অগঠনতান্ত্রিক বলছেন রেজাপন্থীরা
গণঅধিকার পরিষদের একাংশের সভাপতি নুর, সম্পাদক রাশেদ
রাজিউর রাহমান | প্রকাশিত: ১১ জুলাই ২০২৩, ১৯:০৬
অবশেষে গণ অধিকার পরিষদের একাংশের কাউন্সিল সম্পন্ন হয়েছে। এ কাউন্সিলে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন নুরুল হক নুর, সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন রাশেদ খান। তবে ড. রেজা কিবরিয়া নেতৃত্বাধীন পক্ষ এ কাউন্সিলকে অবৈধ বলে দাবি করেছেন। সোমবার (১০ জুলাই) রাত সোয়া ১০টায় এ ফলাফল ঘোষণা করা হয়।
এর আগে, নুরুল হকের সমর্থকদের কাউন্সিলের বিপরীতে বেলা ১১টায় ফিলিস্তিনি নাগরিকদের ওপর ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছিলেন রেজা কিবরিয়ার অনুসারীরা। কাউন্সিল শুরুর আগে বিশৃঙ্খলার আশঙ্কায় সেই কর্মসূচি স্থগিত করা হয়।
পরে নানা নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে গণ অধিকার পরিষদের প্রথম কাউন্সিল সোমবার দুপুর ১টায় শুরু হয়, যা চলে বিকাল ৫টা পর্যন্ত। নুরুল হকের সমর্থকদের ঘোষিত এই কাউন্সিলে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন রেজা কিবরিয়ার অনুসারীরা। তবে রেজা কিবরিয়ার ঘোষিত সদস্যসচিব হাসান আল মামুন শেষ সময়ে সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হন।
কাউন্সিলে সভাপতি পদে লড়েন চারজন। তারা হলেন: নুরুল হক নুর, নাজমুল উস সাকিব, বায়েজিদ শাহেদ এবং জাফর মাহমুদ। সাধারণ সম্পাদক পদেও চার প্রার্থী লড়েন। তারা হলেন: রাশেদ খান, মাহফুজুর রহমান খান, বিপ্লব কুমার পোদ্দার এবং জিল্লু খান।
এই নির্বাচনে মোট ভোটারের সংখ্যা ছিল ২১৬ জন। এর মধ্যে উচ্চতর পরিষদের ভোটারের সংখ্যা ১২৬। বাকিরা জেলা প্রতিনিধি হিসেবে ভোটার তালিকায় স্থান পেয়েছেন।
উচ্চতর পরিষদের নির্বাচনে সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে জয় লাভ করেন আবু হানিফ, বাকি বিজয়ী সদস্যরা হলেন, শাকিলউজ্জামান, হানিফ খান সজিব,শহিদুল ইসলাম ফাহিম, ফাতেমা তাসনিম, আব্দুজ জাহের, এডভোকেট নুরে এরশাদ সিদ্দিকী, জসিম উদ্দিন। এতে প্রার্থী ছিলেন ১৮ জন। ১২৬ ভোটের মধ্যে ভোট পড়েছে ৮৩ টি, বাতিল হয়েছে ২ টি, মোট ভোট ৮১।
ফলাফল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশন আরিফুল ইসলাম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন নির্বাচন কমিশন তোফাজ্জল হোসেন ও তৌফিক শাহরিয়ার।
রেজা কিবরিয়ার নেতৃত্বাধীন গণ অধিকার পরিষদের নেতারা অভিযোগ করেছেন, এটি অবৈধ কাউন্সিল। আর এই কাউন্সিল তাঁরা গায়ের জোরে করছেন। অফিস তাঁরা দখল করে রেখেছেন।
রেজা কিবরিয়ার নেতৃত্বাধীন গণ অধিকার পরিষদের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হাসান বলেন, কিছু দলছুট নেতা দলীয় গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করে একটি ব্যক্তিগত কাউন্সিল করেছে। এর সঙ্গে গণ অধিকার পরিষদের কোনো সম্পর্ক নেই। আমরা শুরু থেকেই নীতির প্রশ্নে আপসহীন।
সুতরাং গণ অধিকার পরিষদ চলবে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী। যে বা যারা দলীয় গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করে এ ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িত রয়েছে, আমরা তদন্তসাপেক্ষ তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবো।
ফারুক হাসান আরও বলেন, দলের আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়া এই মুহূর্তে বিদেশে রয়েছেন। আমেরিকার একটি হাসপাতালে তিনি ভর্তি রয়েছেন। আগামী সপ্তাহে দেশে আসবেন। এরপরই আমাদের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক ডাকা হবে। সেখান থেকেই কাউন্সিলের ঘোষণা আসতে পারে।
সরকারি চাকরিতে কোটাবিরোধী আন্দোলন করে জনপ্রিয়তা পাওয়া নুরুল হক ছাত্র অধিকার পরিষদের ব্যানারে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ডাকসুর ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে নুরুল হক ও তাঁর সমমনারা ২০২১ সালের অক্টোবরে গণ অধিকার পরিষদ নামে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে দল চলছে আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে।
গণ অধিকার পরিষদের শীর্ষ দুই নেতা রেজা কিবরিয়া ও নুরুল হকের বিরোধ থেকে বেশ কয়েক দিন ধরে দলে অস্থিরতা চলছে। দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি অব্যাহতি, অনাস্থা প্রস্তাব, অপসারণের মতো ঘটনাও ঘটেছে।
১ জুলাই দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে নুরুল হকের নেতৃত্বে তাঁর অনুসারীরা আহ্বায়কের পদ থেকে রেজা কিবরিয়াকে অপসারণের সিদ্ধান্ত নেন। ওই বৈঠকে ১০ জুলাই জাতীয় কাউন্সিলের ঘোষণা দেওয়া হয়।
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।