ইমামদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী
ছেলে-মেয়েরা যেন সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও মাদকে সম্পৃক্ত না হয়
রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ৩০ অক্টোবর ২০২৩, ১৭:৫৮
ইমামদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের দেশের কোনো ছেলেমেয়ে যেন জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ, মাদক প্রভৃতিতে সম্পৃক্ত না হয়, সেদিকে আপনারা (ইমাম) খেয়াল রাখবেন। তাদেরকে সেভাবেই গড়ে তুলবেন।
সোমবার (৩০ অক্টোবর) পূর্বাচলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় ইমাম সম্মেলন ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি। এ সময় ষষ্ঠ পর্যায়ে ৫০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেছেন, যার যার ধর্ম সে সে পালন করবে- এই পরিবেশটাই আমরা রক্ষা করতে চাই। কোনোরকম সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ, কোনোরকম অন্যের ওপর অত্যাচার, অবিচার যেন না হয়- সেটাই আমরা দেখতে চাই। কারণ ইসলাম ধর্ম শান্তি, সম্প্রীতি ও মানবতার ধর্ম।
সরকারপ্রধান বলেন, ইসলামের যে সম্প্রীতি এবং মানবতাবোধ- এটাই আমাদের আমাদের সবচেয়ে বড় মূল্যবান সম্পদ। এটাই আমাদের নবী করিম (সা.) ও আমাদের সেই শিক্ষা দিয়েছেন। নিরীহ মানুষকে হত্যা করা, তাদের ওপর অত্যাচার করা- এটা আমাদের দেশে যেন না হয়, আমি আপনাদের সহযোগিতা চাই।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ফিলিস্তিনে ইসরায়েল যে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে, আমরা তার নিন্দা জানাই। আমি নিজেও এমনটি চাই না। আমরা চাই না আর কোনো শিশু প্রাণ হারাক।’
ইউক্রেন যুদ্ধের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, ‘বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে আমি বলেছি, এই যুদ্ধ থামান। আমরা শান্তি চাই। যুদ্ধের ভয়াবহতা আমরা দেখেছি। আমরা যুদ্ধ চাই না।’
এর আগে, বাংলাদেশের উন্নয়ন অব্যাহত থাকার জন্য ইমামদের কাছে দোয়া চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি সৌদি আরবের মসজিদ-ই-নববীর ইমাম শায়খ ড. আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহমান আল বুয়াইজান।
সম্মেলন শুরুর আগে প্রধানমন্ত্রী মসজিদে নববীর ইমামকে নিয়ে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী প্রদর্শনী কেন্দ্রের হলগুলো পরিদর্শন করেন ও ইমামদের সঙ্গে মসজিদে নববীর ইমামকে পরিচয় করিয়ে দেন। এ সময় সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে সারাদেশ থেকে সম্মেলনে আসা ইমামদের স্বাগত জানান প্রধানমন্ত্রী ও কুশল বিনিময় করেন মসজিদে নববীর ইমাম।
পরে প্রধানমন্ত্রী ও মসজিদে নববীর ইমাম মূল হলে যান। বেলা ১১টা ২০ মিনিটে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ইমাম সম্মেলন শুরু হয়।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন জানায়, সারাদেশের মসজিদভিত্তিক গণশিক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গে ৮০ হাজার আলেম-ওলামা যুক্ত। তাদের প্রতিমাসে সাড়ে ৫ হাজার থেকে ১১ হাজার টাকা পর্যন্ত সম্মানী ভাতা দিয়ে থাকে সরকার। এ শিক্ষকরা ইমাম প্রশিক্ষণ অ্যাকাডেমির প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। তারাই মূলত এ সম্মেলনে যোগ দেবেন। এর বাইরেও আরও ২০ হাজার ইমামকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এ আয়োজনে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ইমামদের পুরস্কৃত করা হবে।
এ সম্মেলন থেকে ষষ্ঠ পর্যায়ে ৫০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ নিয়ে সারাদেশে মোট ৩০০ মডেল মসজিদ উদ্বোধন করলেন তিনি।
এর আগে ২০২১ সালের ৭ ডিসেম্বর প্রথম পর্যায়, ২০২৩ সালের ১৬ জানুয়ারি দ্বিতীয় পর্যায়, ২০২৩ সালের ১৬ মার্চে তৃতীয় পর্যায়, ২০২৩ সালের ১৭ এপ্রিল চতুর্থ পর্যায় ও ২০২৩ সালের ৩০ জুলাই পঞ্চম পর্যায়ে ৫০টি করে মোট ২৫০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উদ্বোধন করা হয়েছে।
ধর্ম মন্ত্রণালয় জানায়, প্রধানমন্ত্রীর ২০১৪ সালে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির পর সরকার ২০১৭ সালে নয় হাজার ৪৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে ৫৬৪টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন’ শীর্ষক (দ্বিতীয় সংশোধিত) প্রকল্পটি গ্রহণ করেছিল।
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।