এবার রাজধানীর একটি বিলাসবহুল এলাকায় শেখ হাসিনার ভাগনি টিউলিপ সিদ্দিকের সম্পদের খোঁজ মিলেছে। তথ্যটি প্রকাশ করা হয় যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফে। এতে বলা হয়, সম্পত্তিটির তার পরিবারের (সিদ্দিকস) নামে নামকরণ করা। টিউলিপ সিদ্দিক যুক্তরাজ্যের সাবেক দুর্নীতিবিরোধী মন্ত্রী। তিনি দেশটির ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির পার্লামেন্ট সদস্য (এমপি)।
ঢাকার কর্মকর্তাদের ধারণা, ২০১৪ সালে টিউলিপের ‘স্থায়ী ঠিকানা’ ছিল ‘সিদ্দিকস’ নামে ঢাকার ওই অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্স। সে সময় তিনি ছিলেন যুক্তরাজ্যের উত্তর লন্ডনের ক্যামডেনের কাউন্সিলর।
অ্যাপার্টমেন্ট ভবনটির অবস্থান ঢাকার গুলশানে। এই এলাকায় বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের পাশাপাশি বড় বড় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। গুলশান এলাকার ১০ তলা এই অ্যাপার্টমেন্ট ভবন ২০১০ সালের দিকে নির্মিত হয়। একটি প্রচারমূলক ভিডিওর তথ্য অনুসারে, ভবনে একটি খোলা ছাদ আছে। আছে একাধিক বারান্দাযুক্ত দুই ও তিন শয়নকক্ষের ফ্ল্যাট। ভবনটি টিউলিপের বাবা শফিক আহমেদ সিদ্দিক, টিউলিপের দাদা নাকি পুরো পরিবারের নামে, তা স্পষ্ট নয়।
আদালতের নথিপত্র বা সংবাদ প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, এ নিয়ে বাংলাদেশে টিউলিপের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পঞ্চম সম্পত্তির খোঁজ পাওয়া গেল। তবে যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির সূত্রগুলো বলছে, বাংলাদেশে টিউলিপের কোনো সম্পত্তি নেই। তাই এ বিষয়ে কোনো প্রশ্নের জবাব দেওয়ারও দায় নেই।
প্রায় এক মাস আগে যুক্তরাজ্যের সিটি মিনিস্টারের পদ থেকে পদত্যাগ করেন টিউলিপ সিদ্দিক। তিনি এখনো সম্পত্তিসংক্রান্ত বিষয়সহ বাংলাদেশে তার খালা শেখ হাসিনার স্বৈরশাসনের সঙ্গে যোগসূত্র নিয়ে প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছেন।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা লাউরি ম্যাগনাস টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে তদন্ত করেন এবং প্রমাণ পান যে, শেখ হাসিনার দলের এক সদস্যের কাছ থেকে উপহার হিসেবে পাওয়া একটি ফ্ল্যাট নিয়ে তিনি জনগণকে বিভ্রান্ত করেছেন। এর পর টিউলিপ সিদ্দিক পদত্যাগ করেন। তিনি অল্প সময়ের জন্য সিটি মন্ত্রী ছিলেন, যেখানে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করা ছিল তার দায়িত্ব।
গাজীপুরের কানাইয়া এলাকায় ‘টিউলিপস টেরিটরি’ নামের প্লটসহ একটি পারিবারিক অবকাশযাপনের বাগানবাড়ি নিয়ে তদন্ত করছে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন। এ তথ্য সামনে আসার পর গুলশানের সম্পত্তির সঙ্গে টিউলিপের যোগসূত্রের তথ্য জানতে পারে দ্য টেলিগ্রাফ।
একটি আনুষ্ঠানিক নথিতে দেখা যায়, গুলশানের সম্পত্তিটি টিউলিপের ‘বর্তমান’ ও ‘স্থায়ী’ উভয় ঠিকানা হিসেবেই বিবেচিত হয়েছিল। টিউলিপ তখন লন্ডনের ক্যামডেনের কাউন্সিলর ছিলেন।
সম্পত্তিটি সম্পর্কে জানেন এমন এক ব্যক্তির ধারণা, এই পরিবারের এক সদস্যের মালিকানাধীন জমিতে ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু এই ভবনের কোনো ফ্ল্যাট এখনো এ পরিবারের মালিকানায় আছে কি না কিংবা বিশেষভাবে এটি কার নামে নামকরণ করা হয়েছে, সে প্রশ্নের উত্তর দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টি।
পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা এই সম্পত্তিসহ আদালতের নথিপত্র অনুসারে, গুলশানের অন্য একটি ঠিকানা ও ধানমন্ডিতে তার খালার বাড়ির সঙ্গে টিউলিপের যোগসূত্র আছে।
শেখ হাসিনার বক্তৃতার প্রতিক্রিয়ায় গত সপ্তাহে বিক্ষুব্ধ বিক্ষোভকারীরা তার ধানমন্ডির বাড়িতে আগুন দেন। সেখানে লুটপাট হয়। স্থানীয় গণমাধ্যমের ধারণ করা ভিডিওর একটি দৃশ্যে এই বাড়ির একটি ভাঙা কাচের দরজার ফ্রেমে টিউলিপের স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের একটি ছবি ঝুলতে দেখা যায়। আর পেছনের ঘরে তখন আগুন জ্বলছিল।
টিউলিপ এর আগে পরিবারের আরেক সদস্যের সঙ্গে ঢাকায় একটি ফ্ল্যাটের মালিক ছিলেন, যার মূল্য এক লাখ পাউন্ডের বেশি। যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের রেজিস্ট্রার অব ইন্টারেস্টের তথ্য অনুসারে ফ্ল্যাটটি ২০১৫ সালে বিক্রি করা হয়। সূত্র: ইত্তেফাক
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।