আঘাতে নয়, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণেই জেসমিনের মৃত্যু

রাজিউর রাহমান | প্রকাশিত: ৩ এপ্রিল ২০২৩, ২৩:৪০

জেসমিন সুলতানা

অতিরিক্ত মানসিক চাপে মস্তিষ্কের নালী ফেটে রক্তক্ষরণের কারণেই নওগাঁর জেসমিনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন ময়না তদন্তকারী চিকিৎসক। সোমবার (৩ এপ্রিল) গণমাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. কফিল উদ্দিন এই তথ্য জানিয়েছেন। এর আগে রবিবার পুলিশের কাছে ময়না তদন্ত রিপোর্ট হস্তান্তর করা হয়।

ডা. কপিল উদ্দিন বলেন, ময়না তদন্ত রিপোর্ট পর্যালোচনা করে দেখা যায়, নির্যাতনে কিংবা শারীরিক কোনো আঘাতে জেসমিনের মৃত্যু হয়নি। তার মৃত্যু হয়েছে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারনে।

ময়না তদন্তকারী দলের প্রধান আরো জানান, জেসমিনের কপালের বাম দিকে ও ডান হাতের কনুইয়ে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তবে এ আঘাত মৃত্যুর কারণ নয়। সে প্রচন্ত মানসিক চাপে ছিল। এ কারণে মস্তিকের একটি নালী ফেটে যায়। এরপর মস্তিকে রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়।

তিনি জানান, ইতোমধ্যে তারা ময়না তদন্ত প্রতিবেদন পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছেন। তবে ময়না তদন্তের প্রতিবেদনে জেসমিনের মৃত্যুর কারণ হিসেবে কী উঠে এসেছে তা জানায়নি পুলিশ। আদালতে প্রতিবেদন পৌঁছানোর আগে ‘স্পর্শকাতর’ এই বিষয় নিয়ে কেউ কথা বলবেন না বলে জানিয়েছেন।

এরআগে, জেসমিনের মৃত্যুর পর গত ২৫ মার্চ রামেকের মর্গে তিন সদস্যের একটি মেডিক্যাল বোর্ড মরদেহের ময়না তদন্ত করে। এই বোর্ডের প্রধান ছিলেন রামেকের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. কফিল উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘ময়না তদন্ত প্রতিবেদন পুলিশকে দেওয়া হয়েছে।

রাজশাহী নগরীর রাজপাড়া থানার ওসি (তদন্ত) রুহুল আমিন বলেন, ‘আমি তদন্ত কর্মকর্তার কাছে শুনলাম যে রিপোর্ট এসেছে। রিপোর্ট কোর্টে গেলে সবাই জানতে পারবে।’

সুলতানা জেসমিন নওগাঁ সদর উপজেলার চণ্ডীপুর ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ে অফিস সহকারী পদে চাকরি করতেন। র‌্যাবের দাবি, প্রতারণার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গত ২২ মার্চ সুলতানা জেসমিনকে আটক করা হয়। আটকের পর অসুস্থ হয়ে তিনি মারা গেছেন।

তবে স্বজনদের অভিযোগ, হেফাজতে নির্যাতনের কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। মারা যাওয়া সুলতানার মামা এবং নওগাঁ পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর নাজমুল হক মন্টু বলেন, তার ভাগনি বুধবার সকালে অফিসে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হন। ওই দিন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মুক্তির মোড় থেকে একটি সাদা মাইক্রোবাসে র‌্যাবের লোকজন সুলতানাকে ধরে নিয়ে গেছে বলে মোবাইল ফোনে কল করে বিভিন্নজন তাকে জানান।

একপর্যায়ে দুপুর ১২টার দিকে তার ভাগনি সুলতানা জেসমিনের ছেলে সাহেদ হোসেন সৈকত মোবাইল ফোনে কল করে জানান, তার মাকে র‌্যাব সদস্যরা ধরে নিয়ে গেছে। এরপর মন্টু তার ভাগনির সন্ধানে থানাসহ বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেন। কিন্তু সন্ধান পাননি।

পরে বেলা ২টার দিকে সুলতানা জেসমিনের ছেলে তাকে আবার মোবাইল ফোনে কল করে জানান তার মা নওগাঁ সদর হাসপাতালে আছেন। এরপর হাসপাতালে গিয়ে জানতে পারেন তার ভাগনি সেখানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

কিন্তু ভেতরে গিয়ে ভাগনির সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করলে র‌্যাব সদস্যরা বাধা দেন বলে অভিযোগ করেন মন্টু। তবে জেসমিনকে র‌্যাবের কোন ক্যাম্প নেওয়া হয়েছিল তারা তার কিছুই জানতেন না। এর কিছুক্ষণ পর জেসমিনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার সকালে তার মৃত্যু হয়।

 

 




পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top