমেরিতা চিলড্রেন ডিফেন্স ফান্ডের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রেসিডেন্ট মারিয়ান রাইট এডেলম্যান; মেক্সিকোর সাবেক প্রেসিডেন্ট ভিসেন্ট ফক্স; সংগীতজ্ঞ পিটার গ্যাব্রিয়েল; নাসার সাবেক মহাকাশচারী রন গারান; ইউনিসেফের সাবেক উপনির্বাহী পরিচালক ও জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব কুল গৌতম; গ্লাসগো ক্যালেডিনিয়ান ইউনিভার্সিটির সাবেক উপাচার্য ও ইমেরিটাস অধ্যাপক পামেলা গিলিস; রকফেলার ফাউন্ডেশন ও ইন্টারন্যাশনাল হেরাল্ড ট্রিবিউনের সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) পিটার সি গোল্ডমার্ক জুনিয়র; অধিকারকর্মী জেন গুডাল।




পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top