দেশব্যাপী বিএনপি-জামায়াতের ৪৮ ঘণ্টার হরতাল শুরু

রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ১৯ নভেম্বর ২০২৩, ১১:৫২

ছবি: সংগৃহীত

সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এক দফা দাবি এবং দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার প্রতিবাদে হরতাল পালন করছে বিএনপি। রোববার (১৯ নভেম্বর) সকাল থেকে ৪৮ ঘণ্টার হরতাল শুরু হয়। চলবে আগামী মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত।

এদিকে বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের শরিক গণতন্ত্র মঞ্চ, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, এলডিপি, লেবার পার্টিসহ সমমনা দলগুলোও পৃথকভাবে এই হরতাল কর্মসূচি পালন করছে। অপরদিকে জামায়াতে ইসলামীও আলাদাভাবে ৪৮ ঘণ্টার হরতাল কর্মসূচি পালন করছে।

এর আগে ২৯ অক্টোবর দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা হরতাল কর্মসূচি পালন করেছিল বিএনপি। এরপর থেকে বিরতি দিয়ে অবরোধ করে আসছে দলটি। এরই ধারাবাহিকতায় পঞ্চম দফায় গত বুধবার সকাল ৬টা থেকে ৪৮ ঘণ্টার দেশব্যাপী সর্বাত্মক অবরোধ পালন করে তারা।

বিরোধী দলগুলোর অবরোধ কর্মসূচির মধ্যেই গত বুধবার নির্বাচন কমিশন ৭ জানুয়ারি ভোটের তারিখ ঠিক করে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে। এর প্রতিবাদে এক ভার্চ্যুয়াল সংবাদ ব্রিফিংয়ে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী দুই দিনের হরতাল কর্মসূচির ঘোষণা দেন। 

হরতাল সফল করার আহ্বান জানিয়ে গতকাল শনিবার এক ভার্চ্যুয়াল সংবাদ ব্রিফিংয়ে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ৪৮ ঘণ্টার এই হরতাল হচ্ছে অধিকার আদায়ের হরতাল। এই হরতাল হচ্ছে অন্যায়ের বিরুদ্ধে হরতাল, গণতন্ত্রকামী মানুষকে অন্যায়ভাবে জুলুম-নিপীড়ন-নির্যাতন করে ফরমায়েশি রায়ে শাস্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদের হরতাল। এই হরতাল অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবিতে। জনগণের মালিকানা জনগণকে ফেরত দিতেই এই দুর্বার আন্দোলন।

ব্রিফিংয়ে রুহুল কবির রিজভী ঘোষিত তফসিল প্রত্যাহার করার আহ্বান জানান। তিনি সরকার ও নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা যে তফসিল ঘোষণা করেছেন, তা অবিলম্বে প্রত্যাহার করুন, নির্বাচন স্থগিত করে আগে পদত্যাগ করুন। অন্যথায় এই ফরমায়েশি একতরফা নির্বাচন জনগণ সর্বশক্তি দিয়ে প্রতিহত করবে।’

সরকার এবারের নির্বাচনেও ‘ভোট ডাকাতির উৎসব’ করতে চায় বলে অভিযোগ করে রিজভী বলেন, অতীতের মতোই সারা দেশের জনগণকে বন্দী করে, গৃহছাড়া করে ভোট ডাকাতির উৎসব সফল করতে চায় সরকার।

৪৮ ঘণ্টার এই হরতাল হচ্ছে অধিকার আদায়ের হরতাল। এই হরতাল হচ্ছে অন্যায়ের বিরুদ্ধে হরতাল, গণতন্ত্রকামী মানুষকে অন্যায়ভাবে জুলুম-নিপীড়ন-নির্যাতন করে ফরমায়েশি রায়ে শাস্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদের হরতাল।

রিজভী অভিযোগ করেন, অনেককে আটকে রেখে মুক্তিপণ নিচ্ছে পুলিশ। নেতা-কর্মীদের না পেয়ে তাঁর স্বজন-আত্মীয়দের আটক করে মারধর করছে। গায়েবি মামলা ও গ্রেপ্তার–আতঙ্কে বিএনপির নেতা-কর্মীরা দুঃসহ জীবন অতিবাহিত করছেন। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকে পরিণত করা হয়েছে।

রিজভী জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে বিএনপির ৩৩০ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলা হয়েছে ৭টি এবং তাতে আসামি করা হয়েছে ৯৭৫ জনকে। একই সময়ে বিএনপির ১২ জনের বেশি নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন বলে উল্লেখ করেন তিনি। বিএনপির দাবি, ২৮ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত দলটির ১৩ হাজার ২১০ জন নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন। এই সময়ে তাদের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ২৯৬টির অধিক মামলা হয়েছে।

এদিকে হরতালকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে বাস ও ট্রেনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে রাজধানীতেই চারটি বাসে আগুন দেওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, গতকাল শনিবার সন্ধ্যার দিকে রাজধানীর কাফরুলের তালতলায় বিহঙ্গ পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা।

এরপর সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে গুলিস্তানে কোমল পরিবহনের বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে রাত ১১টা ৫৮ মিনিটে মিরপুরের কালশীতে বসুমতি পরিবহনের একটি বাসে অগ্নিসংযোগের খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। এ ছাড়া রাতেই মৌমিতা পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এ ছাড়া চট্টগ্রাম ও কুমিল্লায় বাসে আগুন দেওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

এ ছাড়া জামালপুরের সরিষাবাড়ী রেলওয়ে স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা যমুনা এক্সপ্রেস ট্রেনের তিনটি বগিতে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। শনিবার দিবাগত রাত ১টা ২০ মিনিটে ট্রেনটিতে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে।

 




পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top