খালেদা জিয়াকে বিদেশ পাঠানোর বিষয়ে সরকারের কী করার আছে ! আইন কী বলছে?
রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৮:২৬
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে আইনের অবস্থান থেকে সরকারের আর কিছু করার নেই। রবিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সচিবালয়ে খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার আইনি প্রক্রিয়াকে নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন তিনি।
আনিসুল হক বলেন, ‘বাংলাদেশ ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাজা শর্তযুক্তভাবে স্থগিত করা হয়। এখন যদি কোনো আইনের পরিবর্তন আনতে হয় তাহলে তাকে শর্তযুক্ত মুক্তি বাতিল করতে হবে। তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে আইনের অবস্থান থেকে সরকারের আর কিছু করার নেই।’
খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসা দেওয়ার বিষয়ে রোববার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেছেন— আইনমন্ত্রী বলতে পারবেন। এ বিষয়ে আপনার মতামত কি এমন প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে করতে হয়। সেই আবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। আইন মন্ত্রণালয়ের মতামতের ওপর নির্ভর করে ব্যাপারটি।
আনিসুল হক বলেন, আমি আগেও বলেছি, এখনও বলছি— বেগম খালেদা জিয়াকে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারার উপধারা ১ এর ক্ষমতাবলে শর্তযুক্তভাবে সাজা স্থগিত করা হয়েছে এবং মুক্তি দেওয়া হয়েছে, সেটা প্রধানমন্ত্রীর মহানুভবতায়। এখন আইনের যে পরিস্থিতি তাতে যদি কোনো পরিবর্তন আনতে হয় তাহলে বেগম খালেদা জিয়ার যে আগের শর্তযুক্ত মুক্তি, সেটাকে বাতিল করতে হবে। বাতিল করে সহবস্থানে যাওয়ার পরে তার পরে আবার অন্য বিবেচনা করা যাবে। আমার মনে হয় আইনের অবস্থান থেকে সরকারের আর কিছু করার নেই।
এই ইস্যুতে স্বরাষ্ট্র এবং আইন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে এক ধরনের ঠেলাঠেলি লক্ষ্য করা যাচ্ছে— এমন প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, আমাদের মধ্যে কোনো ঠেলাঠেলি নেই। আমি পরিষ্কার করেছি, যদি কোনো আবেদন আসে, সে আবেদন সরাসরি আইন মন্ত্রণালয়ে করা যায় না। এটি আইন। সেটা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে করতে হবে আইন মোতাবেক। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামতের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে। এর মধ্যে ঠেলাঠেলির কী দেখলেন আপনারা?
বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক একটা কথা বলেছেন। ১৯৯০ সালের ১৪ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে একটি ঘোষণা আছে। সেখানে বলা আছে যদি কোনো সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যেতে হয় তখন সে দেশের সরকারের দায়িত্ব তাকে বিদেশে পাঠানো।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, একটা কথা জাতিসংঘে বলা আছে। সেটা হচ্ছে আমাদের দেশের আইনটা অগ্রাধিকার পাবে এবং সে ক্ষেত্রে আমাদের দেশের আইনে যে অবস্থান তাকে ৪০১ ধারায় যে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। আমি বহুবার বলেছি, এই আইনের অবস্থায় এটার কোনো পরিবর্তন করা যাবে না। সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে আইনের শাসন আছে। আমরা আদালতকে শ্রদ্ধা করি।
দীর্ঘ দেড় মাস ধরে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় ১০ জুন রাত পৌনে তিনটার দিকে খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। গত বছরের ১০ জুন গভীর রাতে বুকে ব্যথা নিয়ে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের অধীনে ভর্তি হয়েছিলেন খালেদা জিয়া। পরে দ্রুত এনজিওগ্রাম করে তার হার্টে একটি রিং বসানো হয়। হার্টের দুটি ব্লক এখনো রয়ে গেছে।
৭৮ বছর বয়সি খালেদা জিয়া হার্টের সমস্যা, লিভারসিরোসিস ছাড়াও নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন। বহু বছর ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, দাঁত ও চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতা রয়েছে তার। কারাগার থেকে বেরোনোর পর চিকিৎসার জন্য কয়েক দফা হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন তিনি।
এর আগে ২৭ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য তিনি এভারকেয়ার হাসপাতালে যান। গত বছরের ২২ আগস্টও স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে গিয়েছিলেন। এক সপ্তাহ পর ২৮ আগস্ট ফের হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকদের পরামর্শে তাকে ভর্তি করানো হয়। দুদিন হাসপাতালে থাকার পর ৩১ আগস্ট বাসায় ফেরেন খালেদা জিয়া।
খালেদা জিয়া দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হয়ে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে কারাগারে গিয়েছিলেন। দেশে করোনা মহামারি শুরুর পর পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ তাকে নির্বাহী আদেশে ‘সাময়িক মুক্তি’ দেয় সরকার। এরপর কয়েক দফা তার দণ্ডাদেশ স্থগিতের মেয়াদ বাড়ানো হয়।
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।