উজানে পানি কমলেও ডুবছে ভাটি
শাকিল খান | প্রকাশিত: ১ জুন ২০২৪, ১৬:৪৩
সিলেটের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোয় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হচ্ছে। তবে সিলেট সদরসহ অন্যান্য এলাকায় পানি কিছুটা বেড়েছে। সিলেট নগরীর নিচু এলাকাগুলোয় প্রবেশ করছে সুরমা নদীর পানি। পানি উঠেছে সিলেট নগরীর প্রধান ফায়ার স্টেশন তালতলা স্টেশনেও। অন্যদিকে সুনামগঞ্জে নদ-নদীর পানি বাড়লেও গতকাল পর্যন্ত তা বিপৎসীমার নিচে ছিল।
নদনদীর পানি কিছুটা কমলেও সুরমা-কুশিয়ারার অন্তত ১৫টি স্থানে নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। যার কারণে নদী তীরবর্তী পরিবারগুলো এখনো আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরতে পারছে না।
সন্ধ্যায় সেটি বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। তিনি জানান- কানাইঘাট ও জৈন্তাপুরের বিভিন্ন এলাকার পানি নিচের দিকে যাচ্ছে। এ কারণে নগর এলাকায় পানি ঢুকেছে। যদি ভারতের মেঘালয়ে আর বৃষ্টিপাত না হয় তাহলে হয়তো নিম্নাঞ্চলের দিকে পানি চলে যাবে। গতকাল বিকালে সিলেট নগরের সুবহানীঘাট, উপশহর ই-ব্লক, তালতলা, মাছিমপুর, ছড়ারপাড়, মেন্দিবাগসহ কয়েকটি এলাকা পরিদর্শন করে দেখা গেছে; সুরমা নদী তীর উপচে পানি ঢুকছে সিলেট নগরে। নগরের মধ্যখান সুবহানীঘাট পর্যন্ত চলে এসেছে পানি। অর্ধশতাধিক পাড়ার সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে করে মানুষের দুর্ভোগ চরম আকার ধারধ করেছে।
সিলেট জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল বৃহস্পতিবার মধ্যরাত পর্যন্ত জেলার সাতটি উপজেলার ৪২টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। এতে বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে ৫ লাখ ৩৩ হাজার ২০২ জন। এ অবস্থায় জেলার ১৩টি উপজেলায় ৫৪৭টি আশ্রয় কেন্দ্র চালু হয়েছে। মোট ৪ হাজার ৮০২ জন বানভাসি আশ্রয় কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছে। তারা এখনো আশ্রয় কেন্দ্রেই আছে। বন্যা মোকাবেলায় সিলেট সিটি করপোরেশনের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসন জানায়, বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট ও জকিগঞ্জ। এ পাঁচ উপজেলায় অন্তত ৭০০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তৌহিদুল ইসলাম জানান, উপজেলার তিনটি নদীর পানি এখন বিপৎসীমার নিচে নেমে গেছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক ও কালভার্ট মেরামত করে চলাচলের উপযোগী করতে এলজিইডি কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে সালিক রুমাইয়া বলেন, ‘পানি একটু কমতে শুরু করেছে। বৃষ্টি না হওয়ায় পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। অব্যাহত রয়েছে ত্রাণ তৎপরতা।’
কানাইঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা নাসরীন বলেন, ‘উপজেলার নয়টি ইউনিয়নের আটটি প্লাবিত হয়েছে। সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও আগের চেয়ে কমেছে। উপজেলা সদর থেকেও পানি নামতে শুরু করেছে। ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করতে আরো দু-একদিন লাগতে পারে।’
জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফসানা তাসলিম জানান, উপজেলার নয়টি ইউনিয়নের মধ্যে চারটি প্লাবিত হয়েছে। কুশিয়ারার অমলসীদ পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মোহাম্মদ সজীব হোসাইন জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় চেরাপুঞ্জিতে ১৯৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে, যা অন্যদিনের তুলনায় কম। সিলেটে শুক্রবারও তেমন বৃষ্টি হয়নি। ফলে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হবে।
এদিকে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে ১৩১টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. মনিসর চৌধুরী।
সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান জানান, উজান থেকে ভাটির দিকে পানি নামতে শুরু করায় সিলেট সিটি করপোরেশন, সদর, গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। পানিবন্দি পরিবারগুলোকে আশ্রয়কেন্দ্রে স্থানান্তরের কার্যক্রম এখনও অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া বন্যার্তদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য ইউনিয়নভিত্তিক মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য মতে সিলেটে বৃষ্টি কমেছে। একই সঙ্গে সিলেটের উজানে ভারতের মেঘালয় ও আসামে বৃষ্টি কমে এসেছে। নতুন করে বৃষ্টি না হলে হয়তো আর ঢল নাও নামতে পারে।
বিষয়: ডুবছে ভাটি বন্যা
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।