মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী কে এই মুইজ্জু ?
রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ১ অক্টোবর ২০২৩, ১৩:৪৬
এশিয়ার দ্বীপ রাষ্ট্র মালদ্বীপে দ্বিতীয় দফায় ভোটে (রান অফ) ভারতপন্থী ইব্রাহিম সলিহকে হারিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন চীনপন্থী মোহাম্মদ মুইজ্জু। তার স্লোগান ছিল ‘ভারত হটাও’। বিবিসি বলছে, ৫৮৬ ব্যালট বাক্সের ভোট গণনা করে জানা গেছে যে মোহাম্মদ মুইজ্জু ৫৪ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছিলেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহাম্মদ সলিহ। তিনি ভোট পেয়েছেন ৪৬ দশমিক ২৭ শতাংশ। পরাজয় স্বীকার করে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে অভিনন্দন জানিয়েছেন মোহাম্মদ সলিহ।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত তত্ত্বাবধায়ক প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ইব্রাহিম মোহাম্মদ সলিহ। ওই দিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন মোহাম্মদ মুইজ্জু।
নির্বাচনে জয়লাভ করার পরপরই দেশটির কারাবন্দি সাবেক প্রেসিডেন্ট আব্দুল্লা ইয়ামিনের মুক্তি দাবি জানিয়েছেন মুইজ্জু। এক বিবৃতিতে নিজেকে বিজয়ী ঘোষণা করে এ দাবি জানান তিনি। আব্দুল্লা ইয়ামিন দুর্নীতি মামলায় ১১ বছরের সাজা ভোগ করছেন।
মোহাম্মদ মুইজ্জু নির্বাচনের আগে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, প্রেসিডেন্ট হতে পারলে মালদ্বীপে ভারতের প্রভাব কমাবেন। এ ছাড়া দেশটিতে যে অল্প সংখ্যক ভারতীয় সেনা মোতায়েন রয়েছে তাদের বের করে দেবেন তিনি।
২০১৮ সাল থেকে মালদ্বীপের ক্ষমতায় ছিলেন ইব্রাহিম মোহাম্মদ সলিহ। ৬১ বছর বয়সী এই নেতা তার শাসনামলে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করেছিলেন। তার পররাষ্ট্রনীতি ছিল ‘ভারত প্রথম’। অন্যদিকে ৪৫ বছর বয়সী নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মোহামেদ মুইজ্জু চীনের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার পক্ষে। এতদিন ভারতের প্রভাবাধীন ছিল মালদ্বীপ। মোহামেদ মুইজ্জু চান ভারতের প্রভাববলয় থেকে বেরিয়ে এসে চীনের সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলুক চীন।
সলিহের আগে ২০১৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত মালদ্বীপের প্রসিডেন্ট ছিলেন আবদুল্লাহ ইয়ামিন। তার মেয়াদের চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেছিল মালদ্বীপ এবং চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভে যোগ দিয়েছিল ওই সময়েই।
মাঝখানে ২০১৮ সালের নির্বাচনে ভারতপন্থী নেতা সলিহ প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর চীনের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ে মালদ্বীপের এবং ভারতের সঙ্গে সখ্য তৈরি হয়। এবার মোহামেদ মুইজ্জু নির্বাচিত হওয়ার পর আবার চীনের সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হতে যাচ্ছে মালদ্বীপের। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, চীন ও ভারতের সঙ্গে মালদ্বীপের সম্পর্কের ক্ষেত্রে এ নির্বাচন তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।
এর আগে, ৮ সেপ্টেম্বর মালদ্বীপে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তবে প্রথম ধাপে কোনো প্রার্থী এককভাবে ৫০ শতাংশ ভোট না পাওয়ায় এ নির্বাচন রানঅফে গড়ায়। ওই নির্বাচনে মুইজ্জু এককভাবে সর্বোচ্চ ৪৬ শতাংশের বেশি ভোট পান। অন্যদিকে, সোলিহ পান ৩৯ শতাংশ ভোট।
কে এই মুইজ্জু:
প্রগতিশীল জোটের মুইজ্জুর রয়েছে চীনের সঙ্গে সুসম্পর্ক। তার ক্ষমতায় আসায় অঞ্চলটিতে চীনের প্রভাব বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ১৯৭৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। স্কুল-কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে যুক্তরাজ্যের লিডস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। তিন সন্তানের বাবা মুইজ্জু রাজনীতিতে প্রবেশ করেন ২০১২ সালে। পুলিশ ও সামরিক বিদ্রোহের পর মালদ্বীপের প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকার পতনের পর গঠিত ঐক্য সরকারের আবাসনমন্ত্রী নিযুক্ত হয়েছিলেন তিনি।
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।