দুর্দান্ত খবর, ভারতে প্রায় ৪ হাজার টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিল সরকার, কিন্তু কেন ?

রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২১:২৪

ছবি: সংগৃহীত

দুর্গাপূজা উপলক্ষে ভারতে ৩ হাজার ৯৫০ মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। দেশের ৭৯টি প্রতিষ্ঠান এই অনুমতি পেয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো ৫০ মেট্রিক টন করে ইলিশ রপ্তানি করতে পারবে। বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপনে ইলিশ রপ্তানির অনুমিত দিয়েছে। আগামী ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত এই অনুমতি কার্যকর থাকবে। এই সময়ের মধ্যে ভারতে ইলিশ রপ্তানি করতে হবে প্রতিষ্ঠানগুলোকে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে ইলিশ মাছ রপ্তানির বিষয়ে পাওয়া আবেদনগুলো যাচাই-বাছাই করে শর্ত সাপেক্ষে এসব প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের নামে নির্ধারিত পরিমাণ ইলিশ ভারতে রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হলো।

আট শর্তে ইলিশ রপ্তানির অনুমিত দিয়েছে মন্ত্রণালয়। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, শুল্ক কর্তৃপক্ষ রপ্তানির অনুমতিপ্রাপ্ত পণ্যের কায়িক পরীক্ষা করবে, প্রতিটি চালান জাহাজীকরণ শেষে রপ্তানির সব কাগজপত্র বাণিজ্য মন্ত্রণালয় পাঠাতে হবে, অনুমোদিত পরিমাণের চেয়ে বেশি রপ্তানি করা যাবে না, অনুমতিপত্র কোনোভাবেই হস্তান্তরযোগ্য নয় ও অনুমোদিত রপ্তানিকারক ছাড়া সাবকন্ট্রাকটিংয়ে মাধ্যমে ইলিশ রপ্তানি করা যাবে না। সরকার প্রয়োজনে যেকোনো সময় ইলিশ মাছ রপ্তানি বন্ধ করতে পারবে।

দুর্গাপূজা সামনে রেখে এবার পাঁচ হাজার টন ইলিশের চাহিদার কথা জানিয়েছিল ভারতের কলকাতার ব্যবসায়ীরা। ১ সেপ্টেম্বর কলকাতা ফিশ ইমপোর্টারস অ্যাসোসিয়েশন কলকাতায় বাংলাদেশ উপহাইকমিশনে এ আবেদন করে। ৪ সেপ্টেম্বর তা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আসে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গতবার পূজার সময় ২ হাজার ৯০০ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। তবে রপ্তানি হয়েছিল ১ হাজার ৩০০ টন। আগের বছরগুলোতেও একই পরিস্থিতি হয়েছিল। অনুমোদনের তুলনায় রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কম।

রপ্তানি শাখার একজন কর্মকর্তা বলেন, দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে ভারতে এবারও ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। গতবার যে-সব প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল তাদের মধ্যে অনেকে নির্ধারিত পরিমাণ মাছ রপ্তানি করতে পারেননি। অনেকে একেবারেই রপ্তানি করতে পারেননি। মাছ রপ্তানির বিষয়টি মূলত কি পরিমাণ মাছ ধরা পড়ল সেটির ওপরে অনেকটা নির্ভর করে। তাই আমরা প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা দেখে অনুমতি দিয়েছি।

এর আগে, ১৪ সেপ্টেম্বর বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ভারতে ৫ হাজার টন ইলিশ রপ্তানি করা হবে বলে জানিয়েছিলেন। তখন তিনি বলেন, ইলিশ আমরা নিয়মিত রপ্তানি করি না। শুধু দুর্গাপূজায় যেসব বাঙালি আমাদের মতো ইলিশ খেয়ে থাকেন, তাদের জন্য এই উৎসবের সময় শুভেচ্ছাস্বরূপ ইলিশ দেওয়া হয়। যেমন আমের সময় আমরা আম পাঠাই। সারা বছর কিন্তু আমরা এক ছটাকও ইলিশ রপ্তানি করিনি। এই ১৫ দিন কিংবা এক মাসের জন্য টোকেনস্বরূপ কিছু ইলিশ রপ্তানি করব।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, দেশে বছরে ৬ লাখ টন ইলিশ উৎপাদন হয়। সেই হিসাবে প্রতিদিন যদি আমরা ধরি, তাহলে গড়ে দুই হাজার টন ইলিশ ধরা হয়। সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টন ইলিশ রপ্তানি করব। তাতে সারা বছরের দুই দিনের উৎপাদন আমরা তাদের দেব এই পূজার সময়। পাঁচ হাজার টন ইলিশ রপ্তানি আমাদের লক্ষ্য। গত বছর একই পরিমাণ দিয়েছি।

এদিকে, উচ্চ মূল্যস্ফীতির বাজারে ইলিশ আর সাধারণ মানুষের নাগালে নেই। ভর মৌসুমেও ইলিশের কাছে ঘেঁষা যাচ্ছে না। ইলিশের উচ্চমূল্যের কারণে কম আয়ের মানুষ আর ইলিশ কিনতে পারছেন না। ১ কেজি ওজনের ইলিশের দাম বাজারভেদে ১৩০০ থেকে ১৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এরচেয়ে ওজন বেশি হলে দাম বাড়ে দ্বিগুণ হারে।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে  দেড় কেজি ওজনের ইলিশও মিলছে। দাম চাওয়া হচ্ছে দেড় থেকে দুই হাজার টাকা কেজি। ৮০০ বা ৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে এক হাজার থেকে ১২শ টাকায়। এ ছাড়া ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকায়।

 




পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top