শরিকদের আসন বণ্টন নিয়ে ১৪ দলের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক

রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৪:২৩

ছবি: সংগৃহীত

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে ১৪ দলীয় জোটের শরিক নেতাদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে আজ সোমবার সন্ধ্যা ৬টায়। গণভবনে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। ১৪ দল সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। গণ আজাদী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসকে শিকদার বলেন, টেলিফোন করে তাদের সোমবার সন্ধ্যায় গণভবনে ডাকা হয়েছে।

সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া গণমাধ্যমকে বলেন, সোমবার সন্ধ্যা ৬টায় গণভবনে জোটের নেতাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এ বিষয়ে আমাদের জানানো হয়েছে। তবে আসন ভাগাভাগি বা সমঝোতার বিষয়ে এ মুহূর্তে বলতে পারব না। আমাদের এজেন্ডা দেওয়া হয়নি।

বিগত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসন ভাগাভাগি করে ভোটে অংশ নিয়েছিল আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট। নৌকা প্রতীকে নির্বাচনের নিশ্চয়তা পাওয়ার পর মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন জোটের নেতারা।

কিন্তু এবার মহাজোট শরিকদের আলাদা রেখেই এগোচ্ছে আওয়ামী লীগ। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৯৮টি আসনে দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে তারা। জোট শরিকদের দখলে থাকা সাতটি আসনেও প্রার্থী দিয়েছে আওয়ামী লীগ।

সূত্র বলছে, শেখ হাসিনার সঙ্গে ১৪ দলের নেতাদের বৈঠকেই আসন সমঝোতা চূড়ান্ত হয়ে যাবে, এমন নয়। শরিকরা যেসব আসন প্রত্যাশা করছে এবং এর মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্ব কোন কোন আসনে, এ-সংক্রান্ত তালিকা তারা জমা দিয়েছে। আজকের বৈঠকে তালিকাটি তোলা হবে।

এরপর প্রধানমন্ত্রী সেটি বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত জানাবেন। সেক্ষেত্রে জোটের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমুর নেতৃত্বে হয়তো একটি কমিটি করে দেয়া হতে পারে। কমিটি আলাপ-আলোচনা করে পরে জোটের প্রধানকে জানাবেন।

বৈঠকের আলোচ্যসূচি সম্পর্কে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু গণমাধ্যমকে বলেন, এখন আমাদের এজেন্ডা একটাই, নির্বাচনী এজেন্ডা। নির্বাচন কীভাবে করব, আসন ভাগাভাগি কীভাবে হবে এগুলো নিয়ে আলোচনা হতে পারে। বৈঠকে খোলামেলা আলোচনা না হলেও রাজনৈতিক মিশনটা ঠিক হবে।

আসন নিয়ে দরকষাকষি:

১৪ দলীয় জোটের বর্তমান শরিক দলের সংখ্যা ১৩। আওয়ামী লীগ বাদে অন্য ১২টি দলের মধ্যে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির ‘সংক্ষিপ্ত তালিকা’য় ১০টি আসনে ছাড় চাওয়া হয়েছে। ওয়ার্কার্স পার্টি প্রায় ৩০টি আসনে দলীয়ভাবে মনোনয়নপত্র দাখিল করলেও সমঝোতার ক্ষেত্রে ১০টি আসনকে অগ্রাধিকারে রেখেছে। এর মধ্যে সাতটি আসনে ছাড় নেওয়ার প্রচেষ্টা চালাবে দলটি।

তবে শেষ পর্যন্ত পাঁচটি আসনের জন্য দরকষাকষি করবে তারা। এই পাঁচটি আসনের মধ্যে বর্তমান সংসদের দলীয় তিন এমপি রাশেদ খান মেননের জন্য বরিশাল-২ অথবা বরিশাল-৩ (এবার ঢাকা-৮ আসনে প্রার্থী হননি), সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশার রাজশাহী-২ এবং অ্যাডভোকেট মুস্তফা লুৎফুল্লাহর সাতক্ষীরা-১ আসনের সঙ্গে অন্য আরও দুটি আসন রয়েছে।

