শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে গণভবনে রওশন
রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ১২ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৮:৫৯
জাতীয় পার্টির সঙ্গে জোট না করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অনুরোধ করেছেন জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ। আজ মঙ্গলবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা।
তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে জিএম কাদেরের কর্মকাণ্ডে আমাদের সমর্থন নেই। তিনি জোর করে জাতীয় পার্টি দখল করেছেন। তাই জাতীয় পার্টির সঙ্গে যেন কোনো জোট না হয় সেজন্য প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছেন রওশন এরশাদ।
মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, দলের আড়াই থেকে তিনশ’ নেতাকর্মীকে অন্যায়ভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। যোগ্য প্রার্থিদের মনোনয়ন না দিয়ে অপমান করা হয়েছে। জাতীয় পার্টির সঙ্গে যেন জোট না হয় সে অনুরোধ জানিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন- উনি দলীয় পরিষদে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিবেন।
এর আগে দুপুর পৌনে ১টার দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে গণভবনে যান জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ। এ সাক্ষাতে রওশন এরশাদের সঙ্গে ছিলেন তার ছেলে সাদ এরশাদ ও তার রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসীহ, মশিউর রহমান রাঙ্গা ও কাজী মামুনুর রশীদ।
এর আগে, দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ না নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন রওশন এরশাদ ও তার অনুসারী নেতারা।
দশম সংসদ নির্বাচন থেকেই রওশন ও আওয়ামী লীগের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির সেই নির্বাচনে যাওয়ার প্রশ্নে জাতীয় পার্টির দ্যোদুল্যমান অবস্থার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেন রওশন। সেই নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দিলেও পরে প্রার্থিতা তুলে নেওয়ার নির্দেশ দেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তখন দলে রওশনকে ঘিরে তৈরি হয় আরও একটি বলয়। তারা জানান, ভোট করবেন।
নির্বাচনের পর থেকে সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা হন রওশন। বর্তমান সংসদেও তিনি একই পদে আছেন।তবে ২০১৯ সালে জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর দলের নেতৃত্ব নিয়ে যে টানাপড়েন, তাতে এবার বেকায়দায় পড়েছে এরশাদপত্নী।
গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী রওশন তার নিজের পাশাপাশি সাবেক মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গার জন্য রংপুর-১, ছেলে রাহগির আলমাহি সাদ এরশাদের জন্য রংপুর-৩, ময়মনসিংহ জাতীয় পার্টির সাবেক সভাপতি কে আর ইসলামের জন্য ময়মনসিংহ-৬, রুস্তম আলী ফরাজীর জন্য পিরোজপুর-৩ সহ কয়েকটি আসন চেয়েছিলেন।
কিন্তু রাঙ্গাঁর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারে রাজি নন জি এম কাদের, তার আসনে প্রার্থী করা হয়েছে জি এম কাদেরের ভাতিজা আসিফ শাহরিয়ারকে। জি এম কাদের নিজে দাঁড়িয়েছেন রংপুর-৩ আসনে। এমনকি ১৯৯১ সাল থেকে জাতীয় পার্টি, বিএনপি ও স্বতন্ত্র মিলিয়ে চার চারবার সংসদ সদস্য রুস্তম ফরাজীকেও মনোনয়ন দেওয়া হয়নি।
জাতীয় পার্টি সাদ এরশাদকে ময়মনসিংহ-৭ আসন দেওয়ার পক্ষে ছিল, যদিও সেই আসনে অন্য একজনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। কে আর ইসলামকে ময়মনসিংহ-৬ আসন দিতে অবশ্য আপত্তি ছিল না। তবে তাকে দুই বছর আগে জি এম কাদের বহিষ্কার করেছেন, সেই আদেশ ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে কি না, সেটি ও নিশ্চিত নয়।
এই দ্বন্দ্বের মধ্যে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় শেষ হওয়ার আগের দিন ২৯ ডিসেম্বর রওশন জানান তিনি ভোটে আসবেন না, তার অনুসারীরাও আসছেন না। সেই রাতে তিনি বলেন, বর্তমানে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার ক্ষেত্রে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও মহাসচিব সহযোগিতা না করার কারণে, দলের পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের মনোনয়ন প্রদান করা হয়নি। এমতাবস্থায় দলের ও নেতাদের অবমূল্যায়ন করার কারণে নির্বাচনে আমার অংশগ্রহণ করা সম্ভব নয়।
বিএনপির বর্জনে ২০১৪ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির সঙ্গে আওয়ামী লীগ আসন নিয়ে সমঝোতা করলেও এবার এখনও সেই সমঝোতার খবর আসেনি। দুই দল একাধিকবার বৈঠক করলেও আসন নিয়ে আলোচনার কথা অস্বীকার করেছে। এই অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করলেন রওশন।
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।