‘নো ট্রিটমেন্ট, নো রিলিজ’ নির্দেশনা ছিল শেখ হাসিনার
Nasir Uddin | প্রকাশিত: ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১০:৫০

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে আহতদের চিকিৎসা না দিতে এবং হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র না দিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
পতনের কিছুদিন আগে রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের দেখতে গিয়ে চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে এই নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। যার প্রমাণ প্রসিকিউশনের হাতে এসেছে বলে জানিয়েছেন প্রসিকিউটর মো. তাজুল ইসলাম।
রোববার (২৪ ফেব্রুয়ারি) আদালতে পূর্বনির্ধারিত বিষয়ে শুনানি শেষে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন অফিসের সম্মেলন কক্ষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান তিনি। এমন নির্মমতার প্রমাণসমূহ যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে যাচাই-বাছাই ও ফরেনসিক করার পর গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী মামলার প্রমাণের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে আদালতের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে জানান চিফ প্রসিকিউটর।
তিনি বলেন, ‘আমরা রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর) বা পঙ্গু হাসপাতালে যখন পরিদর্শনে গিয়েছিলাম তখন সেখানে চিকিৎসারত আহত রোগী ও তাদের স্বজনরা আমাদের জানিয়েছিলেন, শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার আগে একবার হাসপাতাল পরিদর্শন করতে গিয়েছিলেন।
সেখানে গিয়ে বলেছিলেন, ‘নো ট্রিটমেন্ট, নো রিলিজ’। অর্থাৎ কর্তব্যরত চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে আহতদের কোনো চিকিৎসা না দিতে এবং কাউকে এখান থেকে বাইরে না যেতে দিতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছিলো।’
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, ‘রোগীদের পাশাপাশি এই নির্দেশাবলীর কথা সেখানকার ডাক্তাররাও আমাদেরকে জানিয়েছেন। এর তথ্য প্রমাণাদি আমাদের হাতে আছে, আমরা সেটাই আজ আদালতকে জানিয়েছি।
এসময়, সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান চলাকালে আমাদের সেসকল সন্তানরা শহীদ হয়েছেন, তাদের মৃতদেহ প্রশাসনের নির্দেশে সুরতহাল করতে দেয়া হয়নি, কাউকে কাউকে ডেথ সার্টিফিকেটও দেয়া হয়নি। এমনকি গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে যাওয়ার পর যারা সেখানেই শহীদ হয়েছেন তাদের ডেথ সার্টিফিকেটে গুলিতে মারা গেছে- এই কথাটিও লিখতে দেয়া হয়নি। শ্বাসকষ্ট কিংবা জ্বরে মারা গেছে এ ধরনের কথা লিখতে বাধ্য করা হয়েছে। আন্দোলনে শহীদের লাশ দাফন করতে যাচ্ছে জানতে পারলে রাস্তায় পুলিশ তাদের পরিবারের ওপর হামলা-আক্রমণ করেছে।
তিনি বলেন, ‘আদালত আমাদের কাছে জানতে চেয়েছেন, যে শহীদদের সুরতহাল প্রতিবেদন বা পোস্টমর্টেম রিপোর্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্য এবং কেন সেগুলো নেই। আমরা আদালতকে জানিয়েছি যে সেই মুহূর্তে মানবতা বিরোধী অপরাধের মাত্রা এতটাই ভয়াবহ ছিলো যে, দ্রুত শহীদদের লাশ দাফন করতে বাধ্য করা হয়েছে। তাই এ কারণে তাদের কোনো পোস্টমর্টেম রিপোর্ট দেওয়া হয়নি। ঘটনাটি কোনো স্বাভাবিক বিষয় নয় বরং তা মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি জাজ্জ্বল্যমান প্রমাণ। এটিই প্রমাণ করে কি ধরনের নিষ্ঠুরতার সাথে জুলাই-আগস্টে হত্যাকাণ্ডগুলো চালানো হয়েছিল।
জুলাই-আগস্টে গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় রাজধানীর শাহবাগ থানার সাবেক ওসি আরশাদ হোসেন, রামপুরায় ছাদের কার্নিশে ঝুলে থাকা এক কিশোরকে গুলির ঘটনায় বরখাস্ত উপপরিদর্শক (এসআই) চঞ্চল কুমার সরকার ও আরেকটি মামলায় বরখাস্ত কনস্টেবল ইমাজ হোসেন প্রামাণিককে রিমান্ডে নিয়ে এক দিন করে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। প্রসিকিউশনের পৃথক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে গঠিত বিচারিক প্যানেল এ আদেশ দেয়। চঞ্চল সরকারকে আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি, আরশাদ হোসেনকে ২ মার্চ এবং ইমাজকে ৩ মার্চ জিজ্ঞাসাবাদ করবে তদন্ত সংস্থা। এ ছাড়া এই পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ২২ এপ্রিল ধার্য করে ট্রাইব্যুনাল।
এদিকে রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালিয়ে হত্যার ঘটনায় পুলিশের কনস্টেবল সুজন হোসেনকে গতকাল ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। আদালত তার বিষয়েও ২২ এপ্রিলের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে দিন ধার্য করেন। প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর বিএম সুলতান মাহমুদ, শহিদুল ইসলাম সরদার ও গাজী এম এইচ তামিম।
বিষয়: বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন নো ট্রিটমেন্ট নো রিলিজ শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।