পাকিস্তানকে ১১০ কোটি ডলার ঋণ সহায়তা দিল আইএমএফ
ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক | প্রকাশিত: ৩১ আগষ্ট ২০২২, ০৭:০০
বেইলআউট কর্মসূচির আওতায় পাকিস্তানকে ১১০ কোটি ডলার ঋণ দিয়েছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ঋণদাতা সংস্থা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। টানা সংকটের জেরে কোনো দেশের অর্থনীতি ভেঙে পড়ার অবস্থায় পৌঁছালে জরুরিভিত্তিতে যে ঋণ সহায়তা দেওয়া হয়, তাকে অর্থনীতির ভাষায় বলা হয় বেইলআউট কর্মসূচি।
এছাড়া আইএমএফের অপর কর্মসূচি এক্সটেন্ডেড ফান্ড ফ্যাসিলিটির (ইএফএফ) চলতি বছর আরও ৯৪ কোটি ডলার ঋণ সংস্থাটির কাছ থেকে পাবে পাকিস্তান। মঙ্গলবার রাজধানী ইসলামাবাদে এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানিয়েছেন দেশটির অর্থমন্ত্রী মিফতাহ ইসমাইল।
এ বিষয়ক এক বিবৃতিতে মঙ্গলবার আইএমএফের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক অ্যান্টোনেট্টি সায়েহ মঙ্গলবার এ বিষয়ক এক বিবৃতিতে বলেন, পাকিস্তানের বর্তমান টালমাটাল অর্থনীতির একটি বড় কারণ বহির্বিশ্বের চরম প্রতিকূল অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি।
‘ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে বিশ্ববাজারে জ্বালানি ও খাদ্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি, অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ, বহির্বিশ্বের সঙ্গে তাল রেখে মানানসই নীতি প্রণয়ন করতে না পারা, অসম ও ভারসাম্যহীন প্রবৃদ্ধি— ইত্যাদি আরও নানা কারণে পাকিস্তানের অর্থনীতি বর্তমান পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে।’
‘তবে অর্থনীতির ভারসাম্য রক্ষায় দেরিতে হলেও পাকিস্তান জ্বালানির দাম ও এই খাতে করের পরিমাণ বাড়িয়েছে। এটা একটা জরুরি ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ছিল।’
ইএফএফ কর্মসূচির আওতায় ২০১৯ সালে আইএমএফ বরাবর ৬০০ কোটি ডালার ঋণের জন্য আবেদন করেছিল পাকিস্তান। এই আবেদনের জেরে দেশটির সরকারের কাছে প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক সংস্কার বিষয়ক কিছু শর্ত দিয়েছিল আইএমএফ। তৎকালীণ সরকার এসব শর্ত পূরণে সম্মত হওয়ার পর ঋণের আবেদন মঞ্জুর করে কয়েকটি কিস্তিতে এই অর্থ প্রদানের প্রস্তাব দেয় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল। পাক সরকারও তাতেও সম্মত হয়।
কিন্তু ঋণের কয়েকটি কিস্তি দেওয়ার পর ‘পাকিস্তান সরকার ঋণের শর্ত পূরণ করছে না’ অভিযোগ তুলে ২০২১ সাল থেকে ঋণের অর্থ প্রদান স্থগিত করে আইএমফ।
ওই সময় অবশ্য পাকিস্তানের রাজনৈতিক অঙ্গণে ব্যাপক অস্থিরতা চলছিল। দেশটির তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে একাট্টা হওয়া শুরু করেছিলেন বিরোধীরা। ইমরানও নিজের গদি রক্ষায় সমানে রাজনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছিলেন।
২০২২ সালের এপ্রিলে পাকিস্তানের পার্লামেন্টে বিরোধীদের অনাস্থা ভোটে ক্ষমতাচ্যুত হন ইমরান খান। নতুন প্রধানমন্ত্রী হন পার্লামেন্টের সাবেক প্রধান বিরোধী নেতা শেহবাজ শরীফ। পাকিস্তানের রাজনৈতিক অস্থিরতাও কমে আসে।
কিন্তু আইএমএফের ঋণসহায়তা বন্ধ থাকায় দিন দিন দেশটির বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ কমতে থাকে, সেই সঙ্গে তীব্র হতে থাকে অর্থনৈতিক সংকট। যে কোনো দেশের অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষায় দেশটির সরকারের কাছে অন্তত ৩ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো ডলার মজুত থাকতে হয়। বর্তমানে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে যে পরিমাণ ডলারের রিজার্ভ রয়েছে, তা দিয়ে বড়জোর দেড় মাসের আমাদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।
এর মধ্যেই দেশটিতে গত সপ্তাহের শেষ থেকে শুরু হয়েছে নজিরবিহীন বন্যা। সরকারি তথ্য অনুযায়ী ভয়াবহ এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে এখন পর্যন্ত পাকিস্তানে নিহত হয়েছেন ১ হাজারেরও বেশি মানুষ এবং আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ১ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে।
সূত্র : রয়টার্স
এনএফ৭১/আরআর/২০২২
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।