কবিগুরু কি সন্ন্যাস জীবনের স্বপ্ন দেখেছিলেন?
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাঙালি জাতির দিকনির্দেশক এক আলোকবর্তিকা
রাজিউর রাহমান | প্রকাশিত: ৬ আগষ্ট ২০২৩, ২০:২৬
‘আজি হতে শতর্বষ পরে কে তুমি পড়িছ বসি আমার কবিতাখানি কৌতূহল ভরে। আজি হতে শতর্বষ পরে।’ এক শ’ বছরেরও বেশি আগে বাঙালি পাঠকদের প্রতি এই জিজ্ঞাসা ছিল বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের।
সেই চিরজাগরুক, বাঙালির আত্মিক মুক্তি ও বাংলা সাহিত্যের উৎকর্ষের নায়ক কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আজ ৮১তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৩৪৮ সালের এই দিনে তিনি মৃত্যুবরণ করে না ফেরার দেশে চলে যান।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৬১ খ্রিষ্টাব্দে এবং ১২৬৮ বঙ্গাব্দের ২৫ বৈশাখ জন্মগ্রহণ করেন। কালজয়ী এ কবি কলকাতার জোড়াসাঁকোর সংস্কৃতিবান ব্রাহ্মণ পরিবারে মহর্ষী দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ঘর আলো করে জন্ম নেন।
তিনি ১৯১৩ সালে তার গীতাঞ্জলী কাব্যগ্রন্থের জন্য সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন। কবির গান-কবিতা, বাণী এই অঞ্চলের মানুষের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তির ক্ষেত্রে প্রভূত সাহস যোগায়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে শুধু নয়, চিরকালই কবির রচনা প্রাণের সঞ্চার করে।
তার সুর আর বাণী দোলায় বাঙালির অন্তর। সীমাহীন প্রেম, প্রকৃতি, প্রার্থনা, জীবন-জগতের সকল অনুভূতি মিশে আছে তার গানে। তার সংগীত শ্রোতাকে ভাসায়; দেয় অজানা অনুভূতির সন্ধান। এ সংগীতেই সবচেয়ে আপন করে পাওয়া যায় তাকে। জীবনব্যাপী অভিযানে গানই ছিল তার চির সারথি।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাঙালি জাতির দিকনির্দেশক এক আলোকবর্তিকা। বাঙালির প্রাত্যহিক জীবনের সব কিছুর সঙ্গেই মিশে আছেন রবীন্দ্রনাথ! গত দেড় শতাব্দী ধরে বাঙালির মানসপটে তার দাপুটে অবস্থান। তাকে বাদ দিয়ে বাঙালির চিন্তার ভূগোল, ভাবের প্রকাশ, রস আস্বাদন— কিছুই সম্ভব না।
বাঙালির মননের অন্যতম রূপকার রবীন্দ্রনাথ। বাঙালি সত্তায় তিনি চির অম্লান। মানবতাবাদী এই কবি বিশ্বাস করতেন বিশ্বমানবতায়। জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সেই দর্শনই অন্বেষণ করেছেন তিনি।
সন্ন্যাস জীবনের স্বপ্ন কখনো দেখেননি রবীন্দ্রনাথ। বরং সন্ন্যাস জীবনের ঘোরবিরোধী ছিলেন তিনি। পরিষ্কার করে বলেছেন, ‘বৈরাগ্য সাধনে মুক্তি সে আমার নয়।’ সে কারণেই হয়তো সংসার সাধনার মধ্যেই চলতে থাকে তার সাহিত্যচর্চা।
মহাকালের চেনাপথ ধরে প্রতিবছর বাইশে শ্রাবণ আসে। এই বাইশে শ্রাবণ বিশ্বব্যাপী রবী-ভক্তদের কাছে একটি শূন্যময় দিন। রবীন্দ্র কাব্যসাহিত্যের বিশাল একটি অংশে যে পরমার্থের সন্ধান করেছিলেন, সেই পরমার্থের সঙ্গে তিনি লীন হয়েছিলেন এদিন। বিশ্বকবির প্রয়ান দিবসে বিনম্র শ্রদ্ধা।
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।