একের পর এক অগ্নিকাণ্ড, দুর্ঘটনা নাকি নাশকতা ?

রাজিউর রাহমান | প্রকাশিত: ১৬ এপ্রিল ২০২৩, ২২:৪৭

ধারাবাহিক অগ্নিকাণ্ড

বঙ্গবাজার থেকে নিউ সুপারমার্কেট। মাঝখানে মাত্র ১০ দিনের ব্যবধান। একের পর এক আগুনে সর্বস্ব শেষ, স্বপ্ন পুড়ে ছাই। চারদিকে শুধু ধ্বংসস্তূপ আর হাহাকার। পোড়াস্তূপে চলছে ব্যবসায়ীদের আহাজারি। নতুন কাপড়ের গন্ধের বদলে শুধুই পোড়া গন্ধ। সর্বগ্রাসী আগুন কেড়ে নিয়েছে তাদের রুটি-রুজির স্বপ্ন।

মাত্রইতো শুরু হয়েছিল ঈদের বাজার। ঠিক সেই মুহূর্তে এ ধরনের আগুন তাদের পথে নামিয়ে দিয়েছে। ফলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষের মনে। বিশেষ করে ৪ এপ্রিল বঙ্গবাজারের অগ্নিকাণ্ড আর ১৩ এপ্রিল নবাবপুরে অগ্নিকাণ্ড মানুষকে চরম ভাবাচ্ছে। এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই ১৫ এপ্রিল ভোরে আগুন লাগে নিউ সুপার মার্কেটে।

প্রত্যেকটি ঘটনার পেছনেই নাশকতার অভিযোগ রয়েছে। আর এসব ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও চলছে তোলপাড়। ঘনঘন অগ্নিকাণ্ড নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি এসব ঘটনায় ষড়যন্ত্র বা নাশকতা আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন।

আগুনের ঘটনাগুলো বিশেষভাবে আমলে নিয়ে বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা তৎপরতা। যদিও বঙ্গবাজারের ঘটনার প্রাথমিক তদন্তে নাশকতার কোনো প্রমাণ মেলেনি। তবু জনমন থেকে দূর হচ্ছে না ‘অবিশ্বাস’।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা অবশ্য বলছেন, কেনো এত আগুন লাগছে সেটা ক্ষতিয়ে দেখতে বিশেষ ইউনিট মাঠে কাজ করছে।

এদিকে, আগুনের ঘটনায় ব্যবসায়ীরা বলছেন, নিয়মিত মার্কেটগুলোতে কয়েকদিন পর পর আগুন লাগার কারণ তারাও জানতে চান। কারণ অগ্নিকাণ্ড তাদের পথের ভিখারি বানিয়ে দিয়েছে।

নিমতলীর রাসায়নিক বোঝাই গুদামঘর, তাজরীন গার্মেন্টস, সেজান জুস কারখানা, সীতাকুণ্ডের বিএম ডিপো থেকে সীমা অক্সিজেন, হাতিমারা পাথারিয়া থেকে রাজকান্দি বন কিংবা ঢাকার বঙ্গাবাজার, একের পর এক প্রশ্নহীন আগুন। নিমিষেই অঙ্গার টাটকা জীবন, বিধ্বস্ত বাস্তুতন্ত্র, চুরমার সংসার, ভষ্ম জীবিকা, বিশৃঙ্খল পরিবার। তদন্ত হচ্ছে, বিশেষজ্ঞ কমিটি সুপারিশ করে, মামলা হয়, ক্ষতিপূরণ কিছু দেয়া হয়। কিছু ধরপাকড় চলে। দৃষ্টান্তমূলক কিছুই হয় না।

ধারাবাহিকভাবে এসব অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা শুধুই কি দুর্ঘটনা নাকি নাশকতা বিভিন্ন মহল থেকে তা খতিয়ে দেখার দাবি উঠেছে।

নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, দুর্ঘটনার পর তদন্ত কমিটি হচ্ছে। তবে সেগুলো ঠিকমতো প্রকাশিত হচ্ছে না। সঠিক কারণ মানুষ জানতে পারছে না। আগুনের উৎসটা কী, সেটা বের করা প্রয়োজন। গ্রহণযোগ্য কারণ বের করা না গেলে এসব ঘটনার পর ডালপালা মেলতে শুরু করবে। মানুষের মনেও সন্দেহ দানা বাঁধতে থাকবে।

যখন স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখা হচ্ছে তখন বঙ্গবাজার ও নিউমার্কেটের অগ্নিনিরাপত্তা বিপর্যয়ের উৎস না জানলে এ সমস্যার সমাধান হবে না। এ দুটি ঘটনা বাংলাদেশের অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর প্রয়োজনীয়তাকে আবারও তুলে ধরছে।




পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top