বৃহঃস্পতিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৫ ফাল্গুন ১৪৩১

বিএনপির বর্ধিত সভা শুরু, খালেদা জিয়ার জন্য রাখা হলো ফাঁকা চেয়ার

রাজীব রায়হান | প্রকাশিত: ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১৩:০৮

ছবি: সংগৃহীত

দীর্ঘ সাত বছর পর ঢাকায় শুরু হয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়বাদী দলের (বিএনপি) বর্ধিত সভা। সারা দেশ থেকে আসা প্রতিনিধিদের মাঝে এ নিয়ে চলছে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা। সারা দেশ থেকে আসা প্রায় চার হাজার প্রতিনিধি এতে অংশ নিচ্ছেন। বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হল ও মাঠ প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এই সভা।

বর্ধিত সভায় ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। দেশের বাইরে থাকায় সভায় সশরীরে নেই তিনি। তবে সভা মঞ্চে সম্মানার্থে তাঁর জন্য প্রধান অতিথির চেয়ার রাখা হয়েছে। ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

সভায় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি, ঐক্য ও শৃঙ্খলা ধরে রাখাসহ নানা দিকনির্দেশনা দেবেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। যা মাঠে বাস্তবায়ন করবে তৃণমূলের নেতারা। সভায় স্বাগত বক্তব্য দেবেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

দলের বিভিন্ন স্তরের সাড়ে তিন হাজার নেতা এই বর্ধিত সভায় অংশ নিচ্ছেন। বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটি, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিল, জাতীয় নির্বাহী কমিটি, মহানগর-জেলা-থানা-উপজেলা এবং পৌরসভা ইউনিটের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবরা আছেন সভায়।

আরো আছেন দলের ১১টি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক এবং ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী এবং মনোনয়ন প্রত্যাশীরা।

এমন বড় পরিসরে বিএনপির সর্বশেষ যৌথ সভা হয়েছিল ২০১৮ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি, ঢাকার লো মেরিডিয়ান হোটেলে। সেই সভায় সভাপতিত্ব করেছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এর তিনদিন পরে ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার সাজায় তাকে কারাগারে যেতে হয়।

উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়া এখন আছেন লন্ডনে, ছেলে তারেক রহমানের কাছে। তবে তার জন্যও একটি চেয়ার সংরক্ষিত থাকছে বিএনপির বর্ধিত সভার মঞ্চে। তিনিই এ সভার প্রধান অতিথি বলে মঞ্চ থেকে ঘোষণা করা হয়েছে।

সারা দেশ থেকে আসা নেতাকর্মীরা এই বর্ধিত সভায় নিজেদের প্রত্যাশার কথা তুলে ধরবেন দলের শীর্ষ নেতৃত্বর কাছে। সেগুলো আমলে নিয়ে কর্মকৌশল নির্ধারণ করবে বিএনপি।

সভা থেকে কী বার্তা আসতে পারে, সেই প্রশ্নে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গণমাধ্যমকে বলেন, “যেসব নেতৃবৃন্দ বর্ধিত সভায় আসবেন, যাদেরকে ডাকা হয়েছে, তাদের বক্তব্যের ওপর ভিত্তি করেইৃকী চান তারাৃ অনেক দিন ধরেই তারা আমাদের এত বড় আন্দোলন গেল, আরও নানা বিষয় আছেৃকী ধরনের প্রস্তাব গ্রহণ করা যায়, তাদের বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে সেটা আসবে।”

বর্ধিত সভার জন্য এলডি ভবনের সামনের মাঠে স্টিল অবকাঠামো দিয়ে তৈরি করা হয়েছে সুসজ্জিত প্যান্ডেল। সভার মূল মঞ্চে বড় পর্দায় লন্ডন থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভার্চুয়ালি যুক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আনুষ্ঠানিভাবে শুরু হয় সভার কার্যক্রম। তিনি সভাপতির আসন গ্রহণ করেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে কোরআন তেলাওয়াতের পর‘ফ্যাসিস্ট’ সরকারের বিরুদ্ধে দীর্ঘ আন্দোলনে এবং ছাত্র-জনতার জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে নিহতদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর শোক প্রস্তাব পাঠ করেন জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

বর্ধিত সভার মূল মঞ্চে আছেন বিএনপির মহাসচিব, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহ উদ্দিন আহমেদ, সেলিমা রহমান ও হাফিজ উদ্দিন আহমেদ।

মঞ্চের এক পাশে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান, চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রতিকৃতি রয়েছে। সভার সঞ্চালনায় আছেন যুগ্ম মহাসচিব শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু ও কোষাধ্যক্ষ রসিদুজ্জামান মিল্লাত।

এই পর্বে স্বাগত বক্তব্য দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি বক্তব্য দেবেন। বিএনপির প্রতিষ্ঠা থেকে শুরু করে ছাত্র-জনতার বিপ্লব পর্যন্ত দলের কার্যক্রমের ওপর তৈরি করা ‘প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ’ নামে একটি প্রামাণ্য চিত্র দেখানো হবে অনুষ্ঠানে।

সভাপতির স্বাগত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শেষ হবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। মধ্যাহ্ন ভোজের পর শুরু হবে রুদ্ধদ্বার কর্ম অধিবেশন। এই অধিবেশন তৃণমূল নেতারা সাংগঠনিক এবং বর্তমান পরিস্থিতির ওপর বক্তব্য দেবেন।

রিজভী জানান, রুদ্ধদ্বার কর্ম অধিবেশনটি রাত পর্যন্ত চলবে। এরপর তারেক রহমান নীতিনির্ধারণীয় বক্তব্য দেবেন।

টানা এই বর্ধিত সভায় টানা এই বর্ধিত সভায় অতিথিদের জন্য সকালের নাস্তা, দুপুরে খাবার, বিকালে স্ন্যাকের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত থাকবে চা-কফির ব্যবস্থা। বর্ধিত সভা উপলক্ষে সংসদ ভবনের বাইরে বিএনপির ৩১ দফা সংস্কার কর্মসূচিগুলো বড় প্ল্যাকার্ডের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে।

সকাল সাড়ে ৮টা থেকে দূর দূরান্ত থেকে আসা নেতারা আইডি কার্ড গলায় ঝুলিয়ে সভাস্থলে প্রবেশ করতে শুরু করেন। সংসদ ভবনের প্রবেশমুখে অভ্যর্থনা কমিটির সদস্যরা গোলাপ-রজনী গন্ধা দিয়ে তাদের শুভেচ্ছা জানান। আমন্ত্রিত অতিথি ছাড়া বর্ধিত সভায় প্রবেশে কড়াকড়ি থাকায় বিপুল সংখ্যক কর্মী-সমর্থক সংসদ ভবনের বাইরে অবস্থান নেন।

 




পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top