সেই দুই নারী সাংবাদিককে জামিনে মুক্তি দিলো ইরান

রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ১৫ জানুয়ারী ২০২৪, ১৯:১৮

ছবি: সংগৃহীত

প্রায় এক বছর পর কারাবন্দি দুই নারী সাংবাদিককে মুক্তি দিয়েছে ইরান সরকার। এর আগে ইরানি তরুণী মাশা আমিনির মৃত্যু ও তাকে ঘিরে গড়ে ওঠা আন্দোলনের খবর প্রকাশ করার কারণে তাদের কারাদণ্ড দিয়েছিলেন দেশটির আদালত। দুই নারী সাংবাদিক নিলুফার হামিদি (৩১) ও এলাহেহ মোহাম্মাদি (৩৬) জামিনে মুক্তি পেয়েছেন বলে ইরানের সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে এ খবর জানিয়েছে বিবিসি।

ইরানের গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, ওই দুই সাংবাদিক তাদের কারাদণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল করেছিলেন এবং আদালতের পরবর্তী সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত তারা জামিনে মুক্ত থাকবেন। ওই দুই নারী সাংবাদিককে যথাক্রমে ১৩ ও ১২ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। দুই লাখ মার্কিন ডলার জামানতে তাদের জামিন হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে তারা দেশত্যাগ করতে পারবেন না বলে জানানো হয়েছে।

দেশটির নৈতিকতা পুলিশের হাতে আটক হন মাশা আমিনি। পরে পুলিশ হেফাজতেই মারা যান তিনি। হিজাব পরিধানের কঠোর নিয়ম লঙ্ঘনের অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।

গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর ঠিকভাবে হিজাব না পরায় পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন ২২ বছর বয়সী মাশা আমিনি। ১৬ সেপ্টেম্বর পুলিশি হেফাজতে থাকা অবস্থায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন কুর্দি বংশোদ্ভূত ওই তরুণী। পরে স্থানীয় একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।

মাশা আমিনির মৃত্যুর পর দেশটিতে হিজাব-বিরোধী আন্দোলন শুরু হয়, যা পরবর্তীতে সরকার-বিরোধী আন্দোলনে রূপ নেয়। বিক্ষোভ আন্দোলনে দুই শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন। হাজার হাজার আন্দোলনকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং কয়েকজনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

তবে একাধিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার দাবি, হিজাব-বিরোধী এ আন্দোলনে ইরানের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহিংসতায় কমপক্ষে ৪০০ জন নিহত হয়েছেন।

ইরানের নৈতিকতা পুলিশ আনুষ্ঠানিকভাবে গাশত-ই এরশাদ বা গাইডেন্স পেট্রোল নামে পরিচিত। দেশটির সাবেক কট্টরপন্থী প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদের আমলে শালীনতা ও হিজাবের সংস্কৃতি ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে পুলিশের এ শাখা প্রতিষ্ঠা করা হয়। ২০০৬ সালে প্রথমবারের মতো টহল শুরু করে পুলিশের এ শাখা।

১৯৭৯ সালে ইসলামিক বিপ্লবের চার বছর পর ইরানে হিজাব বাধ্যতামূলক করা হয়। ওই বিপ্লবের মাধ্যমে দেশটিতে তৎকালীন মার্কিন-সমর্থিত সরকারকে উৎখাত ও ইসলামি প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা হয়। ওই বিপ্লবের পর প্রথম হিজাব-বিরোধী এত বড় বিক্ষোভের মুখে পড়েছে ইরান সরকার। এতে চাপে পড়েছেন দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিও।

সাংবাদিক নিলুফার হামেদি ইরানের সংস্কারপন্থী পত্রিকা শার্ঘে কাজ করতেন। মাসা আমিনির মৃত্যুর কথা জানার পর তার বাবা ও দাদি পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছিলেন। এই দৃশ্য ধারণ করেন নিলুফার হামেদি। পরে তিনি এই ছবি অনলাইনে পোস্ট করেন। ছবির ক্যাপশনে তিনি লেখেন, শোকের কালো পোশাক আমাদের জাতীয় পতাকায় পরিণত হয়েছে।

অন্যদিকে এলাহেহ মোহাম্মদী কাজ করতে হাম-মিহান পত্রিকায়। তিনি মাহসা আমিনির নিজ শহরে তার দাফন-কাফনের খবর সংগ্রহ ও প্রচার করেছিলেন। তিনি লিখেছিলেন, কীভাবে শত শত শোকার্ত মানুষ মাহসা আমিনির জন্য কেঁদেছিলেন, তারা কীভাবে ‘নারী, জীবন, স্বাধীনতা’ বলে প্রতিবাদী স্লোগান দিয়েছিলেন।

বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পরপরই দুই নারী সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করে ইরানের কর্তৃপক্ষ। তাদের বিরুদ্ধে মার্কিন সরকারের সঙ্গে যোগসাজশের অভিযোগ আনা হয়। এ ছাড়া জাতীয় নিরাপত্তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগও আনা হয়।




পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top