লাইভে এসে দেনা পরিশোধের ঘোষণা দিল ইভ্যালির রাসেল
রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৭:৩৮
অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই গ্রাহকদের সব দেনা পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী (সিইও) মোহাম্মদ রাসেল। তিনি বলেছেন, ‘যেসব গ্রাহক ও ব্যবসায়ী ইভ্যালির কাছে টাকা পান, আমি আপনাদের কষ্টটা ফিল (অনুভব) করি। আমি মনে করি, ইভ্যালিকে যদি বিজনেস করতে দেওয়া হয়, তাহলে অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই আপনাদের সব দেনা পরিশোধ করবো। এটা আমি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গেই বলছি।’
শুক্রবার (২৯ ডিসেম্বর) ইভ্যালির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ‘ফেসবুক লাইভ উইথ সিইও’ শীর্ষক লাইভ অনুষ্ঠানে এই প্রতিশ্রুতি দেন রাসেল। তিনি বলেন, ‘আগামী ২-৩ মাসের মধ্যে আমরা এই দেনা পরিশোধ করা শুরু করবো। সেই অ্যামাউন্ট কত হবে তা পরে জানিয়ে দেওয়া হবে।’
দেনা পরিশোধ কীভাবে করবেন সেই প্রশ্ন উঠলে তিনি বলেন, ‘কীভাবে সম্ভব হবে তার সব উত্তর আমি দেবো। জাতীয় নির্বাচনের পর একটি সংবাদ সম্মেলন করে গ্রাহক, ব্যবসায়ী ও মিডিয়ার সব প্রশ্নের উত্তর দেবো।’
লাইভে রাসেল বলেন, ‘অজস্র মানুষ ইভ্যালিকে ভালোবাসে বলেই আজ ইভ্যালি ফিরে আসতে পেরেছে। গুটিকয়েক মানুষ যারা ইভ্যালির দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তারাই ইভ্যালির বিরুদ্ধে নিজে বা অন্য কাউকে দিয়ে অপপ্রচার করায়। ইভ্যালিকে ব্যবসার সুযোগ দেওয়া হলে রাসেল বা ইভ্যালি যতটা উপকৃত হবে, তার চেয়ে বেশি লাভবান হবে এ দেশের জনগণ। যারা ইভ্যালিতে কেনাকাটা করে পণ্য পাননি এবং যারা ইভ্যালিতে পণ্য দিয়ে পেমেন্ট পাননি, তারাও উপকৃত হবে।’
তিনি বলেন, ‘আজকের ক্যাম্পেইনের উদ্দেশে এটা নয় যে আমি যা লাভ করবো সেটা দিয়ে বিলাসবহুল জীবনযাপন করবো। বরং আজকের লাভের টাকা দিয়ে অল্প কিছু গ্রাহককে অন্তত এই দেনা থেকে মুক্তি পেতে চাই। এতে একটু চাপ কমবে আমার।’
দেনা পরিশোধের প্রক্রিয়া নিয়ে করা প্রশ্নের জবাবে রাসেল বলেন, ‘বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে উল্লেখ ছিল আমাদের কাছে সাড়ে ৩০০ কোটি টাকা পাওনা আছে। নিঃসন্দেহে এটা বড় একটি অ্যামাউন্ট। যদি আমরা স্মল স্কেলে (ছোট পরিসরে) চিন্তা করি। কিন্তু বৃহৎ স্কেলে চিন্তা করলে আজকের দিনে ইভ্যালি বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ই-কমার্স। এই জনপ্রিয় ই-কমার্স হওয়ার কারণ এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যবসায়ী ও গ্রাহক।
গ্রাহক কখনোই আমরা ধরে রাখতে পারতাম না, যদি মার্চেন্টরা স্পেশাল প্রাইস না দিতেন। এই ব্যবসায়ীরা যে বিশেষ মূল্য আমাদের দেন, সেখান থেকেই আমরা একটা প্রোফিট রেখে সেগুলো সেল করি। আপনাদের কাছে মনে হতে পারে, এত দেনা কিন্তু দেশের ৫ শতাংশ লোকও যদি ইভ্যালি থেকে তাদের পণ্য নেয় তাহলে এই দেনা পরিশোধ করা খুবই সহজ হবে।’
এর আগে সম্প্রতি ফেসবুকে দেওয়া একটি পোস্টে গ্রাহকদের জন্য সাড়া জাগানো আয়োজন নিয়ে আসার ঘোষণা দিয়েছিলেন রাসেল।
‘বিগ ব্যাং’ শিরোনামে পোস্টারের ক্যাপশনে তিনি লিখেছিলেন, দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষায় থাকা গ্রাহকদের দীর্ঘ সময়ের এই দূরত্ব ইভ্যালির ‘বিগ ব্যাং’ অফারের মাধ্যমে ঘোচাবেন তিনি। সেখানে ২৯ ডিসেম্বর ইতিহাস গড়ার কথাও উল্লেখ করেন তিনি। তাই আজই হয়ত ‘বিগ ব্যাং’ ক্যাম্পেইনটি প্রকাশ করা হবে।
গত ১৮ ডিসেম্বর কাশিমপুর কারাগার থেকে জামিনে বের হন ইভ্যালির প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও মোহাম্মদ রাসেল। এর আগে ২০২১ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাসেল এবং কোম্পানির চেয়ারম্যান ও তার স্ত্রী শামীমা নাসরিনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে ২০১৮ সালে ইভ্যালি প্রতিষ্ঠা করে হইচই ফেলে দেন রাসেল। মাত্র দুই বছরের মধ্যে দেশের শীর্ষস্থানীয় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান হয়ে ওঠে ইভ্যালি। কিন্তু ঋণের বোঝাও বেড়ে যায় তাদের। অভিযোগ আছে, দেশি ও বিদেশীয় কয়েকটি প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠান মিলে ইভ্যালিকে থামানোর জন্য উঠেপড়ে লাগে। মোটা অঙ্কের বরাদ্দও করে তারা। একপর্যায় ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে গ্রেপ্তার করা হয় রাসেলকে।
কিন্তু রাসেলকে গ্রেপ্তারে হতাশ হন প্রতিষ্ঠানটির লাখ লাখ গ্রাহক। তারা ইভ্যালির ব্যবসা চালুর জন্য আন্দোলন শুরু করেন। রাসেলকে মুক্তি দিতে ২০ হাজারের বেশি ক্রেতা-বিক্রেতা আদালতের কাছে লিখিত আবেদন করেন। এর মধ্যে নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়েছেন রাসেল ও তার প্রতিষ্ঠান। সবশেষ গত ১৮ ডিসেম্বর জামিনে মুক্তি পেয়েছেন তিনি। তবে তার স্ত্রী ও ইভ্যালির চেয়ারম্যান অনেক আগেই মুক্তি পেয়েছেন।
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।