বড় ঝুঁকিতে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার

বাংলাদেশে ২০০ কিমি বেগে আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’

রাজিউর রাহমান | প্রকাশিত: ১১ মে ২০২৩, ০০:১৭

ছবি: সংগৃহীত (প্রতীকী)

ঘূর্ণিঝড় মোখার আতঙ্ক এখন দেশজুড়ে। সুপার সাইক্লোন সিডর এবং ঘূর্ণিঝড় আইলা ও আম্ফানের ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে ওঠতে না ওঠতেই উপকূলের মানুষ এখন এক অজানা আশঙ্কায় দিন গুনছেন। কখন, কীভাবে আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড়টি- তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই। এখনো নির্মাণ হয়নি টেকসই উপকূল রক্ষা বেড়িবাঁধ। তাইতো দুশ্চিন্তা, ভয় ও আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন উপকূলের মানুষ।

সমুদ্রে থাকাকালীন ঘূর্ণিঝড় মোখার শক্তি ক্ষয় হবে কি না এবং তা বাংলাদেশ ও মিয়ানমার উপকূলে কেমন ধ্বংসলীলা চালাবে, সে বিষয়ে এখনো কিছু স্পষ্ট করেননি আবহাওয়াবিদরা। 

তবে, আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, বাংলাদেশ উপকূলে ১৩ থেকে ১৫ মের মধ্যে যে কোনো সময় আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড়টি। এরইমধ্যে গভীর বঙ্গোপসাগরের না যাওয়ার জন্য সতর্কবার্তা জানানো হয়েছে।

ভারতের আবহাওয়া বিজ্ঞানী আনন্দ কুমার দাশ বলছেন, বুধবার (১০ মে) রাতে নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রুপ নেবে, তখন গতি ওঠে যাবে ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত।

বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে তীব্র ঘূর্ণিঝড়ে রুপ নেবে ‘মোখা’। তখন ঝড়ের কেন্দ্রে গতি ওঠে যাবে ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত আর রাতেই এটি রুপ নেবে অতি তীব্র ঘূর্ণিঝড়ে, যখন কেন্দ্রে বাতাসের গতিবেগ ওঠে যাবে ১৪০ কিলোমিটার পর্যন্ত।

শুক্রবার দুপুরের দিক ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রে বাতাসের গতিবেগ ওঠে যাবে ১৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত, রাতে আরো শক্তি সঞ্চয় হয়ে বাতাসের গতিবেগ ওঠে যাবে ১৬৫ কিলোমিটার পর্যন্ত। এরপর থেকেই মূলত শক্তি কিছুটা ক্ষয় করতে শুরু করবে ‘মোখা’।

শনিবার দুপুরের দিকে ঝড়ের কেন্দ্রে বাতাসের গতিবেগ নেমে আসবে ১৬০ কিলোমিটারে, রাতে যা ১৪০ কিলোমিটার হবে। এরপর রোববার (১৪ মে) দুপুরের দিকে ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রে বাতাসের গতিবেগ থাকবে সর্বোচ্চ ১১০ কিলোমিটার পর্যন্ত, যা রাতে নেমে আসবে ৭০ কিলোমিটারে। এদিন দুপুরের দিকেই তীব্র ঘূর্ণিঝড়ের শক্তি নিয়ে কক্সবাজার ও কিয়াকপিউ উপকূলে আঘাত হানবে ‘মোখা’।

ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ত্রিপুরা, মিজোরামে শনিবার ও রোববার ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণ হতে পারে। আর নাগাল্যান্ড, মনিপুর এবং আসামের ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে রোববার। এক্ষেত্রে চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে এ সময়।

আবহাওয়াবিদ ড. আবুল কালাম মল্লিক বলেন, আমাদের গাণিতিক মডেল বলছে ঘূর্ণিঝড় স্থলভাগে ওঠে আসার জন্য কক্সবাজার, টেকনাফ এসব এলাকা এবং আশেপাশের মিয়ামানের এলাকাগুলো নির্দেশ করছে। তবে এটি শতভাগ নিশ্চিত করা বলা সম্ভব নয়। কেননা, ঘূর্ণিঝড় যে কোনো সময় গতিমুখ পরিবর্তন করতে পারে।

চট্টগ্রাম আবহাওয়া অফিসের উপ-পরিচালক ড. ছাদেকুল আলম বলেন, যদি এটি প্রথম দিকে উত্তর-পশ্চিম দিকে যায়, তবে বাংলাদেশ-মিয়ানমার উপকূলে আসবে। আর যদি আরো উত্তর দিকে যাওয়ার পর গতিমুখ পরিবর্তন করে তবে বাংলাদেশে উপকূলে আসবে। এক্ষেত্রে রোববার (১৪ মে) উপকূলে ওঠতে পারে।

এদিকে, ভোলা, কক্সবাজার, খুলনা, পটুয়াখালী, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা উপকূলীয় অঞ্চলের সাধারণ মানুষের মনে চরম ভীতি কাজ করছে। ভীতির মূল কারণ দুর্বল বেড়িবাঁধ এবং মাঠের ফসল ও ঘেরের মাছ। তাছাড়া প্রবল জলোচ্ছ্বাস ও প্রচন্ড ঝড়ে ঘরবাড়ি ভেঙে গৃহহীন হওয়ার আতঙ্ক তো রয়েছেই।

জেনে নেওয়া যাক, ঘূর্ণিঝড়ের নাম কীভাবে হলো ‘মোখা’ :

ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ নামটি ইয়েমেনের দেওয়া। সেই দেশের বিখ্যাত শহর মোখার নাম থেকেই রাখা হয়েছে এই ঘূর্ণিঝড়ের নাম। মোখা এমনিতেই বেশ পরিচিত একটি শহর। সারা বিশ্বের কাছে এই শহরের পরিচিতি তার কফির জন্য। কফির উৎপাদন এবং সারা বিশ্বে সরবরাহের কাজ করা হয় এই শহর থেকে। এটির নামেই নামকরণ হয়েছে ঘূর্ণিঝড়ের। তাই মোকা বা মোচা নয়, শব্দটি হবে ‘মোখা’।  

এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের নাম নিয়ে তৈরি হয়েছে বিভ্রাট। ইংরেজিতে নাম Mocha। আর এরপর থেকেই শুরু আলোচনা। এর বাংলা তর্জমা করলে কী দাঁড়ায়! মোচা নাকি মোকা? এই নিয়ে বিভ্রাট তৈরি হয়েছে। আসলে নামের অর্থের মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে এর রহস্য।

বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার ঘূর্ণিঝড় সংক্রান্ত আঞ্চলিক সংস্থা এসকাপ। এই সংস্থাটি আরব সাগর ও বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড়গুলোর নাম ঠিক করে। এক্ষেত্রে এসকাপের সদস্য ১৩টি দেশের দেওয়া নামের তালিকা থেকে এক একটি ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করা হয়। বর্তমানে যে তালিকা রয়েছে সেখানে ১৬৯টি ঘূর্ণিঝড়ের নাম দেওয়া আছে। এরমধ্যে মোখা নামটি ১৩ নম্বর। অর্থাৎ ওই তালিকা থেকে পরবর্তী ১৫৬ ঝড়ের নাম ঠিক করা হবে।

 




পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top