অনিশ্চিত ভবিষ্যতের অপেক্ষা
বঙ্গবাজারে শুধু ধ্বংসস্তূপ আর হাহাকার
রাজিউর রাহমান | প্রকাশিত: ৮ এপ্রিল ২০২৩, ১৮:৫৪
তিন দিন আগেও ক্রেতা-বিক্রেতার হাঁকডাকে যে বাজার ছিল জমজমাট, সেখানে এখন শুধু ধ্বংসস্তূপ আর হাহাকার। নতুন কাপড়ের গন্ধের বদলে সেখানে শুধুই পোড়া গন্ধ। চিরচেনা বঙ্গবাজারের এখন এই দৃশ্য। সর্বগ্রাসী আগুন কেড়ে নিয়েছে এখানের হাজার হাজার ব্যবসায়ী এবং কর্মজীবী মানুষের স্বপ্ন আর জীবন-জীবিকা।
মঙ্গলবারের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ভস্মীভূত পুরো বঙ্গবাজার এলাকার দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। চারদিকে আগুনে পোড়া ধ্বংসস্তূপ। পানিতে একাকার হয়ে আছে পোড়া কাপড়ের ছাই। পোড়াস্তূপে চলছে আহাজারি। অবশিষ্ট যদি কিছু থাকে এমন আশায় ক্ষতিগ্রস্তরা হাতড়ে বেড়াচ্ছেন পোড়াস্তূপ আর ছাই।
ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে আর্তনাদ করছিলেন ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী। বলেছিলেন, ‘আমি এখন রাস্তার ফকির, আমার এখন কিছু নাই। আমার সারা জীবনের অর্জন এখানে কাজে লাগাইছি। আর কিছু করি নাই।’
পুরান ঢাকার জয়কালী মন্দিরের পাশে পরিবার নিয়ে থাকা মোহাম্মদ আলী ঘটনার দিনই বঙ্গবাজার পুড়ে যাওয়ার কথা শুনে অজ্ঞান হয়ে পড়েন। প্রায় তিন কোটি টাকা মূল্যের গড়ে তোলা সম্পদ নিমিষেই শেষ হয়ে যাওয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তিনি।
মোহাম্মদ আলী বলেন, তার সাতটি দোকানে ১৫ জন কর্মচারী কাজ করতেন। তারাও আজ অসহায়। মালিকের একটা ব্যবস্থা হলে তারা আবার কাজ শুরু করতে পারবেন।
ব্যবসায়ী মাছুম রানা বঙ্গবাজারের ধ্বংসস্তূপ থেকে কিছু একটা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছিলেন। কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করতেই জানালেন, দোকানের সব পুড়ে গেছে। কিছুই অবশিষ্ট নেই। দোকানের বাকির খাতাটি খুঁজছেন তিনি, যদি পাওয়া যায়। ১০ থেকে ১২ লাখ টাকার মালামাল তিনি বাকিতে দিয়েছিলেন। খাতাটি পেলে হয়তো সেই পাওনা টাকা উদ্ধারের চেষ্টা করতে পারতেন।
ধ্বংসস্তূপের সামনে এসে কান্না ধরে রাখতে পারেননি ব্যবসায়ী তুষার হোসেন মোল্লা। তিনি বলেন, ‘অনেক কষ্ট করে এ পর্যন্ত এসেছি ভাই। পুরো সংসারের ভার আমার ওপর। দুই ভাই আমার সঙ্গেই কাজ করত। তিন মাস আগে ছোট বোনকে বিয়ে দিয়েছি। এখন কী করব, কিছুই বুঝতে পারছি না। এর মধ্যে একটি বেসরকারি ব্যাংক থেকে ৪০ লাখ টাকা ঋণও আছে। সামনে শুধু অন্ধকার দেখছি।’
বঙ্গবাজারের ধ্বংসস্তূপের পাশে বিলাপ করছিলেন হোসেন নামের এক ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, তার বাসা ধানমন্ডিতে। ঘটনার পর আর বাসায় যাননি। হোসেন বলেন, ‘দোকানে প্রায় ১৫ লাখ টাকার মালামাল ছিল। ঈদ উপলক্ষে আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা ধার করে দোকানে মাল তুলেছিলাম। সব পুড়ে গেছে।’
এক-একটি দোকানের সঙ্গে জড়িয়ে আছে কয়েকটি পরিবার। কবে তারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবেন সেই অনিশ্চিত ভবিষ্যতের অপেক্ষায় ব্যবসায়ী, কর্মচারী ও সংশ্লিষ্ট পরিবার।
মঙ্গলবার সকাল সোয়া ৬টায় রাজধানীর বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ড ঘটে। অগ্নিনির্বাপণে ফায়ার সার্ভিসের ৫০টি ইউনিটের পাশাপাশি সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর সদস্যরা কাজ করেছেন। বিমানবাহিনীর দুটি বেল-২১২ ও দুটি এমআই-১৭ হেলিকপ্টার পর্যবেক্ষণ মিশনও আগুন নিয়ন্ত্রণে অংশ নেয়। এ ছাড়া পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, আনসার সেখানে দায়িত্ব পালন করে। প্রায় সাড়ে ৬ ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।