বোমা বন্ধ না হলে কোনো আলোচনা হবে না

রাজিউর রাহমান | প্রকাশিত: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০১:৫৯

আরএসএফ জেনারেল মোহাম্মদ হামদান হেমেডটি

গেলো প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে সুদানের সামরিক বাহিনী ও আধাসামরিক বাহিনী র‌্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) মধ্যে সংঘাত চলছে, তা থামাতে বিবাদমান দু’পক্ষকে বার বার যুদ্ধ বিরতির ঘোষণা দিয়ে শান্তি সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়ে আসছে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়।

কিন্তু সেসব আহ্বানে তেমন কাজ হচ্ছে না; বরং দেখা গেছে— দুই পক্ষ যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পরও দেশের বিভিন্ন জায়গায় সংঘাত অব্যাহত আছে। এই সংঘাতে কয়েক শ মানুষ নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন কয়েক হাজার। প্রাণ বাঁচাতে সুদান ছাড়ছেন বিদেশি নাগরিকরা।

এরআগে বৃহস্পতিবার প্রতিবেশী দেশগুলোর পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জাতিসংঘের কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছিল।

আরএসএফ জেনারেল মোহাম্মদ হামদান হেমেডটি বলেন, তিনি আলোচনায় রাজি। কিন্তু শর্ত হলো যুদ্ধবিরতি মানতে হবে। শত্রুতা বন্ধ করুন। এরপরেই আমরা আলোচনায় বসতে পারি।

তিনি বলেন, জেনারেল বুরহানের সাথে তার কোনো ব্যক্তিগত সমস্যা নেই। তবে তিনি দেশটির ক্ষমতাচ্যুত শাসক ওমর আল বশিরের অনুগতদের সরকারের নিয়ে আসার অভিযোগ করে জেনারেল বুরহানকে বিশ্বাসঘাতক হিসেবে উল্লেখ করেন।

হেমেডটি বলেন, আমি আজকেই বেসামরিক সরকার পেতে চাই, আগামীকাল নয়। একটি পূর্ণ বেসামরিক সরকার। এটাই আমার নীতি।

তিনি আরও বলেন, আরএসএফ যোদ্ধারা সেনাবাহিনীর সৈন্যদের শত্রু নয়। তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, তারা গত ত্রিশ বছরের সরকারের ধ্বংসাবশেষ থেকে সুদানকে রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছিলেন। আমরা আপনাদের বিরুদ্ধে লড়বো না। দয়া করে আর্মি ডিভিশনসে ফেরত যান এবং আমরা আপনাদের বিরুদ্ধে লড়বো না।

প্রায় তিন দশক ক্ষমতায় থাকার পর ২০১৯ সালে প্রবল গণআন্দোলনের জের ধরে সেনাবাহিনী ও আরএসএফ যৌথভাবেই ওমর আল বশিরকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করেছিল। বশিরের তিন দশকের শাসনকাল ইসলামপন্থি আদর্শ ও শরিয়া আইন কার্যকরের জন্য পরিচিত।

হেমেডটি বলেন, দুঃখজনকভাবে জেনারেল বুরহান পরিচালিত হচ্ছেন উগ্রবাদী নেতাদের মাধ্যমে।

২০২১ সালে তিনি ও জেনারেল বুরহান ক্ষমতা ভাগাভাগির একটি চুক্তি বাতিল করে দিয়েছিলেন। দেশটিতে বেসামরিক শাসন ফিরিয়ে আনা, বিশেষ করে আরএসএফের এক লাখ সদস্যকে সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করার সময়সীমা নিয়ে তাদের মধ্যে সমঝোতা ভেঙে পড়ে।

আরএসএফ প্রধানের গণতন্ত্রের প্রতি এমন অঙ্গীকার নতুন কিছু নয়। যদিও বিশ্লেষকরা অতীতে গণআন্দোলন দমাতে এই বাহিনীকে নিষ্ঠুরভাবে ব্যবহারের কথাও উল্লেখ করে থাকেন।

হেমেডটি যখন এসব কথা বলছেন, ঠিক তখন লড়াইয়ের কারণে লাখ লাখ মানুষ রাজধানী খার্তুমে আটকা পড়ে রয়েছে। সেখানে খাদ্য, পানি ও জ্বালানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।

জাতিসংঘ বলছে, আরএসএফ যোদ্ধারা লোকজনকে বাড়িঘর থেকে বের করে লুটপাট ও চাঁদাবাজি করছে। তবে হেমেডটির দাবি, তাদের প্রতিদ্বন্দ্বীরা আরএসএফের ইউনিফর্ম করে এগুলো করছে তার যোদ্ধাদের দুর্নাম রটানোর জন্য।

লুটপাটের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে তিনি বলেন, ১৪ দিন আগে শুরু হওয়া সংঘাত থেকে মুক্ত রাখতে তার যোদ্ধারা শহরবাসীকে সহায়তার চেষ্টা করছে।

সুনাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, দু’পক্ষে লড়াইয়ে এ পর্যন্ত অন্তত ৫১২ জন প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন ৪ হাজার ১৯৩ জন। তবে হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি বলে মনে করা হচ্ছে।

খার্তুমের পাশাপাশি সুদানের পশ্চিমাঞ্চলীয় দারফুর আল জেনেইনা শহরে সহিংসতা খুবই খারাপ রূপ নিয়েছে। সেখানে আরএসএফ ও মিলিশিয়াদের গ্রুপগুলো লুটপাট এবং বাজার, ব্যাংক ও এইড ওয়্যারহাউজগুলোতে আগুন দিচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

 




পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top