অবশেষে উত্তর গাজায় ফিরতে শুরু করেছে ফিলিস্তিনিরা
রাজীব রায়হান | প্রকাশিত: ২৮ জানুয়ারী ২০২৫, ১৩:১৯
অবশেষে নিজ বাসভূমিতে ফিরতে শুরু করেছে ফিলিস্তিনিরা। ইসরাইলি ছয় জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করার পর উত্তর গাজায় ফিরে যাচ্ছে তারা। এ সময় মিশ্র অনুভূতি দেখা গিয়েছে বাড়ি ফেরা গাজাবাসীর মধ্যে। একদিকে মুক্তির আনন্দ, অন্যদিকে প্রিয়জন ও সহায়-সম্বল হারানোর বেদনা।
কর্তৃপক্ষের তথ্যানুযায়ী, সোমবার প্রথম ২ ঘণ্টায় উত্তর গাজায় প্রবেশ করেছে ২ লাখ ফিলিস্তিনি। সোমবার সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
গত শনিবার হামাস তাদের হাতে জিম্মি চার ইসরাইলি নারী সেনাকে মুক্তি দেয়। এর বিনিময়ে ২০০ ফিলিস্তিনি কারাবন্দিকে মুক্তি দেয় ইসরাইল। তবে এরপর ইসরাইল ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠনটির বিরুদ্ধে চুক্তির শর্ত লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলে।
গাজা যুদ্ধে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উত্তর গাজা। যুদ্ধবিরতি চুক্তির অংশ হিসাবে ওই এলাকার অধিবাসীরা তাদের আবাসস্থলে ফেরার সুযোগ পেয়েছিল। কিন্তু হামাস ওই নারী জিম্মিকে মুক্তি না দেওয়ায় তাদের ঘরে ফেরা আটকে যায়।
ইসরাইল বলছে, হামাসের হাতে জিম্মি বেসামরিক ইসরাইলি আরবেল ইয়াহুদের মুক্তির যে পরিকল্পনা, সেটি কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত গাজার বাসিন্দাদের উত্তর দিকে যেতে দেওয়া হবে না।
পরে রোববার আরও ছয় ইসরাইলি জিম্মিকে মুক্তির নিশ্চয়তা দিয়েছে। এরপরই ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় জানিয়েছে, সোমবার থেকে ফিলিস্তিনিরা গাজার উত্তরাঞ্চলে ফেরা শুরু করতে পারবেন।
যুদ্ধবিরতির পরই গাজার উত্তরাঞ্চল থেকে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা নিজ নিজ বাড়িঘরে ফিরতে চাইছেন। এ জন্য তাদের নেৎজারিম করিডর পার হয়ে আসতে হবে। কিন্তু ইসরাইল সেখানে উপকূলীয় একটি মহাসড়ক অবরোধ করে রেখেছিল। তারা উত্তর গাজায় ফিরতে চাওয়া ফিলিস্তিনিদের মহাসড়ক পার হতে দিচ্ছিল না।
তবে সোমবার ইসরাইলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, স্থানীয় সময় সকাল ৭টা থেকে ফিলিস্তিনিদের পায়ে হেঁটে আল-রশিদ এবং সকাল ৯টা থেকে যানবাহনে সালাহ আল-দিনের করিডর অতিক্রম করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এরইমধ্যে অনেকে এসব করিডর অতিক্রম করেছে।
আল জাজিরার সংবাদদাতা জানিয়েছেন, উত্তর গাজায় ফিরতে বাধা দেওয়া হবে না ইসরাইলের এমন ঘোষণার পর নেৎজারিম করিডরের কাছে অপেক্ষারত হাজারো ফিলিস্তিনিরা আনন্দে ফেটে পড়েন। বাস্তুচ্যুত বাসিন্দারা এই মুহূর্তটিকে ঐতিহাসিক বলে উল্লেখ করেন।
তাদের মতে, যুদ্ধবিরতি ঘোষণার মতোই আজকের দিনটি গুরুত্বপূর্ণ। দিনটিকে ‘বিজয়ের দিন’ উল্লেখ করে উত্তর গাজায় ফিরে আসা বাস্তুচ্যুত এক ফিলিস্তিনি বলেন, ‘আমি আমার ঘর পুনর্র্নিমাণ শুরু করব। আমরা ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে আবার নতুন করে তৈরি করব।’
আরও এক ফিলিস্তিনি নারী বলেন, তার মনে হচ্ছে যে, তিনি এক নতুন জীবন পেয়েছেন। তিনি উত্তর গাজায় নিজের বাড়িতে ফিরে যাচ্ছেন। ওই নারী বলেন, আমরা খুবই আনন্দিত যে আমরা নিজেদের ভূমি, আমাদের মাতৃভূমি গাজায় ফিরে যেতে পারছি।
উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে এই নারী বলেন, সব প্রশংসা আল্লাহর, এটা সত্যি যে আমরা ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম, কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমরা বিজয়ী হয়েছি। যোদ্ধাদের ধন্যবাদ... আল্লাহকে ধন্যবাদ। মনে হচ্ছে আমি যেন আবার জন্মগ্রহণ করেছি এবং আমরা আবার বিজয়ী হয়েছি।’
যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী, প্রথম ছয় সপ্তাহের ধাপে হামাস ৩৩ জন নারী, শিশু, বৃদ্ধ, অসুস্থ ও আহত বন্দিকে মুক্তি দেবে, যেখানে প্রতি বেসামরিক জিম্মির জন্য ইসরাইল ৩০ জন বন্দি এবং প্রতি সেনার জন্য ৫০ জন বন্দি মুক্তি দেবে।
বিষয়: উত্তর গাজা ফিলিস্তিনি
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।