গ্রেনেড হামলার সঙ্গে খালেদা, তারেক গং জড়িত
খালেদা জিয়ার ধারণা ছিল মারা যাবো, আল্লাহ বাঁচিয়েছেন
রাজিউর রাহমান | প্রকাশিত: ২১ আগষ্ট ২০২৩, ২৩:৫২
কেবল হত্যাকাণ্ডই নয়, কোনো আলামত রক্ষা করা হয়নি। তখন খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী। তিনি কী ভূমিকা পালন করেছিল সেটাই প্রশ্ন। তিনি কেন বাধা দিলেন পুলিশকে! কেন কোনো উদ্যোগ নিলেন না আলামত রক্ষা করতে? এতে কী প্রমাণ হয়, এই গ্রেনেড হামলার সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে খালেদা, তারেক গং জড়িত এতে তো কোনো সন্দেহ নেই। তদন্তেও সেটা বেরিয়েছে।
সোমবার (২১ আগস্ট) সকালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে একুশ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহতদের স্মরণে আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সরকারপ্রধান বলেন, ২১ আগস্ট ২০০৪ সালে আমরা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে র্যালি করছিলাম। ব্রিটিশ হাইকমিশনারের ওপর গ্রেনেড হামলা হয়েছিল সিলেটে এবং বিএনপির হাতে আমাদের ছাত্রলীগের নেতা হত্যা হয়। তাদের ওই সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আমরা একটা র্যালি আহ্বান করি। আর সেখানে প্রকাশ্য দিবালোকে হাজার হাজার মানুষের মধ্যে আর্জেস গ্রেনেড মারা হয়েছিল।
তিনি বলেন, আর্জেস গ্রেনেড সাধারণত রণক্ষেত্রে ব্যবহার হয়, যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহার হয় আর সেটা ব্যবহার হলো আওয়ামী লীগের ওপর। সেটা ব্যবহার হলো যখন আমরা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করছি মানুষের নিরাপত্তার জন্য। একটা-দুইটা নয়, ১৩টা গ্রেনেড, আর কত যে ওদের হাতে ছিল কে জানে! সেদিন যে বেঁচে গিয়েছিলাম সেটাই অবাক বিস্ময়।
বিভীষিকাময় সেই দিনের কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমি কেবল বক্তব্য শেষ করেছি, নিচে নামবো, তখন ফটোগ্রাফার গোর্কি আমাকে বলল- আপা একটু দাঁড়ান আমি ছবি নিতে পারিনি। সাথে সাথে অন্য ফটোগ্রাফাররা বললো আপা একটু দাঁড়ান, কয়েক সেকেন্ডের ব্যাপার। সাথে সাথে শুরু হয়ে গেল গ্রেনেড হামলা। হানিফ ভাই আমার পাশে ছিল, সাথে সাথে তিনি টেনে বসিয়ে দিলেন। আমাকে চারদিক থেকে ঘিরে ধরল।
তিনি আরও বলেন, যেসব গ্রেনেড ছোড়া হলো সেগুলো ট্রাকের ওপরে না পড়ে ট্রাকের ডালার সাথে বাড়ি খেয়ে নিচে পড়ে যায়। সমস্ত স্প্লিন্টার হানিফ ভাইয়ের মাথায়। তার সমস্ত গা বেয়ে রক্ত, আমার কাপড়ে এসে পড়ছে। প্রথমে তিনটা, তারপর একটু বিরতি দিয়ে আবার একটার একটা গ্রেনেড মারতে শুরু করল।
আমাদের হাজার হাজার নেতা-কর্মী সেখানে উপস্থিত, আইভি রহমান মহিলাদের নিয়ে নিচেই ছিলেন। আমাদের আরেক কর্মী সেন্টুসহ ২২ জন মৃত্যুবরণ করেন। হাজারের কাছাকাছি নেতাকর্মী আহত হয়। ৫০০ জনের ওপরে অত্যন্ত খারাপ ভাবে আহত ছিল।
সরকারপ্রধান বলেন, এ ধরনের ঘটনা ঘটলে আমরা সভ্য দেশে কী দেখি- সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ ছুটে আসে, আহতদের সহযোগিতা করে, হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করে। সেদিন কিন্তু কেউ নেই। আমাদের নেতাকর্মীরা যখন হামলা থেমেছে, তারা ছুটে আসে। তাদের ওপর পুলিশ উল্টো লাঠিচার্জ শুরু করে। তাদের ওপর হামলা করা শুরু করে। আমি যখন কেবল গাড়িটা নিয়ে সামনে চলে গেছি, তখনই শুনি টিয়ার গ্যাস এবং হামলা।
তিনি বলেন, এই ঘটনার পর পরই সিটি করপোরেশন থেকে তখনকার মেয়র সাদেক হোসেন খোকা লোক পাঠিয়ে সব আলামত হুজ পাইপ দিয়ে পরিষ্কার করতে চায়। আমি সঙ্গে সঙ্গে নানককে বললাম, এই জায়গায় লাল পতাকা দিয়ে সেগুলে রক্ষা করো।
দুইটি গ্রেনেড পাওয়া গিয়েছিল, সেগুলোও আলামত হিসেবে রক্ষা করা হয়নি। এক সেনা অফিসার এগুলি নিয়েছিল। সে বলেছিল এগুলি নষ্ট করা যাবে না, আলামত হিসেবে থাকবে। সেই জন্য সে চাকরিচ্যুত হয়েছিল। কোনো আলামতও রাখতে দেয়নি।
