শেখ রাসেলের ৬০তম জন্মদিন আজ

শেখ রাসেল- শুভ বুদ্ধিবোধসম্পন্ন মানুষদের কাছে পরম আদরের নাম

রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ১৮ অক্টোবর ২০২৩, ১৪:২২

ছবি: সংগৃহীত

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট ছেলে শেখ রাসেলের ৬০তম জন্মদিন আজ (বুধবার)। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট ভাই শেখ রাসেল ১৯৬৪ সালের ১৮ অক্টোবর ধানমন্ডির ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবনে জন্মগ্রহণ করেন।

রাসেলের জন্মের পর বঙ্গবন্ধু তার প্রিয় লেখক খ্যাতিমান দার্শনিক ও নোবেল বিজয়ী ব্যক্তিত্ব বার্ট্রান্ড রাসেলের নামানুসারে পরিবারের নতুন সদস্যের নাম রাখেন রাসেল। শৈশব থেকেই দুরন্ত প্রাণবন্ত রাসেল ছিলেন পরিবারের সবার অতি আদরের। কিন্তু মাত্র দেড় বছর বয়স থেকেই প্রিয় পিতার সঙ্গে তার সাক্ষাতের একমাত্র স্থান হয়ে ওঠে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার ও ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট। তবে সাত বছর বয়সে ১৯৭১ সালে তিনি নিজেই বন্দি হয়ে যান।

১৯৭১ সালে রাসেল তার মা ও দুই বোনসহ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ধানমন্ডি ১৮ নম্বর সড়কের একটি বাড়িতে বন্দি জীবন কাটিয়েছেন। পিতা বঙ্গবন্ধু তখন পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি এবং বড় দুই ভাই শেখ কামাল ও শেখ জামাল চলে গেছেন মুক্তিযুদ্ধে। মা ও বোনসহ পরিবারের সদস্যরা ১৯৭১ সালের ১৭ ডিসেম্বর মুক্ত হন। রাসেল জয় বাংলা বলে ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন। বাইরে তখন চলছে বিজয়-উৎসব।

শেখ রাসেলের ভুবন ছিল তার পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মাতা বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব, বোন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা এবং ভাই শেখ কামাল ও শেখ জামালকে ঘিরে।

রাসেলের জন্ম নিয়ে শেখ হাসিনার স্মৃতি

রাসেলের জন্মের আগের মুহূর্তগুলো ছিল ভীষণ উৎকণ্ঠার। আমি, কামাল, জামাল, রেহানা ও খোকা চাচা বাসায়। বড় ফুফু ও মেজো ফুফু মার সাথে। একজন ডাক্তার ও নার্সও এসেছেন। সময় যেন আর কাটে না। জামাল আর রেহানা কিছুক্ষণ ঘুমায় আবার জেগে ওঠে। আমরা ঘুমে ঢুলুঢুলু চোখে জেগে আছি নতুন অতিথির আগমন বার্তা শোনার অপেক্ষায়। মেজো ফুফু ঘর থেকে বের হয়ে এসে খবর দিলেন আমাদের ভাই হয়েছে। খুশিতে আমরা আত্মহারা। কতক্ষণে দেখবো। ফুফু বললেন, তিনি ডাকবেন। কিছুক্ষণ পর ডাক এলো। বড় ফুফু আমার কোলে তুলে দিলেন রাসেলকে। মাথাভরা ঘন কালো চুল। তুলতুলে নরম গাল। বেশ বড়সড় হয়েছিল রাসেল।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট মানবতার শত্রু ঘৃণ্য ঘাতকদের নির্মম বুলেট থেকে রক্ষা পাননি শিশু শেখ রাসেলও। ছিলেন। নরপিশাচরা যখন তাকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল তখন তিনি ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিরা তাকে হত্যা করে জাতির পিতার রক্তের উত্তরাধিকার নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল।

ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় তাদের সেই অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। শহীদ শেখ রাসেল আজ বাংলাদেশের শিশু-কিশোর, তরুণ, শুভ বুদ্ধিবোধসম্পন্ন মানুষদের কাছে পরম আদরের নাম। অবহেলিত-অধিকার বঞ্চিত শিশুদের আলোকিত জীবন গড়ার প্রতীক। মানবিক চেতনাসম্পন্ন সব মানুষ আজও শেখ রাসেলের মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের শোককে হৃদয়ে ধারণ করেন।

প্রত্যক্ষদর্শী বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত সহকারী এএফএম মহিতুল ইসলামের মতে, ১১ বছরের শিশু রাসেল প্রতিদিনের মতো সেদিনও ঘুমিয়েছিল। আকস্মিক গুলির শব্দে তার ঘুম ভেঙে যায়। ঘুমভাঙা চোখে সে আতঙ্কিত হয়ে চমকে ওঠে। অবস্থা বুঝে বেগম মুজিব আদরের দুলাল রাসেলকে রক্ষায় বাড়ির কাজের লোকজনসহ পেছনের দরজা দিয়ে চলে যেতে বলেন। পেছনের ফটক দিয়ে বাইরে যাওয়ার সময় ঘাতকরা রাসেলকে আটক করে।

এ সময় বাড়ির ভেতরে মুহুর্মুহু বুলেটের শব্দ, বীভৎসতা আর আর্তচিৎকার শুনে অবুঝ শিশু রাসেল কান্নাজড়িত কণ্ঠে ঘাতকদের বলেছিল, আমি মায়ের কাছে যাব। পরে মায়ের লাশ দেখার পর অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে জোর মিনতি করে বলেছিল, আমাকে হাসু আপার কাছে পাঠিয়ে দাও। ছোট্ট নিষ্পাপ শিশুর আকুতিও নরপশুদের মন গলাতে পারেনি। মাত্র ১০ বছর ৯ মাস ২৭ দিন বয়সে এই প্রতিভাবান শিশুর জীবন প্রদীপ নিভে যায়। বঙ্গবন্ধুর ঘাতক, আত্মস্বীকৃত খুনিরা সেদিন শেখ রাসেলকেও রেহাই দেয়নি।

বঙ্গবন্ধু ও শেখ রাসেলের দণ্ডপ্রাপ্ত খুনিরা এখনও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পালিয়ে আছে। সেই সব দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক খুনিদের দেশে ফিরিয়ে এনে ফাঁসির রায় কার্যকর করা আজ সময়ের দাবি।

শিশু রাসেলের জীবন সম্পর্কে শিশু-কিশোরদের কাছে তুলে ধরতে তার জন্মদিনকে শেখ রাসেল দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয়ভাবে তৃতীয়বারের মতো শেখ রাসেল দিবস পালনের প্রতিপাদ্য শেখ রাসেল দীপ্তিময়, নির্ভীক নির্মল দুর্জয়।




পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top