সহযোগিতার আশ্বাস প্রধানমন্ত্রীর
বঙ্গবাজার অগ্নিকাণ্ডে জ্বলছে রুটি-রুজির স্বপ্ন
রাজিউর রাহমান | প্রকাশিত: ৫ এপ্রিল ২০২৩, ২৩:২৮
ভয়াবহ আগুনে পুড়ে গেছে ঢাকার বঙ্গবাজার মার্কেট। সেই সাথে ঈদের স্বপ্নও পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, পুরো বাজারটিই এক রকম শেষ হয়ে গেছে। ব্যবসায়ীরদের স্বপ্ন আগুনে পুড়েছে। নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন কয়েক হাজার ব্যবসায়ী। তাদের রুটি-রুজির স্বপ্ন আগুনে জ্বলছে।
মঙ্গলবার সকাল ৬টা ১০ মিনিটে বঙ্গমার্কেটে আগুন লাগার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। তাদের ৫০টি ইউনিটের পাশাপাশি সেনাবাহিনী ও বিমানবাহিনীর দুটি দল মাঠে নামে। প্রায় সাড়ে ছয় ঘণ্টার চেষ্টায় বেলা ১২টা ৩৬ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
তবে এরই মধ্যে বঙ্গবাজার মার্কেট, মহানগর মার্কেট, আদর্শ মার্কেট ও গুলিস্তান মার্কেট পুরোপুরি পুড়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় আশপাশের আরও কয়েকটি ভবন। এনেক্সকো টাওয়ারে আগুন জ্বলতে দেখা যায় আরও কয়েক ঘণ্টা।
বহুদূর থেকেও বঙ্গবাজারের আকাশে ধোঁয়ার কুণ্ডলী উঠতে দেখা যায়। প্রায় ২২ হাজার বর্গফুট এলাকার ওপর ঠাসাঠাসি দোকানের ভিড়ে আগুন নেভাতে পেরিয়ে যায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা।
বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টারকে দেখা যায় হাতিরঝিল থেকে পানি নিয়ে বঙ্গবাজারে আগুনের ওপর ছিটাতে। সাময়িক বন্ধ রাখা হয় জাতীয় জরুরি নম্বর ৯৯৯–এর সেবা। ৯ ঘণ্টা পর তা আবার চালু করা হয়।
ফায়ার সার্ভিস জানায়, বঙ্গবাজার আদর্শ মার্কেট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। তবে কীভাবে সেখানে আগুন লাগল তা এখনও স্পষ্ট নয়। ফায়ার সার্ভিসের মোট ৬৫০ জন কর্মকর্তা–কর্মচারী আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করেন। তাদের মধ্যে ৮ জন আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। তবে কারো মৃত্যুর খবর আসেনি।
মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার এবং আশপাশের এলাকার সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখা হয় বেলা পৌনে ৩টা পর্যন্ত।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদের আগে এ ধরনের দুর্ঘটনা তাদের পথে নামিয়ে দিয়েছে। মাত্রই ঈদের বাজার শুরু হয়েছিল। ঠিক সেই মুহূর্তে এ ধরনের আগুন ব্যবসায়ীদের বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে গেল। কয়েকজন ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, সারা বছর অপেক্ষা করে থাকে এই ঈদ মৌসুমে ব্যবসা করবে বলে। কিন্তু আগুন সব শেষ করে দিল।
ক্ষতিগ্রস্ত এক ব্যবসায়ী আর্তনাদ করে বলছিলেন, ‘ভাই কিছুই নাই। ছাই আর ছাই। আমি শূন্য হয়ে গেছি, কেমন চলমু। আল্লাহ গো।’ আরেকজন কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, ‘আমি নিজেও মরে গেছি। কোথাও যামু?’
দোকান মালিক সমিতি বলছে, বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স, গুলিস্তান ইউনিট, মহানগর ইউনিট ও আদর্শ ইউনিট মিলিয়ে মোট দোকানের সংখ্যা ২ হাজার ৩৭০টি। আশপাশের বিপণিবিতান মিলিয়ে ৫ হাজারের মতো দোকান পুড়ে গেছে। এতে আনুমানিক দুই হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধানে পাঁচ সদস্যের কমিটি করেছে ফায়ার সার্ভিস। কমিটিকে ৭ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। আগুনে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা এবং ক্ষয়ক্ষতি তুলে ধরতে আট সদস্যের কমিটি গঠন করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। কমিটিকে আগামী তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
বুধবার (৫ এপ্রিল) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বঙ্গবাজারের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা অন্তত দুঃখজনক। ক্ষতিগ্রস্তদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করার চেষ্টা করা হবে। তবে এটাও দেখবার বিষয় কিছু লোক হঠাৎ করে এসে লাঠিসোঠা নিয়ে ফায়ার সার্ভিসের অফিসে হামলা করেছে। তারা ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের কাজে ব্যাহত করেছে। এদের চিহ্নিত করে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।