শেখ হাসিনা বলেন, হাসপাতালগুলোয় বিএনপির মানসিকতার ডাক্তাররা কেউ সেদিন আসেনি চিকিৎসা করতে। চিকিৎসার জন্য যা দরকার সুই থেকে শুরু করে সেগুলো পাওয়া যাচ্ছিল না। আমাদের ডাক্তার যারা তারা ছুটে গিয়েছিল, তারা তালা ভেঙ্গে এগুলো নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছিল। লাশের ওপর লাশ পড়ে আছে। সেদিন আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করার জন্য কেউ গাড়ি পাঠায়নি, লোক পাঠায়নি। আমি আমার সবাইকে বলি চিকিৎসার ব্যবস্থা করার জন্য।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলন, খুনের রাজনীতি করা, মানুষ হত্যা, একটি দলকে নিশ্চিহ্ন বা পরিবারকে হত্যা করা-এই রাজনীতি তো বিএনপি করে। খালেদা জিয়া করে। এটা তো মানুষের কাছে স্পষ্ট। ২১ আগস্ট তো আমাদের চোখের সামনে। বার বারই তো তারা আঘাত হেনেছে। বাংলাদেশ আসার পর থেকেই তো আমার ওপর বার বার হামলা হয়েছে।
হ্যাঁ, বেঁচে গেছি আমি বার বার। জানি না কেন? এটা আল্লাহ রাব্বুল আলামিন জানেন। কেন বার বার তিনি মৃত্যুর হাত থেকে আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। তারা হত্যার ষড়যন্ত্র করেছে। চক্রান্ত করেছে। যে রাজনৈতিক দলের উত্থান হয়েছে হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে। তাদের মিথ্যাচার মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন। তাদের হাতে তো রক্ত।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ২১ আগস্ট প্রকাশ্য দিবালোকে আইভি রহমানসহ আমাদের দলের নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। এই ঘটনার বিচারের রায় হয়েছে। এই রায় দ্রুত কার্যকর করা উচিত।
কিছু এখানে আছে তারা কারাগারে, কিন্তু মূল হোতা তো বাইরে। সে তো মুচলেকা দিয়ে বাইরে চলে গেছে। সাহস থাকলে আসে না কেন বাংলাদেশে? আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি সেই সুযোগ নিয়ে লম্বা লম্বা কথা বলে। হাজার হাজার কোটি টাকা চুরি করে নিয়ে চলে গেছে। এখন সেই টাকা খরচ করে।
তিনি বলেন, সাহস থাকলে বাংলাদেশে আসুক, বাংলাদেশের মানুষ ওই খুনিকে ছাড়বে না। বাংলাদেশের মানুষ ওদেরকে ছাড়বে না। তারা বাংলাদেশের মানুষকে চেনে নাই। বাংলাদেশের মানুষের কাছ থেকে জাতির পিতাকে সরাতে চেষ্টা করেছিল, তার নামটা মুছে ফেলা হয়েছিল। কিন্তু তারা তা করতে পারেনি। আবার জাতির পিতার নাম ফিরে এসেছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ফিরে এসেছে। কাজেই এই বাংলাদেশে খুনিদের রাজত্ব আর চলবে না। জিয়া পরিবার মানে হচ্ছে খুনি পরিবার।
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, আন্তর্জাতিকভাবে অনেকেই দেখি বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে কথা বলে। আমার আপনজনকে হত্যা করার পরে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর বাড়িতে জিয়াউর রহমান আমাকে ঢুকতে দেয়নি। তখন মানবাধিকার কোথায় ছিল?
শেখ হাসিনা বলেন, হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করে নিয়ে এখন বিদেশে আছে। আওয়ামী লীগ ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছে বলেই সেই সুবিধা নিয়ে বিদেশে বসে বক্তব্য দেয়। সাহস থাকলে বিদেশে বসে আছে কেন, বাংলাদেশে আসুক। বাংলাদেশের মানুষ তাকে ছাড়বে? বাংলাদেশে খুনিদের রাজত্ব আর চলবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা এখনও স্প্লিন্টার নিয়ে যন্ত্রণায় কাতর তাদের বলব, আপনারা মানুষের কাছে যান, বলেন যে ওই খালেদা জিয়া, তারেক জিয়া কিভাবে আপনাদের জীবনটাকে ধ্বংস করেছে। কিভাবে দেশ লুটপাট করেছে, কিভাবে দেশের স্বাধীনতা চেতনা ধ্বংস করেছে।
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।