আরেক শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) ১২টি আসনের জন্য ‘সংক্ষিপ্ত তালিকা’ দিয়েছে। যার মধ্যে পাঁচটিতে সমঝোতার প্রচেষ্টা চালাবে দলটি। এর মধ্যে জাসদের বর্তমান তিন এমপি দলের সভাপতি হাসানুল হক ইনুর কুষ্টিয়া-২, সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতারের ফেনী-১ এবং স্থায়ী কমিটির সদস্য এ কে এম রেজাউল করিম তানসেনের বগুড়া-৪ আসনের বাইরে অন্য দুটি আসন রয়েছে। আগেই ৯১টি আসনে দলীয় প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিল করেছে জাসদ।

জাতীয় পার্টি-জেপির তালিকায় পাঁচটি নাম থাকলেও দুটি আসনের জন্য ছাড় পেতে চাইছে তারা। দলের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর পিরোজপুর-২ আসন ছাড়াও সাধারণ সম্পাদক শেখ শহীদুল ইসলামের জন্য একটি আসন চায় দলটি।

তরীকত ফেডারেশন ছাড় চাইছে পাঁচটি আসনে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম-২ আসন ছাড়াও মহাসচিব সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরীর জন্য কুমিল্লা-৮ অথবা কুমিল্লা-৯ আসনের মনোনয়ন নিশ্চিত করতে চাইছে দলটি। ৩৪টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে দলটি।

সাম্যবাদী দল আটটি আসনে প্রার্থী দিলেও কেবল দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়ার জন্য চট্টগ্রাম-১ আসনে ছাড় চাইবে জোটনেত্রী শেখ হাসিনার কাছে।

এদিকে নিবন্ধন না থাকায় বাসদ (রেজাউর) শরিক দল ওয়ার্কার্স পার্টির নামে পাঁচটি আসনে প্রার্থী দিয়েছে। এর মধ্যে দলের আহ্বায়ক রেজাউর রশিদ খানের জন্য সিরাজগঞ্জ-৬, সদস্য সচিব হামিদুল কিবরিয়া চৌধুরীর জন্য সুনামগঞ্জ-২ এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বকুল হোসেনের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ আসনে ছাড় চাইছে বাসদ।

দুই ভাগে বিভক্ত গণতন্ত্রী পার্টির একটি অংশের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডা. শাহাদাৎ হোসেন ঢাকা-৮ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এই আসনেই ১৪ দলের ছাড় চাইবে দলটি।

ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) অনেক আসনে প্রার্থী দিলেও ১৪ দলের কাছে দুটি আসনে ছাড় চাইবে।

এ ছাড়া অন্য নিবন্ধন জটিলতায় পড়া গণতন্ত্রী পার্টি (আরশ আলী) এবং নিবন্ধনবিহীন চারটি দল গণআজাদী লীগ, গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টি ও কমিউনিস্ট কেন্দ্র কোনো আসনেই প্রার্থী দিতে পারেনি। ফলে তারা জোটগত আসন সমঝোতার আলোচনার সুযোগই পাচ্ছে না।

২০০৮ সাল থেকে ১৪ দলীয় জোট একসঙ্গে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। গত নির্বাচনে শরিক দলের আটজন নেতা নৌকা প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এবারও জোটের শীর্ষ নেতারা নৌকা প্রতীকেই ভোট করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। সর্বশেষ গত ১৯ জুলাই গণভবনে ১৪ দলের বৈঠক হয়। এতে জোটের প্রধান শেখ হাসিনা জানিয়েছিলেন, ১৪ দল জোটগতভাবেই নির্বাচনে অংশ নেবে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জোটগতভাবে ভোট হওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে বক্তব্য দেন। এতে নাখোশ হন ১৪ দলের শরিকরা। এ জন্যই শরিকরা জোটপ্রধানের সঙ্গে বৈঠকের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন।




পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top