মার্কিন ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

রাজিউর রাহমান | প্রকাশিত: ৩ মে ২০২৩, ২০:০৯

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশে বড় বিনিয়োগ নিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মার্কিন ব্যবসায়ীদের প্রতি এ আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। মঙ্গলবার (২ মে) যুক্তরাষ্ট্রের চেম্বার অব কমার্সে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এ আহ্বান জানান। ‘যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব: স্মার্ট প্রবৃদ্ধির জন্য লক্ষ্য’ শীর্ষক এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

মার্কিন ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি, জাহাজ নির্মাণ, অটোমোবাইল, ওষুধ, হালকা ও ভারী মেশিন, রাসায়নিক, সার, তথ্যপ্রযুক্তি, সমুদ্র সম্পদ, চিকিৎসাসরঞ্জামসহ আমাদের অনেক সম্ভাবনাময় সেক্টরে বিনিয়োগ করতে পারেন। এছাড়া আরও কোন কোন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করা যায়, তার সুযোগ ও সম্ভাব্যতাও অনুসন্ধান করতে পারেন।

তিনি আরও বলেন, আমরা মনে করি যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বৃহত্তম অর্থনৈতিক এবং উন্নয়ন অংশীদার। বাণিজ্য ও বিনিয়োগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যে গভীর সম্পর্ক রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিল বন্ধুপ্রতিম দুই দেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতাকে এগিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করেন প্রধানমন্ত্রী। 

মার্কিন ব্যবসায়ীদের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। এক্ষেত্রে মার্কিন বিনিয়োগকারীদের আলাদা একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল দেয়ার প্রস্তাব করেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা দেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, ৩৯টি হাই-টেক পার্ক প্রতিষ্ঠা প্রতিষ্ঠা করছি। বিনিয়োগ নীতিতে বাংলাদেশ উদার নীতির কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। কর মওকুফ, রেমিটেন্স রয়্যালটি, প্রস্থান নীতি, লভ্যাংশ এবং মূলধন সম্পূর্ণ প্রত্যাবর্তনসহ আইন দ্বারা বিদেশি বিনিয়োগ সুরক্ষার কথাও বলেন তিনি।

তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সবচেয়ে শক্তিশালী অংশীদার হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে আমাদের একক বৃহত্তম রপ্তানি গন্তব্য, বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগের বৃহত্তম উৎস, দীর্ঘস্থায়ী উন্নয়ন অংশীদার এবং প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস।

সরকারপ্রধান বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এই চ্যালেঞ্জিং উদ্যোগে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, প্রযুক্তি স্থানান্তর এবং পারস্পরিক সুবিধার জন্য একটি মসৃণ ও অনুমানযোগ্য সরবরাহ শৃঙ্খল তৈরির মাধ্যমে আমাদের দীর্ঘমেয়াদী উৎপাদনশীল অংশীদার হবে।

তিনি বলেন, আমাদের অভিন্ন লক্ষ্য হল আমাদের জনগণের জন্য পারস্পরিক সুবিধা ও সমৃদ্ধি অর্জন করা। আমাদের ক্রমবর্ধমান দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য এবং জনগণের সঙ্গে জনগণের মধ্যে সম্পর্কের তা প্রতিফলিত হচ্ছে। ২০২১-২০২২ সালে বাংলাদেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১০.৪২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি করেছে এবং ২.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের প্রচেষ্টায় গত ১৪ বছরে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য আর্থ-সামাজিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। বাংলাদেশ এখন সর্বজনীনভাবে ‘আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের রোল মডেল’ হিসাবে স্বীকৃত। লক্ষ্য এখন যুক্তরাষ্ট্রসহ আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক অংশীদারদের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক উন্নীত করা।

তিনি বলেন, সুশাসনের ধারাবাহিকতা, আইনের শাসন ও স্থিতিশীলতা, গ্রামীণ অর্থনীতিতে বিনিয়োগ, নারীর ক্ষমতায়ন এবং আইসিটি খাতে অগ্রগতির কারণে এটা সম্ভব হয়েছে যা আমাদেরকে "ডিজিটাল বাংলাদেশ" অর্জনের পথে এগিয়ে নিয়ে গেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, এ কারণেই ইদানীং বাংলাদেশের ব্র্যান্ড ভ্যালু দ্রুত বাড়ছে। ব্র্যান্ড ফাইন্যান্স ইউকে জানিয়েছে, বাংলাদেশের ব্র্যান্ড ভ্যালু গত বছর ৩৭% বৃদ্ধি পেয়েছে যা বিশ্বে সর্বোচ্চ এবং গ্লোবাল সফট পাওয়ার ইনডেক্স ২০২৩ অনুযায়ী দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভারতের পরেই বাংলাদেশের অবস্থান।

তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য ২০৪১ সালের মধ্যে একটি ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ে তোলা। এই রূপকল্প ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উচ্চ আয়ের উন্নত দেশে পরিণত করবে। স্মার্ট বাংলাদেশ মানে অন্তর্ভুক্তিমূলক হওয়া এবং স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সরকার এবং স্মার্ট সমাজের উপর এ ধারণা প্রতিষ্ঠিত।

এরআগে, ইউএস বাংলাদেশ আইটি কানেক্ট পোর্টাল উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিল ইউএস চেম্বার অব কমার্স ওয়াশিংটন ডিসির গ্রেট হলে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

 




পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top