আজও অবদি দাঁড়াতে পারেননি আগুনে নিঃস্ব তিন মার্কেটের ব্যবসায়ীরা!
ফারহানা মির্জা | প্রকাশিত: ২ জানুয়ারী ২০২৪, ১১:২৪
বছর নিয়েছে বিদায়, তবুও এখনো অবদি ঘুরে দাঁড়াতে পারেননি বিদায়ি বছরের তিনটি আলোচিত আগুন নিঃস্ব শত শত ব্যবসায়ীরা।
৪ এপ্রিল বঙ্গবাজারে আগুন লাগে। এর ১০ দিনের মাথায় ১৫ এপ্রিল আগুন লাগে নিউ মার্কেটের পাশে নিউ সুপার মার্কেটে। এরপর ১৪ সেপ্টেম্বর আগুন লাগে মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে। এছাড়া ২৬ অক্টোবর গুলশানের খাজা টাওয়ারেও আগুন লাগে। এর মধ্যে বঙ্গবাজার এবং কৃষি মার্কেটের আগুন নিয়ে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হলেও বছর শেষে সেই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়নি।
ফায়ার সার্ভিসের প্রধান কার্যালয়ের সামনে লাগা আগুনে বঙ্গবাজার কীভাবে মাটির সঙ্গে মিশে গেল, সে প্রশ্নের কোনো উত্তর নেই। আবার কৃষি মার্কেটে রাতে বিদ্যুতের প্রধান সুইচ বন্ধ থাকে। তার পরও কীভাবে শকসার্কিট থেকে আগুন লাগল, সেই প্রশ্নের উত্তরও মেলেনি বছর শেষ হয়ে গেলেও।
বঙ্গবাজারে এখন অস্থায়ী ভিত্তিতে বাঁশ-কাঠের মাচা তৈরি করে ব্যবসা করছেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু আগের বঙ্গবাজারের সেই জৌলুস এখন আর নেই। মার্কেটের ব্যবসায়ী থেকে তারা এখন হয়ে গেছেন ফুটপাতের ব্যবসায়ী। আগে যেখানে দোকানে থাকত কোটি কোটি টাকার কাপড়, এখন তাদের দোকানে নেই লাখ টাকার কাপড়ও।
আগুনে পুরো মার্কেটটি মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। ফায়ার সার্ভিসের এত সক্ষমতা বৃদ্ধির পরও কেন আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পারল না ফায়ার সার্ভিস, সেই প্রশ্নের কোনে উত্তর মেলেনি। অনেক দিন ধরেই বঙ্গবাজার ভেঙে বহুতল ভবন নির্মাণের কথা আলোচনা হচ্ছিল। বেশ কয়েক বার চেষ্টা করেও সফল হয়নি সিটি করপোরেশন। বঙ্গবাজারেও অনেক বার আগুন লেগেছে।
কিন্তু ফায়ার সার্ভিসের সদর দপ্তরের সামনেই এবার যেভাবে পুড়েছে বঙ্গবাজার, তাতে নানা ধরনের সন্দেহ তৈরি হওয়াই স্বাভাবিক। নতুন করে আবার কথা হচ্ছে, শিগগিরই বহুতল ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করবে সিটি করপোরেশন। ঠিক একইভাবে ১৪ সেপ্টেম্বর আগুন লাগে মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেটে। এটিও সিটি করপোরেশনের অধীনে চলা একটি মার্কেট।
কৃষি মার্কেটটি অত্যন্ত সুরক্ষিত একটি মার্কেট। রাতে এই মার্কেটের বিদ্যুতের প্রধান সুইচ বন্ধ থাকে। ফলে ইলেকট্রিক শর্টসার্কিট থেকে আগুন লাগার সুযোগ কম। তার পরও রাতের আঁধারে আগুন লাগল কৃষি মার্কেটে। পুড়ে গেল ১৫০ ব্যবসায়ীর স্বপ্ন। সম্প্রতি মোহাম্মদপুরে কৃষি মার্কেটে গিয়ে দেখা গেল, যে ১৫০টির মতো দোকান পুড়েছিল, সেখানে বসানো হয়েছে ৩০০-এরও বেশি দোকান।
কোনো ধরনের নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে স্থানীয় কমিশনার দোকানগুলো বসিয়ে ভাড়া ওঠাচ্ছেন। ফলে এখন আগুন লাগার কারণ নিয়ে মানুষের সন্দেহ আরও তীব্র হয়েছে। কিন্তু প্রতিকারের কোনো পথ খোলা নেই। কার কাছে বিচার চাইবেন?
প্রতিটি ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস তদন্ত করে। তারা শর্টসার্কিট বা মশার কয়েল থেকে আগুনের সূত্রের কথা বলেন। কোনো ঘটনায় সন্দেহ থাকলে অধিকতর তদন্তের কথা তারা বলেন। তাদের সেই রিপোর্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমাও হয়। কিন্তু আজ পর্যন্ত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে কোনো একটি ঘটনারও অধিকতর তদন্তের জন্য কমিটি গঠন করা হয়নি। ফলে দুর্ঘটনা ছাড়া যদি কখনো উদ্দেশ্যমূলকভাবে আগুন দেওয়া হয়, তার জন্য যিনি বা যারা দায়ী, তারা সব সময় থেকে গেছেন আড়ালেই।
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।