পুলিশকে আক্রমণ করবেন না, দায়িত্ব পালন করতে দিন: আইজিপি
Nasir Uddin | প্রকাশিত: ১৩ মার্চ ২০২৫, ১৫:০৯

পুলিশের ওপর আক্রমণ না করে সহযোগিতা করতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন আইজিপি বাহারুল আলম। তিনি বলেছেন, আমাদের কাজ করতে দেন। অনুগ্রহ করে আমাদের ওপর আক্রমণ করবেন না। আমরা তো সমাজ এবং দেশেরই লোক। বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) সকাল ১০টায় গাজীপুর মহানগরীর মোঘরখাল (ভোগড়া বাইপাস) শিল্পাঞ্চল পুলিশ-২ কার্যালয়ে বিশেষ কল্যাণ সভায় প্রধান অতিথির তিনি এ কথা বলেন।
এসময় আইজিপি বলেন, পুলিশকে সহায়তার আহ্বান জানিয়ে বাহারুল আলম বলেন, পুলিশকে প্রতিপক্ষ ভাববেন না। পুলিশের প্রতি আক্রমণ করবেন না। আইন ও সংবিধানের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করুন। দেশ গঠনে আমাদেরকে দেশের সেবা করা সুযোগ দিন।
তিনি বলেন, সমাজে স্থিতিশীলতা না আসলে কীভাবে আমরা নিরপেক্ষ, অবাধ নির্বাচনের দিকে এগুবো। আমরা যদি আস্থা না আনতে পারি। পুলিশ তো মানুষের শত্রু নয়। এই জায়গাটায় দেশবাসীর কাছে অনুরোধ করি আমাদের কাজ করতে দেন।
আইজিপি বলেন, ‘এখনো পুলিশ জায়গায় জায়গায় কাজ করতে যাচ্ছে। সেখানে পুলিশ আক্রমণের শিকার হচ্ছে, তাদের কাছ থেকে আসামি ছিনিয়ে নিচ্ছে। ট্রাফিক পুলিশ আইনের নিয়ম ভঙ্গকারীদের কাছে যাচ্ছে, তাদেরকে বলছে আপনি আইন মেনে চলুন, সেখানে ট্রাফিক পুলিশের ওপর চড়াও হচ্ছে। আইন না মানার একটা প্রবণতা চলে আসছে। তারা মনে করছে, পুলিশ জনবিরোধী কাজ করছে, এখন আমরা আমাদের মতো চলবো, পুলিশ লাগবে না। এটা সম্পূর্ণ ভুল।’
বাহারুল আলম বলেছেন, ‘একটি সভ্য দেশ পুলিশ ছাড়া কীভাবে চলবে? পৃথিবীর কোথায় আছে, পুলিশ ছাড়া চলে? পৃথিবীর কোথাও এটা নাই, এই দেশের মানুষকে এটা বুঝতে হবে, যারা বুদ্ধিমান, তারা অবশ্যই বোঝেন। তবে কিছু লোক আছে, তারা মনে করে পুলিশ এখন আইন প্রয়োগ করতে যাচ্ছে, পুলিশ তাদের প্রতিপক্ষ। দেশের অপরাধ যদি দমন করা না হয়, শৃঙ্খলা যদি না হয় কোন নাগরিকটা থাকতে পারবে, এই ১৮ কোটি লোকের একটা লোকে ঘুমাতে পারবে? আপনারও তো খেয়াল করেছেন, যখনই অপরাধ বেড়ে যায় তখন কি রকম শুরু হয়। তখন রাত জেগে নিজেদেরকে সারা রাত পাহারা দিতে হয়। এই দায়িত্বটুকু আমার। এখন যদি দেশের কিছু লোক আমাকে যারা ভুল বোঝে, আর তারা যদি আমাকে দায়িত্ব পালন করতে না দেয়, তাহলে পুরো সমাজটাই শেষ হয়ে যাবে। এই জিনিসটা তাদের বুঝতে হবে।’
উপস্থিত সাংবাদিকদের মাধ্যমে দেশবাসী ও নাগরিক সমাজের কাছে আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আমাদেরকে (পুলিশকে) কাজ করতে দেন। অনুগ্রহ করে আমাদের ওপর আক্রমণ করবেন না। আমরা সমাজের জন্য, দেশের জন্য এখানে আছি। কীভাবে সমাজে স্থিরতা আসবে, আমরা কিভাবে কার্যকরী ইলেকশনের দিকে আগাবো? যদি আমরা স্থিতিশীলতা (স্ট্যাবিলিটি) না আনতে পারি, স্থিতিশীলতা আমাকে আনতে হবে, কেন কাজ করতে দিচ্ছেন না? এটা যুক্তিহীন একটা কাজ, পুলিশ মানুষের শত্রু নয়, আমাদের দেশের জন্য কাজ করতে হবে। আমি বিনীত অনুরোধ করি দেশবাসীর কাছে, আমাদেরকে কাজ করার অনুমতি দেন। আপনাদের ছেলে-মেয়ে এবং আত্মীয়-স্বজন সবাইকে বলেন, দেশের জন্য কাজ করতে হবে, অন্যথায় সবকিছু ভেঙে যাবে।’
তিনি বলেন, ‘শিল্প খাতের সব স্টেকহোল্ডার এবং শ্রমিক নেতৃবৃন্দসহ সবার প্রতি আমার আহ্বান, আপনারা কোনও গুজবে কান দেবেন না। আপনারা নিজ কর্মস্থলের ক্ষতি করবেন না। ভাঙচুর করে প্রিয় কর্মস্থলের কোনও ক্ষতি হতে দেবেন না। আমরা দেখেছি, গুজব ছড়ানোর কারণে অনিয়মতান্ত্রিক ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম চালানো হয়। এখানে আমি সাংবাদিক বন্ধুদেরও সহযোগিতা কামনা করছি। এরকম গুজবের বিষয়গুলো আপনারা যেন সমাজের সামনে তুলে ধরেন, সেজন্য আপনাদের আহ্বান জানাই।
বাহারুল আলম বলেন, ‘ঈদের ছুটিতে ঢাকা থেকে লাখ লাখ মানুষ বাড়িতে যাবেন। তাদের এই আনন্দ যাত্রায় যেন বিঘ্ন না ঘটে তার জন্য শিল্প পুলিশ, ট্রাফিক পুলিশ, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি) ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। শ্রমিক ভাইবোনদের প্রতি আমার অনুরোধ, আপনারা দাবি আদায়ের জন্য রাস্তা আটকাবেন না। তাহলে লাখ লাখ মানুষের দুর্ভোগের কারণ তৈরি হবে। আপনারা তাদের বছরের একটি আনন্দ যাত্রায় বিঘ্ন হয়ে দাঁড়াবেন না। এ ধরনের কার্যকলাপ যেই করবেন আমি দৃঢ় কণ্ঠে বলছি, আমরা এ বিষয়ে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি পদক্ষেপ নেবো।’
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের এডিশনাল ইন্সপেক্টর জেনারেল সিবগাতুল্লাহ। উপস্থিত ছিলেন ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি এ কে এম আওলাদ হোসেন, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ড. মোহাম্মদ নাজমুল করিম খান, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের ডিআইজি ইসরাইল হাওলাদার, ডিআইজি আবু কালাম সিদ্দিক, গাজীপুর ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ সুপার এ কে এম জহিরুল ইসলাম, বিজিএমইএর এর প্রশাসক মো. আনোয়ার হোসেন প্রমুখ।
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।